হেরিটেজ স্বীকৃতি পাচ্ছে প্রাচীন গাছ

ভবন ও সৌধের মতো এবার ঐতিহ্যের অংশ হতে চলেছে গাছ৷ পুরোনো গাছকে হেরিটেজ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের৷ গাছ সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা এর লক্ষ্য৷
পশ্চিমবঙ্গ গাছ
ছবি: পায়েল সামন্ত/ডয়চে ভেলে

ভবন ও সৌধের মতো এবার ঐতিহ্যের অংশ হতে চলেছে গাছ৷ পুরোনো গাছকে হেরিটেজ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের৷ গাছ সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা এর লক্ষ্য৷

আধুনিক শহর-নগরের আনাচেকানাচে ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক প্রাচীন ভবন৷ কালের নিয়মে ধ্বংসের মুখে থাকা সেই ভবনগুলির একাংশের সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে৷ এমনই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন গাছ৷ এই গাছগুলি অনাদরে, অলক্ষ্যে থেকে যায়৷ কখনো মানুষের হাতে কাটা পড়ে৷ এই পরিস্থিতি বদলাতে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের৷

পরিবেশ দপ্তরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদ গাছকে হেরিটেজ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও পুরোনো গাছকে বেছে ঐতিহ্যশালী তকমা দেওয়া হবে৷ এই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠাচ্ছে পর্ষদ৷ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাছ চিহ্নিত করে তার চারপাশ ঘিরে দেওয়া হবে৷ সেই গাছের গায়ে হেরিটেজ গাছ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি থাকবে যাতে বোঝা যায় এটিকে পর্ষদ স্বীকৃতি দিয়েছে৷

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জীববৈচিত্র পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'অনেক গাছই পুরোনো হওয়ায় ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে৷ সেগুলিকে হেরিটেজ ঘোষণা করলে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে৷ আইনি রক্ষাকবচ থাকবে যার সাহায্যে গাছ কাটার মতো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না৷'

বট, অশ্বত্থ, অর্জুন, নিম, মেহগনি, পাকুড়, শিরিষ-সহ বিভিন্ন বড় গাছ যেগুলির বয়স ১০০ বছরের বেশি, সেগুলিকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হবে৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন বিভিন্ন দপ্তর, বিধানসভা, আদালত, রাজভবন ছাড়াও উদ্যান বা ক্লাবে থাকা পুরনো গাছগুলির যথাযথ সংরক্ষণ হয়৷ কিন্তু তার বাইরে পথের পাশে, মাঠ বা জলাশয়ের ধারে যে অজস্র প্রাচীন গাছ রয়েছে৷

ঘেরাটোপের বাইরে থাকা গাছগুলির জন্য কোনো প্রহরা নেই৷ এর মধ্যে অন্যতম কলকাতা ময়দান৷ সবুজে ঘেরা এই জায়গা মহানগরীর ফুসফুস৷ শহরের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এখানকার গাছে কোপ পড়ে না বটে, কিন্তু তার বাইরে যে অসংখ্য বড় গাছ ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলি অরক্ষিত থেকে যায়৷ এই গাছগুলি সহজেই কাটা পড়ে, কিন্তু তাতে কোনো শোরগোল পড়ে না৷

সাম্প্রতিক কালে এর সবচেয়ে বড় নমুনা মিলেছে যশোর রোডে৷ এই দীর্ঘ সড়কের দুধারে অনেক পুরনো, বড় গাছ রয়েছে৷ রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার প্রয়োজন হয়ে পড়ে৷ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান স্থানীয়রা৷ গড়ে ওঠে যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি৷ এই সংগঠনও দাবি করেছে, পুরনো গাছগুলিকে হেরিটেজ ঘোষণা করতে হবে৷

ধাপে ধাপে হেরিটেজ ঘোষণার কাজ চালাবে জীববৈচিত্র পর্ষদ৷ প্রথম পর্যায়ে কলকাতার ৫০টি গাছকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়া হবে৷ রাজ্যের ৩৪২টি ব্লকের প্রতিটিতে একটি করে গাছকে ঐতিহ্যশালী তকমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷ আগামী বছর বর্ষাকালের আগে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় পরিবেশ দপ্তর৷

পর্ষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আশাবাদী 'কলকাতা হেরিটেজ ওয়াক'-এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা তথাগত নিয়োগী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'পুরোনো গাছ শহরের ইতিহাসেরই অংশ, একে অবশ্যই হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷ কিন্তু শুধু তকমা দিলেই হবে না, মানুষকে সচেতন করতে হবে৷ নইলে এই উদ্যোগ কাজে আসবে না৷'

বিদেশে গাছকে হেরিটেজ ঘোষণার নজির আছে৷ গাছের প্রাচীনতার সঙ্গে কাণ্ডের বেড়, ছায়া দেওয়া ছাতার মতো ডালপালার বিস্তার থেকে বাস্তুতন্ত্রের প্রয়োজন, এ সব দিক মাথায় রাখেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু হেরিটেজ ঘোষণা হলেই গাছ রক্ষা পাবে, এ নিশ্চয়তা কোথায়?

এই দৃষ্টিকোণ থেকেই খুব একটা আশার আলো দেখছেন না পরিবেশকর্মী নব দত্ত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'কোথাও গাছ কাটার খবর পরিবেশ দপ্তরকে দেওয়া হলে তারা বলে এটা তাদের দেখার বিষয় নয়৷ পুরসভা, বন দপ্তর দেখবে৷ এই যদি মনোভাব হয় তা হলে নিয়ম করে কী হবে?৷'

তার মতো পরিবেশবান্ধব জনতাও মনে করছে, শুধু নিয়ম করলেই হবে না৷ নিয়ম ভাঙা হলে আইনি পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই থাকবে গাছ, বাঁচবে পরিবেশ, হারাবে না ইতিহাসও৷

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

1h ago