‘দুর্নীতিবাজরা শক্তিশালী, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করি তারা বিচ্ছিন্ন-শক্তিহীন’

দুদকের আলোচিত সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি দীর্ঘ সময় কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামে। কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা দায়ের করেন এই সাবেক দুদক কর্মকর্তা।
ভাইয়ের দোকানে কাজে ব্যস্ত মো. শরীফ উদ্দিন। ছবি: স্টার

দুদকের আলোচিত সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি দীর্ঘ সময় কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামে। কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা দায়ের করেন এই সাবেক দুদক কর্মকর্তা।

মামলা করার পর হঠাৎ ২০২১ সালের ১৬ জুন শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এরপর তাকে চলতি বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ। চাকরি হারিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শরীফ উদ্দিন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে তার ভাইয়ের দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।

দুদক কর্মকর্তা থেকে দোকানে চাকরি, পরিবার ও পুরোনো মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে মো. শরীফ উদ্দিনের সঙ্গে।

চাকরি চলে যাওয়ার পর ঘর-সংসার কীভাবে সামলাচ্ছেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারণেই অসাংবিধানিক ও অমানবিকভাবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন দুদক (কর্মচারী) বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৫৪ (২) ব্যবহার করে আমাকে বে-আইনিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি নেই আজ প্রায় ১০ মাস। আমার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ২ শিশু সন্তান নিয়ে ৫ জনের পরিবার। আমার বাবা করোনায় মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বাবা আমার মা ও পরিবারের সবাইকে আমার জিম্মায় দিয়ে যান। আমার মা বাইপাস সার্জারির রোগী। আমাকে চাকরিচ্যুত করার পর মা ও স্ত্রী দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমার শাশুড়িকেও এই কারণে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। অভাব-অনটনের কারণে তাদের সু-চিকিৎসা করাতে পারছি না।

এই বাজার দরে প্রাত্যহিক ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। নিকট আত্মীয়দের সহযোগিতা, বাবার পেনশনের টাকা, গ্রাম থেকে পাওয়া ফসল বিক্রি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছি। আমি নিজেও সবকিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে আছি। ডাক্তারদের পরামর্শে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই বড় ভাইয়ের দোকানে চাকরি নিয়েছি।

আপনার চাকরি না থাকার বিষয়টি সন্তানরা কীভাবে দেখে?

সন্তানরা তো নানা আবদার করেই। কিন্তু, তা মেটাতে পারি না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই অবুঝ ২ শিশুর কথা শুনে। সারাদিন যখন বাসায় বসে থাকি, তখন তাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি না। তাদের প্রশ্ন শুনলেই চোখের কোণে অজান্তেই জল নেমে আসে।

আমি কেন কক্সবাজার যাই না? কেন অফিসে যাচ্ছি না? জানতে চায় তারা, কিন্তু উত্তর আমার কাছে নেই। তবে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর জীবনের একটি চরম সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছি। তা হলো, অসময়ে মানুষকে সঠিকভাবে চিনতে পারা। আর সেই মানুষজনের প্রথম কাতারে আছে গণমাধ্যমকর্মী। যাদের প্রতিবেদনের কারণে গণমানুষের কাছ থেকে মজলুম শরীফের জন্য অনর্গল সহানুভূতি ও ভালোবাসা পাচ্ছি। অনেকে মনে করছে, আমি অনৈতিক সুবিধা দিয়ে এগুলো করাচ্ছি। এটার জন্যও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারি কয়েকটি সংস্থা থেকে গোপন তদন্ত হয়েছে। এটা শোনার পর আমি নিজেই অনেক বেশি অবাক হয়েছি।

আপনাকে চাকরিতে পুনর্বহালের কোনো আপডেট আছে কি?

কতিপয় দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার ও কমিশনে কতিপয় দুর্নীতিবাজের মামলার সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করে কী এমন অন্যায় করেছি যে আমাকে এভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে? চাকরি থেকে অপসারিত হয়ে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট নং ৩৬৯৭/২০২২ এ গত ২৪ মে হাইকোর্ট আদেশ প্রদান করেন যে, স্বপদে বহাল চেয়ে দুদকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের আপিল আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আমি আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন নং-১৭৩২/২০২২ দায়ের করি, যা বিচারাধীন। আমার অপসারণের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে কথা বলাটা সমীচীন নয়। তবে, আদালত আমার মামলায় যে আদেশ দেবেন, তা অকুণ্ঠচিত্তে মাথা পেতে নেবো।

চাকরি ফিরে না পেলে?

