পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব ‘পার্চিং’ পদ্ধতি

পটুয়াখালী পার্চিং পদ্ধতি
পটুয়াখালীতে শস্য খেতে পরিবেশবান্ধব ‘পার্চিং’ পদ্ধতি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীতে পরিবেশবান্ধব 'পার্চিং' পদ্ধতি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করেন কৃষক। এতে ফসল উৎপাদনে খরচ বাড়ার পাশাপাশি ঝুঁকিতে পরিবেশ।

এমন পরিস্থিতিতে 'পার্চিং' পদ্ধতি মেনে চলতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। পরিবেশবান্ধব ও নামমাত্র খরচের এ পোকা দমন পদ্ধতিতে উৎসাহিত হচ্ছেন কৃষকরা। কীটনাশক ব্যবহারের চেয়ে এর খরচ কম। ফসলও রক্ষা পায় পোকা থেকে।

ইংরেজি 'পার্চিং' শব্দের অর্থ ফসলের খেতে বা মাঠে ডাল বা কঞ্চি পুঁতে দেওয়া। এসব ডাল-কঞ্চিতে পাখি বসে। এগুলো একদিকে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে, অন্যদিকে কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে বাঁচায় অর্থ ও রক্ষা করে পরিবেশ।

এ পদ্ধতির আরেক সুবিধা হলো পাখির বিষ্ঠা জমিতে পড়ায় উর্বরতা বৃদ্ধি পায়, যা ফলন বাড়াতে সাহায্য করে।

এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ছাড়া কম খরচে পোকা দমনের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনও বাড়ানো যাচ্ছে, যা দিন দিন জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, ফসল রোপণের পরপরই 'পার্চিং' করতে হয়। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট ওপরে 'পার্চিং' করা উচিত।

চলতি মৌসুমে পটুয়াখালী জেলার ৮ উপজেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮৫২ মেট্রিক টন।

জেলায় ফসলের শতভাগ খেতগুলো 'পার্চিং'য়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে 'পার্চিং' হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পটুয়াখালী পার্চিং পদ্ধতি
ফসলের খেতে পরিবেশবান্ধব ‘পার্চিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন পটুয়াখালীর কৃষক। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর, লাউকাঠী, লেবুখালী, মৌকরণ, আউলিয়পুর, মরিচবুনিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, আমন খেতে কৃষকরা বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল পুঁতে রেখেছেন। অনেক জমির আইলের পাশে ও জমির মাঝখানে সারিবদ্ধভাবে এসব লাগানো হয়েছে। এসব ডালপালায় ফিঙে ও শালিক বসে থাকতে দেখা গেছে।

বদরপুর এলাকার কৃষক আব্দুল বারেক হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি মৌসুমে ৪ একর জমিতে আমন চাষ করেছি। আবাদকৃত জমিতে বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে রেখেছি। সেখানে পাখি বসছে, জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় খাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করছি। কীটনাশকের খরচ কমেছে।'

লাউকাঠী এলাকার কৃষক আবদুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমিতে ধান আবাদ করে প্রতি বছরই লোকসান গুণতে হয়েছে। পোকামাকড়সহ নানান কারণে ফলন ভালো কম হতো। এ অবস্থায় ধান চাষ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে কৃষি অফিসের পরামর্শে "পার্চিং" পদ্ধতি মেনে সুফল পাচ্ছি।'

মৌকরণ এলাকার কৃষক জাকির খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পোকামাকড়ের হাত থেকে ধান রক্ষায় চারা লাগানোর পর থেকেই তিনি গাছের ডাল ও কঞ্চি পুঁতে রাখেন। পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে।

গত ২ বছর ধরে 'পার্চিং' পদ্ধতিতে ধান আবাদ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি ফলনও ভালো হচ্ছে। অন্য বছর যেখানে ৩-৪ দফা কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এ বছর একবার কীটনাশক ব্যবহার করেছি।'

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-সহকারী (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কর্মকর্তা আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাজরা পোকা ধানের জন্য খুবই ক্ষতিকর। একটি মাজরা পোকা কমপক্ষে ২৫০ ডিম দিতে পারে। প্রায় প্রতিটি ডিম থেকেই পোকা বের হয়। খেতে পুতে রাখা ডালপালায় বসে একটি পাখি প্রতিদিন কমপেক্ষ ২০০ মাজরা পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে থাকে।'

প্রতি শতাংশ জমিতে ২-৩টি ডাল, বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক খায়রুল ইসলাম মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধান খেতে উপকারী ও অপকারী ২ ধরনের পোকা থাকে। অপকারী পোকা সাধারণত একগাছ থেকে অন্যগাছে উড়ে যাওবার সময় খেতে পুঁতে রাখা গাছের ডালে বসা থাকা পাখি তা খেয়ে থাকে।'

'প্রতি বছরই পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যে এ পদ্ধতিতে চাষ শতভাগ হয়ে যাবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
NBR speeds up auction process of abandoned goods

NBR moves to speed up auction of abandoned goods

About 2 lakh tonnes of imported goods left abandoned at Chattogram port alone for years

1h ago