শেষ মুহূর্তের গোলে নাটকীয়ভাবে নকআউট পর্বে দক্ষিণ কোরিয়া

শুক্রবার কাতারের আই রাইয়ান স্টেডিয়ামে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারায় এশিয়ার দল দক্ষিণ কোরিয়া। আরেক ম্যাচ উরুগুয়ে ২-০ গোলে ঘানাকে হারালেও গোল গড়ে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া উঠে গেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা তখন শেষ। মনে হচ্ছিল একটা গোল দিতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে দক্ষিণ কোরিয়াকে। কিন্তু যোগ করা সময়ে প্রতি আক্রমণ থেকে সন হিউং-মিনের বানানো বল থেকে দারুণ এক গোল দিয়ে দেন হুয়াং হি-চান। শক্তিশালী পর্তুগালকে হারিয়েও তাদের চোখ তখন মোবাইল স্ক্রিনে। অন্য ম্যাচে ঘানার জালে উরুগুয়ে আর এক গোল দিলে কান্নায় ভেঙে পড়তে হতো তাদের। শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় উৎসবে মাতে তারা।

শুক্রবার কাতারের আই রাইয়ান স্টেডিয়ামে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারায় এশিয়ার দল দক্ষিণ কোরিয়া। আরেক ম্যাচ উরুগুয়ে ২-০ গোলে ঘানাকে হারালেও গোল গড়ে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া উঠে গেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। ম্যাচ হারলেও ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। 

 

পুরো ম্যাচে ৬২ শতাংশ বল দখলে রেখে ১৩টি শট নিয়েছিল পর্তুগাল, যার ৬টি ছিল লক্ষ্যে। ৩৮ শতাংশ বল দখলে রাখা দক্ষিণ কোরিয়াও সমান ১৩টি শট নিয়ে ৬টি লক্ষ্যে রেখেছে। তফাৎ করে দিয়েছে সফলতায়। ৬ শটের দুটি থেকে গোল পেয়েছে কোরিয়া, পর্তুগাল পেয়েছে একটি।

ম্যাচের শুরু থেকে দাপট ছিল পর্তুগালেরই। পঞ্চম মিনিটেই গোল পেয়ে যায় তারা। ডিফেন্স থেকে ডান প্রান্তে দারুণ পাস পান দিওগো দালোট। বল নিয়ে তীব্র গতিতে ঢুকে পড়েন দক্ষিণ কোরিয়ার সীমানায়। তার দেওয়া মাপা ক্রস থেকে প্লেসিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন রিকার্ডো হোর্তা।

গোল হজম করে খেলায় ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালানো শুরু করে কোরিয়া। কিন্তু পর্তুগালের জমাট রক্ষণ ভেঙে এগুনো সম্ভব হচ্ছিল না তাদের।

২৩ মিনিটে দালোটের ক্রস ছুটে যাচ্ছিল বক্সে থাকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর দিকে। এই তারকার পায়ে পড়ার আগে তা ক্লিয়ার করেন কোরিয়ার ডিফেন্ডার।

২৭ মিনিটে গোল শোধ করে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল পড়ে রোনালদোর পীঠে। তা থেকে দিক বদলে বল পেয়ে যান   কিম ইয়ং-গোন, টোকা মেরে জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতেন তিনি।

৩০ মিনিটে সুর্বণ সুযোগ হাতছাড়া করেন রোনালদো।  মিডফিল্ড থেকে ডিফেন্স চেরা পাস ধরে এগিয়ে গোলরক্ষকে একা পেয়েছিলেন তিনি। তবে পরাস্ত করতে পারেননি কিম সেউং-জিউকে, রোনালদোকে হতাশ করেন কোরিয়ার কিপার।

৩৫ মিনিটে গোলরক্ষকের লম্বা পাস ধরে বক্সের সামনে থেকে বা পায়ের শট নিয়েছিলেন দালোট। তা ধরে ফেলা কঠিন হয়নি কোরিয়ান কিপারের।

৪২ মিনিটে আরেকটি সুযোগ হারান রোনালদো।  বক্সের বাইরে থেকে মারা ভিতিনহার  শট গোলরক্ষক ফিরিয়ে  দিলে সামনে দাঁড়ানো রোনালদো ডাইভিং হেড নিয়েছিলেন, কিন্তু তা যায় পোস্টের বাইরে।

বিরতির পর নেমে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে পর্তুগাল। রোনালদো বল পেলেও সুবিধা করতে পারছিলেন না। প্রতি আক্রমণে উঠে সুযোগ তৈরির চেষ্টায় ছিল কোরিয়ানরাও।

৫৭ মিনিটে টটেনহ্যাম হটস্পার তারকা সন হিউং-মিনের কর্নার থেকে লি জায়ে-সাঙ্গের ভলি যায় বাইরে দিয়ে।

৬১ মিনিটে সন মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ে ছুটছিলেন বুলেট গতিতে, পর্তুগাল ডিফেন্সে এসেই তিনি খেই হারান।

এসব মুহূর্ত সামনে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষের সীমানার সামনে ঘোরাঘুরি করতে করতে বক্সে ঢুকে পর্তুগিজরা। কিন্তু আসছিল না বলার মতো সুযোগ। ৬২ মিনিটে রোনালদো ওয়ান টু ওয়ান খেলে বক্সে ঢুকে পড়লেও সতীর্থের বাড়ানো বল তার কাছে পৌঁছায়নি।

৭০ মিনিটে কিম জিন সু বল দেন সনকে। সন দূরের পোস্টে ভলি মারতে গেলে তা শরীর দিয়ে ঠেকিয়ে দেন জোয়াও কানসেলো।

পরের মিনিয়ে বদলি নামা পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রাফায়েল লিয়াও বল মারেন বাইরে।

ম্যাচ সমাপ্তির দিকে এগুতে গোলের প্রবল তাগদা দেখায় কোরিয়ানরা। কিন্তু কোনভাবেই ডিফেন্স ভাঙা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। সবগুলো আক্রমণ থেমে যাচ্ছিল পর্তুগালের বক্সের সামনে গিয়ে। আশাও মিইয়ে যাচ্ছিল তাদের। আরেক ম্যাচে উরুগুয়ে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকায় তখন একটা গোল পেলেই চলত কোরিয়ার।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। প্রতি আক্রমণ থেকে বল নিয়ে ছুটে দলের সেরা তারকা সন পর্তুগালের ডিফেন্সে গিয়ে দারুণ এক পাস দেন হি-চানকে। চান বল ধরে অসাধারণ মুন্সিয়ানায় জালে জড়িয়ে মাতেন উল্লাসে।

ম্যাচের বাকি কয়েক মিনিট এই গোল ধরে রাখে তারা। শেষের বাঁশি বাজার সঙ্গে উল্লাসের সঙ্গে শুরু হয় অপেক্ষা। গোল হয়ে মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখে অন্য ম্যাচ দেখতে থাকেন তারা। সেই ম্যাচে উরুগুয়ে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও তাদের দরকার ছিল আরেক গোল। দক্ষিণ কোরিয়ার জেতার খবরে মরিয়া উরুগুয়ের খেলোয়াড়রা চালান একের পর এক আক্রমণ। ঘানা সেসব সামলে নিলে যোগ করা ৮ মিনিট পেরিয়ে যায়। এবার বাঁধভাঙা উল্লাস আর আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়ে ২০০২ বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল খেলা দলটি।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

23h ago