শুরুতে কয়েকটি সামাজিক সংস্থা অনুদান দিতে চেয়েছে, কিন্তু আমি তাদের অনুদান সম্মানের সঙ্গে ফেরত দিয়েছি। তাদের বলেছি, সম্ভব হলে চাকরি দিতে। ক্যারিয়ারের শুরুর মুহূর্তে সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আগের পেশায় যেতে চেয়েও সম্ভব হয়নি। পরিচিতি থেকে শুরু করে মিডিয়া মারফত বিভিন্ন বেসরকারি দপ্তরে চাকরির জন্য সিভি জমা দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের দোকানে বসার নিউজ ভাইরাল হলে অনেকেই আমাকে চাকরির অফার দিচ্ছেন। এর মধ্যে একটি এয়ারলাইনস কোম্পানি, সিকিউরিটি কোম্পানিসহ প্রায় ৩০টির বেশি কোম্পানি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও অবাক হয়েছি মানুষের ভালোবাসা দেখে। আমি দেখে শুনে সিদ্ধান্ত নেবো।

তবে আমি দুদকেই ফিরতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিধবা বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ২ শিশু সন্তানসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও মানবিক দিক বিবেচনায় আমাকে পুনর্বহালের জন্য গত ২১ এপ্রিল আবেদন করেছি।

কারো কাছ থেকে কোনো হুমকি পেয়েছেন?

দুদক চট্টগ্রাম-২ অফিসে সাড়ে ৩ বছর চাকরির সময় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি, কর্ণফুলী গ্যাসে (কেজিডিসিএল) গ্যাস কারচুপি, অবৈধ গ্যাস লাইনের রাইজার শিফটিং, নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া সনদ নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ ও পরবর্তীতে কয়েকবার পদোন্নতি পাওয়া, অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও পুনরায় সংযোগ, রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগসহ বিভিন্ন অনুসন্ধান ও মামলা করেছি। এগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর।

সেই নথিগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজরা কর্মরত থাকাকালীন পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ হুমকি দিলেও সেই সময় আমি আমার মতো করে কাজ করেছি। কিন্তু বাসায় এসে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় খুলশী থানায় জিডি ও দুদক কমিশন বরাবর ২ বার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা নেই। আমাকে অপসারণের পর পরই দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা আমার জীবনে বসবাস করা সব স্থায়ী-অস্থায়ী জায়গায় গিয়েছে এবং যাচ্ছে। কোনো ধরনের সম্পদ ক্রয় কিংবা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে কি না, তা জানার জন্য তারা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, কয়েকটি পক্ষ গণমাধ্যম ও গণমানুষের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে একের পর এক বেনামি উদ্ভট তথ্য দিয়ে দুদকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে চরম মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ নিয়মিত দাখিল করছে। তারা আমাকে এখনো প্রতিপক্ষ মনে করে, যাতে আমি কোনোভাবেই চাকরিতে পুনর্বহাল হতে না পারি। এমনকি আমাকে রাস্তার ফকির বানানোর হুমকি দিচ্ছে। দেশান্তরি করারও উড়ো তথ্য পাচ্ছি।

তারা হয়তো মনে করছেন, যদি আমাকে দুনিয়া থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলা যায়, তাহলে আমার দাখিলকৃত ওই সব প্রতিবেদন আর কখনোই আলোর মুখ দেখবে না, কিংবা অন্য কর্মকর্তারা সেই ভয়ে চুপসে যাবে।

এটা সত্য যে, দুদকের কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনকালীন জীবনের ঝুঁকি প্রকট। কেননা দুর্নীতিবাজরা সংঘবদ্ধ। শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে দেশত্যাগের পরামর্শ দিলেও দেশকে মনে প্রাণে ভালোবাসি, কখনো দেশত্যাগ করব না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়েই দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়ে চাকরি হারাতে হয়েছে। চাকরি হারানোর আগেও এক প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ আমার বাসায় এসে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি তখন উচ্চবাক্যে আমাকে বলেছিলেন, দুদকের অমুক কর্মকর্তাকে দিয়েই তোর চাকরি খাব। আর সেটিও কিছুদিন পর বাস্তবায়ন হয়েছে। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, দুর্নীতিবাজরা খুব শক্তিশালী। আমরা যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করি, তারা বিচ্ছিন্ন ও শক্তিহীন।

আপনার করা দুদকের মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা কী?

