ফুটপাতের জীবন: ৪০ টাকা ভাড়ায় কাঁথা-বালিশ

ফুটপাতে রাত
ফুটপাতে কাঁথা, বালিশ ও পাটি ভাড়া নিয়ে ঘুমাচ্ছেন মানুষ। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ফুটপাতে রাতে শোবার জন্য ৪০ টাকায় পাটি, কাঁথা, কম্বল, বালিশ ভাড়া দেন তিনি। নানান জায়গা থেকে মাজারে আসা ভক্ত ও ভাসমান লোকজনই মূলত তার গ্রাহক। গত ৫০ বছর ধরে মিরপুর মাজারের মার্কেটের বারান্দাকে কেন্দ্র করে অভিনব এই ব্যবসা চালাচ্ছেন বাবুল হাওলাদার (৫৯)।

প্রতি রাতে এখানে কাঁথা, বালিশ, পাটি নিয়ে এসে সেগুলো ভাড়া দেন। সকালে আবার সেগুলো বাসায় নিয়ে রেখে আসেন তিনি।

বাবুলের মতো আরও ৪ নারী ফুটপাতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে আয় করছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে ওই ফুটপাতে গিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. রাকিবের (১৯) সঙ্গে কথা হয়। শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় ভিক্ষা করতে এসেছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি মাসেই ঢাকায় আসি। কয়েকদিন থেকে চলে যাই। সারাদিন ভিক্ষা শেষে রাত ১০টার পর মাজারের সামনে এই ফুটপাতেই ঘুমাই। এখানে প্রতি রাতে ৪০ টাকা দিলে কাঁথা, বালিশ ও পাটি ভাড়া পাওয়া যায়।'

তবে ৬ মাস আগেও ফুটপাতে থাকার ভাড়া ৩০ টাকা ছিল বলে জানান তিনি।

রাকিবের পাশেই ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী আব্দুল মান্নান (৫০)।

তিনি বলেন, 'প্রতি বৃহস্পতিবার মিরপুর মাজারে আসি। ছেলে-মেয়েদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় দোয়া করি। সেদিন রাতে এখানেই ঘুমাই।'

'১০ বছর আগেও এখানে ঘুমাতে ১০ টাকা দিতে হতো। গত ২ বছরের মধ্যে ভাড়া ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়ে গেছে। মাজার এলাকায় বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। সেখানে থাকতে হলে কমপক্ষে ৩০০ টাকা গুণতে হয়। সেখানে যাওয়ার সাহস হয় না,' যোগ করে তিনি।

ফুটপাতে থাকার বিষয়ে বাবুল হাওলাদার (৫৯) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন ভাসমান পুরুষ-নারী ঘুমান। তাদের অনেকে মাজার জিয়ারত করতে আসেন। অনেকে দিনমজুর। মাঝেমধ্যে ভাসমান যৌনকর্মীরাও আসেন।'

১৯৭২ সালে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিয়ে এই মাজারে এসেছিলেন বাবুল। তিনি আরও বলেন, 'মাজারে থেকে, মাজারের সিন্নি খেয়ে জীবন কাটিয়েছি। শীতের দিনে মাজারের ভেতরের খালি জায়গায় কাঁথা-বালিশ ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হতো। তাই মার্কেটের বারান্দায় আমরা ২ ভাই ঘুমাতাম। তখন এখানে থাকার জন্য জনপ্রতি ২৫ পয়সা লাগতো।'

'পরে আমি ফুটপাতে কাঁথা, বালিশ ভাড়া দেওয়া শুরু করি। ১৯৭২ সালের ২৫ পয়সা ভাড়া থেকে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ভাড়া ৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।'

গত ১০ বছরের মধ্যেই ভাড়া সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে তিনি জানান।

'জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। সংসার চালানো কঠিন। খরচ বিবেচনায় ৪০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

তবে ফুটপাতে কাঁথা, বালিশ ও পাটি ভাড়া দেওয়ার কিছু অসুবিধাও আছে। বাবুল বলেন, 'কয়েকদিন পরপরই দেখা যায় কাঁথা-বালিশ চুরি হয়ে গেছে। কাস্টমারদের মালপত্র চুরি হয়ে গেছে। তাই রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। কাস্টমারদের জিনিসপত্রও দেখে রাখতে হয়। দিনে তো আর এসব জিনিসপত্র ফুটপাতে রাখা যায় না। সকাল হলেই গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতে হয়। রাতে আবার নিয়ে আসি।'

'আমার এখানে ১৫ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ৮ থেকে ১০ জনের বেশি গ্রাহক হয় না। সব খরচ শেষে প্রতিদিন ২০০ টাকার মতো আয় হয়,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
yunus to meet tarique rahman in london

Yunus-Tarique meeting in London on June 13: Fakhrul

The BNP secretary general expresses hope that the meeting could have significant implications for the country's political landscape

2h ago