ফারদিনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ফারদিনের জানাজা শেষে বুয়েট শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ফারদিনের মরদেহ বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে নেওয়া হয়। সেসময় বুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সহপাঠীরা জানান, গত শনিবার ক্যাম্পাসে ফিরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ফারদিনের। তা আর হলো না। শেষবারের মতো চিরচেনা ক্যাম্পাসে এলো তার মরদেহ।

সেসময় ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানাও বুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। ফারদিনের সহপাঠীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্নায় ফারদিনের সহপাঠীরাও অশ্রুসিক্ত হন। পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে যায় বিষাদে।

কেন্দ্রীয় মসজিদে ফারদিনের জানাজা শেষে বুয়েট শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

সেসময় তারা বলেন, ফারদিন পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় আমরা তার পরিবারকে অবহিত করি। এরপর বুয়েট প্রশাসন এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন গত শনিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

জানাজা শেষে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা গণমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অশ্রুভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, 'গত শুক্রবার দুপুরে সে বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া করে বের হয়েছে। সে তার মাকে বলেছে, কাল পরীক্ষা আছে, আমি আজ গ্রুপ স্টাডি করব। আজ বাসায় আসব না। কাল শনিবার দুপুরে পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে ভাত খাব।'

'ওর মা জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল, আমার ছেলে যায়। কিন্তু সে ছেলে আর আসলো না। আমি সবার দোয়া চাই এবং আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমি চাই আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়', বলেন তিনি।

ফারদিনের বাবা বলেন, 'আমার ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণা, সোশ্যাল ওয়ার্ক এবং ডিবেটিং করতো। ডিসেম্বরে স্পেনের মাদ্রিদে আয়োজিত একটি ডিবেটিং অনুষ্ঠানে বুয়েটের প্রতিনিধি হয়ে তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল।'

'সেখানে যাবে বলে সে পাসপোর্টও রেডি করে ফেলেছে। কিন্তু এর আগেই দুর্বৃত্তরা আমার সন্তানকে পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছে', এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নূরউদ্দিন।

ফারদিনের বাবা বলেন, 'আমি জানি, সন্তানকে ফিরে পাব না। কিন্তু আমি এই ঘটনার বিচার চাই।'

তিনি বলেন, 'এটি কারা করেছে সেটি আমরা ধারণা করতে পারছি না। আমার কোনো শত্রু আছে বলে মনে করি না। আমি কারও কোনো ক্ষতি করিনি। আমি সাংবাদিকতা করেছি কিন্তু এমন কোনো রিপোর্ট করিনি যার কারণে কেউ আহত হতে পারে।'

শোকাহত এই পিতা বলেন, 'দেশ অনেক ডিজিটাল হয়েছে। কী রকম ডিজিটাল হয়েছে আমি সেটা দেখতে চাই। ট্রাকিং সিস্টেমটা ডেভেলপ করতে হবে। সেটা করতে পারলে তার সঙ্গে কার কমিউনিকেশন ছিল বিস্তারিত সব বের হয়ে আসবে। আমি কারও দিকে ইঙ্গিত করতে চাচ্ছি না।'

এদিকে, ফারদিন হত্যার বিচার দাবি করেছে জাসদ ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, নিখোঁজের ২ দিন পর বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ফারদিন একাধারে মেধাবী শিক্ষার্থী, বিতার্কিক ও খেলোয়াড় হিসেবে বন্ধুমহলে বিশেষভাবে পরিচিত বলে আমরা জানতে পেরেছি। দেশের প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত শিক্ষার্থী নিগ্রহ ও হত্যার বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি দাবি করছি। 

Comments

The Daily Star  | English

Housing, food may top the manifestos

Panels contesting Ducsu election are signalling key reform priorities in their upcoming manifestos

11h ago