ফুটবলাররা শিশুদের হাত ধরে মাঠে নামেন কেন

২০০২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে শিশুদের সঙ্গে মাঠে নামছেন খেলোয়াড়রা। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে আছে সারা বিশ্ব। খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়রা যখন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নিজ দেশের জাতীয় সংগীত গান, তখন তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকে ছোট ছোট শিশুরাও। কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে প্রিয় দলকে দেখতে পাওয়া, এ যেন স্বপ্নের মতো দৃশ্য।

কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, কী কারণে শিশুরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে নামে? এটি বিশ্বকে কী বার্তা দেয়? এর পেছনের গল্পটাই বা কী?

গল্পটাই বা কী?

খেলোয়াড়দের হাত ধরে থাকা এসব শিশুদের বলা হয় 'ম্যাসকট চিলড্রেন' বা 'প্লেয়ার এস্কর্টস'। শুধু বিশ্বকাপ ফুটবলেই নয়, বিভিন্ন লিগের ম্যাচগুলোতেও খেলোয়াড়দের সঙ্গে 'ম্যাসকট' থাকে। বর্তমানে অলিম্পিক, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল ও হকিতেও এই নিয়ম দেখতে পাওয়া যায়।

আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাস

খেলোয়াড়দের সঙ্গে শিশুদের দাঁড়ানোর প্রচলন খুব বেশিদিন আগের নয়। এটি শুরু হয় গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শেষদিকে।

১৯৯০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল বা ১৯৯৪ সালের এফএ কাপ ফাইনালেও প্রতি খেলোয়াড়ের সঙ্গে একজন করে এস্কর্ট দেখা যায়নি। সর্বপ্রথম শিশুরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে প্রবেশ করে চমক সৃষ্টি করে ১৯৯৯ সালের এফএ কাপ ফাইনালে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ক্লাব প্রতিযোগিতায় সেদিন ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ম্যাচ। সেই ফাইনালে প্রত্যেক দলের সঙ্গে একজন এস্কর্টকে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

পরের বছর ২০০০ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম প্রতি খেলোয়াড়ের সঙ্গে একজন করে শিশু মাঠে প্রবেশ করে।

২০০১ সালে 'শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলুন' প্রচারণা শুরু করে ইউনিসেফ। সংস্থাটির সেই প্রচারণার অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ২০০০ সালের ইউরো শেষ হওয়ার পরপরই এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা দেয় তারা।

ব্রাজিল ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সাল থেকে এই নিয়ম চালু হলেও এর বাস্তবায়ন ঘটে ২০০২ সালে। জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ায় যৌথভাবে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপ ফুটবলে নতুন চমক আনতে প্রতি ম্যাচেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে ইউনিসেফের দেওয়া 'শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলুন' লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরে মাঠে নামে ছোট শিশুরা।

ইউনিসেফের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল, বিশ্বব্যাপী সব শিশুর জীবন ব্যবস্থাকে আরও বেশি সুরক্ষিত ও উন্নত করা। ফিফা এই কাজে ইউনিসেফকে সঙ্গে নিয়ে এই বার্তা তুলে ধরেছে যে, আজকের শিশুই আগামী দিনের মেসি, রোনালদো কিংবা নেইমার হয়ে উঠতে পারে।

ম্যাসকট জনপ্রিয় হওয়ার কারণ

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যাসকটদের দেখা যায়। এমনকি লিগের ম্যাচগুলোতে ম্যাসকট নিয়ে প্রবেশ করেন খেলোয়াড়রা। তবে মজার ব্যাপার হলো, লিগের খেলাগুলোয় ম্যাসকট নিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে ফিফায় লিখিত নিয়ম নেই। তবু কেন শিশুরা থাকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে? এর পেছনে শুধু ইউনিসেফের অবদান, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। প্রিয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছোট শিশুদের নিষ্পাপ মুখ খেলার আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।

ম্যাসকট কি শুধু শিশুরাই হতে পারে?

কেবল শিশুরাই যে ম্যাসকট হবে, তেমনটা কিন্তু নয়। ২০১৫ সালের মা দিবসে নেদারল্যান্ডসের ক্লাব আয়াক্স আমস্টারডামের খেলোয়াড়রা তাদের মায়ের হাত ধরে মাঠে নেমেছিলেন।

অন্যদিকে, ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোর খেলোয়াড়রা সেই বছরই কুকুরের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে কুকুর নিয়ে মাঠে নামেন।

২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসের আরেক ক্লাব আরকেসি ওয়ালওয়াইক ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে ম্যাসকট হিসেবে বেছে নিয়েছিলে মডেলদের।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus speech at Earthna Summit 2025 in Doha

No one too poor to dream, no dream too big to achieve: Yunus

He says in his keynote speech at Earthna Summit 2025 in Doha

1h ago