হতাশার হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশের, সেমিতে পাকিস্তান

সাদামাটা সংগ্রহ নিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পেতে হলে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দেখাতে হতো দারুণ কিছু। সেই প্রত্যাশা পূরণ হলো না।
ছবি: এএফপি

সাদামাটা সংগ্রহ নিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পেতে হলে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দেখাতে হতো দারুণ কিছু। সেই প্রত্যাশা পূরণ হলো না। অধিনায়ক বাবর আজম ও শুরুতেই বেঁচে যাওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান ভালো শুরু আনলেন। ওই ভিতে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ হারিস ও শান মাসুদ করলেন আগ্রাসী ব্যাটিং। তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারের টিকিট পেল পাকিস্তান। আর হতাশাজনক পারফরম্যান্সে আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের।

রোববার অ্যাডিলেডে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ১১ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বাবরের দল।

এই হারে দুই নম্বর গ্রুপের পঞ্চম স্থানে থাকল সাকিব আল হাসানের দল। পাঁচ ম্যাচের দুটিতে জেতায় তাদের পয়েন্ট ৪। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট পেলেও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় নেদারল্যান্ডস রয়েছে চারে। দিনের পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ভারতকে হারিয়ে দিলে বাংলাদেশ নেমে যাবে ছয় দলের পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। কারণ, তাদের পয়েন্ট বেড়ে হবে ৫।

জয় দিয়ে গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে পাকিস্তান। পাঁচ ম্যাচে তিন জয়ে তাদের পয়েন্ট ৬। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় সমান পয়েন্ট নিয়েও দুইয়ে আছে ভারত। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতলে তারা দখল করবে এক নম্বর স্থান। ইতোমধ্যে রোহিত শর্মার দল নিশ্চিত করে ফেলেছে সেমিফাইনাল।

বাংলাদেশের বোলারদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু অতিরিক্ত রান দিয়ে ফেলে তারা। তাছাড়া, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংও ছিল হতাশাজনক। ক্যাচের সঙ্গে রানআউটের সুযোগও হাতছাড়া করে তারা। আরও ছিল বেশ কয়েকটি মিস ফিল্ডিং। 

ইনিংসের তৃতীয় বলেই পাকিস্তানের উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপজুড়ে আলো ছড়ানো পেসার তাসকিন আহমেদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচড হয়ে বেরিয়ে যাওয়া বল লেগেছিল রিজওয়ানের ব্যাটে। সুবিধাজনক উচ্চতায় থাকলেও তা গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান।

পরের বলেই সোহানের ভুলের ক্ষতকে গভীর করে আক্ষেপ বাড়ান রিজওয়ান। টপ এজে তিনি ছক্কা পেয়ে যান ফাইন লেগ দিয়ে। তাসকিনের পরের ওভারে ফ্লিক করে চার মারেন বাবর। সাকিব আক্রমণে এসে খরুচে বল করেন। পরপর দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করেন রিজওয়ান।

পাওয়ার প্লে শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৩৫ রান। রান রেট ছয়ের নিচে থাকলেও দুই ওপেনারের ওপর চাপ জেঁকে বসেনি। কারণ, সামনে থাকা বল ও রানের সমীকরণে ছিল না বেশি ব্যবধান।

বাউন্ডারির চাহিদা না থাকায় হাত খোলার তাড়া দেখা যায়নি বাবর ও রিজওয়ানের মধ্যে। তারা সিঙ্গেল-ডাবল নিয়ে এগোতে থাকেন। একাদশ ওভারে ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। প্রথমবারের মতো এবারের আসরে খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার বিদায় করেন বাবরকে। টপ এজ হয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের তালুবন্দি হন বাবর। ৩৩ বলে ২ চারে তার রান ২৫।

পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে উইকেট তুলে নেন পেসার ইবাদত হোসেন। তিনিও এই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে নেমেছিলেন। পয়েন্টে রিজওয়ানের ক্যাচ লুফে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রিজওয়ান ২ চার ও ১ ছয়ে ৩২ বলে ৩২ রান করেন।

এক বলের ব্যবধানে ফের উল্লাসে মাততে পারত বাংলাদেশ। মাত্রই নামা মোহাম্মদ নওয়াজ ভুল বোঝাবুঝিতে হতে পারতেন রানআউট। কিন্তু শান্তর থ্রো স্টাম্প খুঁজে পায়নি। বরং ওভারথ্রোতে বাউন্ডারি পেয়ে যায় পাকিস্তান।

বাংলাদেশের জেগে ওঠা ক্ষীণ আশা টেকেনি বেশিক্ষণ। চতুর্দশ ওভারে ইবাদতের ওপর চড়াও হন হারিস। কাভার ড্রাইভে চার মারার পর পুল করে পেয়ে যান ছক্কা। কমে আসে প্রয়োজনীয় রান ও বলের মধ্যকার ব্যবধান।

লিটন দাসের সরাসরি থ্রোতে থামে নওয়াজের ইনিংস। ধুঁকতে থাকা বাঁহাতি ব্যাটার ৪ রান করেন ১১ বল খেলে। তবে জমে যায় হারিস ও শানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে ১৪ বলে ২৯ রান যোগ করেন তারা।

তাসকিনের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারে ১৬ রান তুলে ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে নেয় পাকিস্তান। ওই ওভারে ফ্রি-হিটে ছক্কা মারেন হারিস। পরের ওভারে সাকিবকে দুবার সীমানাছাড়া করেন শান।

১৮ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে ৩১ রান করা হারিস সাকিবের শিকার হন। পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন নাসুম। এরপর ইফতিখারকে দ্রুত বিদায় করেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচের ফল প্রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।

ইবাদতের লো ফুল টস ডিপ স্কয়ার লেগে ঠেলে ডাবল নিয়ে পাকিস্তানের জয়ের লক্ষ্য মিলিয়ে ফেলেন শান। তিনি ১৪ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। অন্যপ্রান্তে থাকা শাদাব খানকে কোনো বল মোকাবিলা করতে হয়নি।

তাসকিনের সঙ্গে বোলিংয়ের উদ্বোধন করা নাসুম ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় পান ১ উইকেট। একই স্বাদ নিতে সাকিব, মোস্তাফিজ ও ইবাদত দেন যথাক্রমে ৩৫, ২১ ও ২৫ রান।

এর আগে ইনিংসের মাঝপথে ভালো সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একাদশ ওভারে সৌম্য সরকার ও আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাকিবের বিদায়ে খেই হারায় তারা। অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার ভিড়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকে ওপেনার শান্তর ফিফটি।

শান্ত বলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন। ৪৮ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৭ চার। তার বাইরে দুই অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেন কেবল তিন ব্যাটার। পাকিস্তানের জার্সিতে দারুণ বোলিংয়ে আলো কাড়েন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। ২২ রান খরচায় তিনি পান ৪ উইকেট। ২ উইকেট নিতে লেগ স্পিনার শাদাব দেন ৩০ রান।

১০.৩ ওভারে টাইগারদের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৩। পরের ৫৭ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে কেবল ৫৪ রান আনতে পারে তারা। মোসাদ্দেক হোসেন ও সোহানের ব্যাটিং জাগায় তীব্র হতাশা। আফিফ ২০ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকলেও চ্যালেঞ্জিং পুঁজি আর পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago