পিনাট বাটারের জনপ্রিয়তা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যোগসূত্র

পিনাট বাটারের জনপ্রিয়তা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যোগসূত্র
পিনাট বাটার। ছবি: সংগৃহীত

পিনাট বাটারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বেশ বড়সড় একটা যোগসূত্র রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও খাবার হিসেবে পিনাট বাটার খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। 

যুদ্ধরত সৈনিকদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এবং তাদের রসদ সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখতে আমেরিকানরা মাংস খাওয়া অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল। পরিবর্তে ভেষজ পিনাট পাউরুটি খেতে শুরু করে। তাতেও পেট না ভরলে পিনাট বাটার স্যুপ খেতো। খাবার হিসেবে পিনাট বাজারের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বদলকারী ঘটনা। 

পিনাট বাটারকে একটি সার্বজনীন ও জনপ্রিয় খাবারে পরিণত করে এই যুদ্ধ। আমেরিকানরা বিভিন্ন স্ন্যাকস এবং স্যান্ডউইচের সঙ্গেও পিনাট বাটার খেতে শুরু করে। 

ছবি: সংগৃহীত

পিনাট বাটারের উচ্চ পৃষ্টিগুণ ও ক্যালরির কথা বিবেচনা করে মার্কিন সরকারও খাবারটিকে মাংসের বিকল্প হিসেবে প্রচার চালাতে শুরু করে। সৈন্যদের জন্য তখন মাংস সাশ্রয় করাটা সরকারের অগ্রাধিকার ছিল। তাই কর্তৃপক্ষ চাইতো না খোলা বাজারে খুব বেশি মাংস বিক্রি হোক। 

চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি জাতীয় পিনাট বাটার ডে উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে অবস্থিত ন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু মিউজিয়াম অ্যান্ড মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ দেশটিতে পিনাট বাটারের অত্যধিক জনপ্রিয়তার সঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেন। 

প্রতিষ্ঠানটির একজন কিউরেটর লরা ভট বলেন, 'যুদ্ধের শুরুতে পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখাটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। শুরুতে যুদ্ধরত আমেরিকান সৈন্যদের কাছে যাতে পর্যাপ্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার পৌঁছানো যায়, সে বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।'

যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই রেশন বা খাবারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি বরাদ্দসীমা নির্ধারণ করে দেয় না। কিন্তু সরকার জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিল সৈন্যদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে, তারা যেন স্বেচ্ছায় মাংস, গম ও চিনির ব্যবহার কমিয়ে আনে। সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের লক্ষ্যে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল একটি রান্নার রেসিপির বই বের করা, যাতে ছিল তখনকার সময়ে দুষ্প্রাপ্য খাদ্যপণ্যগুলোর বিকল্প হিসেবে সহজলভ্য অন্যান্য খাবারের লোভনীয় রেসিপি। বইটির নাম দেওয়া হয় 'উইন দ্য ওয়ার ইন দ্য কিচেন'।

ওই বইতে পিনাট বাটার অংশে পিনাট পাউরুটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাকে আবার মিটলোফ-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। বইটিতে পিনাট বাটার স্যুপের আরও উন্নত ও লোভনীয় রেসিপি দেওয়া হয়।  

রেসিপির বইটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অনেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে তাজা খাবার খেতে শুরু করে। 

লরা ভট বলেন, 'উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে খাবার প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ প্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষ ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন দেশটির সরবরাহের সামঞ্জস্যের কথা দেশব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেটিংয়ের ভাষাতেও প্রভাব রেখেছিল এবং মানুষকে উৎপাদনকারীদের তৈরি খাবার নিয়মিত এবং আরও বেশি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।' 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও পিনাট বাটার খাবার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত ছিল। দেশটিতে অন্তত ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এই খাবারটি প্রচলিত।  তবে একটা সময় এটি ছিল দামি ও অভিজাত খাবার। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ খাবারটি 'জাত-পাত' ভেঙে এটিকে সার্বজনিন খাবারে পরিণত করে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও একই পরিস্থিতিতে খাবারটির অত্যধিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে এর জনপ্রিয়তা আমেরিকানদের মনে স্থায়ী আসন করে নেয়। এখন আমেরিকানরা সকালের নাস্তা, দুপুর এবং রাতের খাবারেও পাউরুটির সঙ্গে মিশিয়ে পিনাট বাটার খায়!

 

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

1h ago