কক্সবাজার এলএ শাখার দুর্নীতি নিয়ে প্রায় ৬০০ পাতার প্রতিবেদনটি আজ পর্যন্ত আগের অবস্থাতেই আছে। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রায় ২০০ পাতার সুপারিশও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কর্ণফুলী গ্যাসের (কেজিডিসিএল) অনুসন্ধান শেষে মামলার সুপারিশ সম্বলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন, গ্যাস লাইনের রাইজার শিফটিং নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামিকে রিমান্ডে না আনা ও প্রতিবেদন দাখিল না করা, কক্সবাজারের গণপূর্তের প্রায় ৫০ কোটি টাকা সরকারি সম্পদ আত্মসাতের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ, চট্টগ্রাম এলএ শাখার দুর্নীতি নিয়ে মামলার সুপারিশ, চট্টগ্রাম গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট প্রকল্পের জালিয়াতি নিয়ে মামলার সুপারিশের বিষয়গুলোর কোনো বাস্তবায়ন হয়নি আমার জানা মতে।

এমনকি, রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি ও পাসপোর্ট প্রাপ্তির সিরিজ মামলার চার্জশিট না হওয়া, নতুন করে একটি মামলাও না হওয়া, রোহিঙ্গাদের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত না করা, রোহিঙ্গা নাগরিকসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার না করা, এ সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশন, পাসপোর্ট অফিস ও পুলিশের বিশেষ শাখার দুর্নীতিবাজদের সম্পদের অনুসন্ধান, চট্টগ্রাম বিভাগসহ অন্য জেলায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিন্দুমাত্র অগ্রগতি হয়নি। এর ফলে এসব ঘটনা এখনো হচ্ছে।

অনেক রোহিঙ্গা আসামি মামলার তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট ও এনআইডি বৈধকরণ করে ফেলেছে শুধু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততার কারণে। কক্সবাজারে এলএ অফিসের সম্প্রতি এক সার্ভেয়ার প্রায় ২৪ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্টে ধরা পড়েছেন। আমার তদন্তকালীন এলএ অফিসের কমিশন বাণিজ্য কিছুটা কমলেও বর্তমানে তা দ্বিগুণ হয়েছে শুধু প্রতিবেদন বাস্তবায়ন না হওয়ায়, কিংবা কোনো ধরনের অভিযান পরিচালনা না করায়।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, আমি রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া নিয়ে যেসব কাজ করেছি, যারা এসব কাজে জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, শেষ পর্যন্ত তারাই কোনো না কোনোভাবে অন্য কোনো সংস্থার কাছে আটক-গ্রেপ্তার হচ্ছেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা আইনের আওতায় না আসায় সামাজিক সংকট প্রকট হচ্ছে।

অন্যদিকে কর্ণফুলী গ্যাসের (কেজিডিসিএল) এমডিসহ অন্যান্যদের দুর্নীতি নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা পেট্রোবাংলা কর্তৃক গঠিত উচ্চতর ২টি কমিটির সত্যতা পাওয়ার পরও আজ পর্যন্ত দুদক থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। ঘোষণা দিয়ে দুর্নীতিবাজরা আমাকে চাকরিচ্যুত করায় বর্তমান কর্মকর্তাদের কাছে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এগুলো নিয়ে এগোলেই শরীফের মতো অবস্থা হবে। হয়তো এই কারণেই এই নথিগুলোর সুপারিশ অদ্যাবধি আলোর মুখ দেখছে না।

এ ছাড়া, কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটকের পর ওই সার্ভেয়ারও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানেও আমার প্রতিবেদনে সুপারিশ করা বেশ কয়েকজনের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন। কর্ণফুলী গ্যাসের যেসব অনিয়ম আমি তুলে ধরেছিলাম, সেটিতো এখন তাদের নিজস্ব বিভাগ তথা পেট্রোবাংলাও তাদের তদন্তে তুলে এনেছেন। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে— আমি যেসব প্রতিবেদন দিয়েছি, তা কি মিথ্যা ছিল?

আমার বয়স এখন প্রায় ৩৫। জীবনের অনেক সময় বাকি। নতুন করে জীবনকে সাজাতে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তা নিচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমাকে অপসারণের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। মজলুম এই কর্মচারীর পক্ষে সব সহকর্মীরা মানববন্ধন করেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে। টিআইবিসহ অনেক সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। জাতীয় সংসদে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক্টিভিস্টরা সরব রয়েছেন, গণমাধ্যমকর্মীসহ সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় কলাম নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এর সবই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। গণপরিবহনে (বাস/সিএনজিতে) উঠলে মিডিয়ার কল্যাণে তারা আমাকে চেনেন বলে অনেক সময় সহমর্মিতায় ভাড়া নিতে চান না। এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর সম্মান কী হতে পারে?

শরীফ ২০১১ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে তিনি দুদকে যোগদান করেন। সাড়ে ৭ বছরের চাকরি জীবনের প্রথম ৬ বছরই বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) শরীফ উদ্দিনকে দুদকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা 'অতি উত্তম' হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তাকে তদন্ত কাজে 'অভিজ্ঞ' এবং 'দক্ষ কর্মকর্তা ও উদ্যমী' হিসেবে উল্লেখ করেছে দুদক।

শরীফের ভাই ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই একজন সৎ কর্মকর্তা। তার প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। আমরা চাই, তাকে পুনর্বহাল করে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হোক।'

Comments

The Daily Star  | English
Abnormally high-priced purchases by Power Grid Company of Bangladesh

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

12h ago