মোবাইলে ‘আ. লীগ নেতাদের ছবি নিয়ে’ ঢাকায় এসেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে গোলাপবাগে পৌঁছাতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন।
গোলাপবাগ মাঠ। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে গোলাপবাগে পৌঁছাতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন।

গতকাল শুক্রবার রাত থেকেই গোলাপবাগ মাঠে অবস্থান নিতে থাকেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। রাতে থাকার প্রস্তুতি হিসেবে তারা নিয়ে এসেছিলেন পাটি, কম্বল।

ঢাকায় আসার পথে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, পথে চেকপোস্টে পুলিশ মোবাইল চেক করেছে। তাই ফোন থেকে সব ছবি, তথ্য ডিলিট করে দিয়েছেন তারা। অনেকে আবার মোবাইলের ডিসপ্লেতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা দর্শনা থেকে রওনা দেন বিএনপি কর্মী আবদুর রহমান (৬০)। শুক্রবার রাতে গোলাপবাগ মাঠে ১৫-১৬ জনের একটি দলের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছিলাম যে পুলিশ যাদের মোবাইলে বিএনপির লোগো, বিএনপি নেতাদের ছবি পেয়েছে তাদেরকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা মোবাইলের সব ছবি, তথ্য ডিলিট করে দিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি এর আগেও কয়েকটি জেলায় বিএনপির সমাবেশে গিয়েছি। তাই ফোনে অনেক ছবি ছিল। ঢাকায় আসার পথে সব ছবি ডিলিট করে ফেলেছি। অনেকে মাঝপথেই তাদের ছবি ও ফাইলগুলো বাসায় থাকা আত্মীয়, পরিবারের কাছে পাঠিয়ে তারপর ডিলিট করেছে। যাতে পরে আবার সেগুলো পেতে পারে।'

'অনেকে আবার বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ফাইল ডাউনলোড করে নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন', যোগ করেন তিনি।

আজ শনিবার সকারে বিএনপির ১৫-১৬ জনের একটি দল গোলাপবাগ মাঠ এলাকায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, আমরা বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকায় পৌঁছেছি। মোবাইল চেকের বিষয়টি জানতে পেরেছিলাম। সেজন্য আগেই বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ অন্যান্য ছবি ও ফাইল ডাউনলোড করে রেখেছিলাম। পুলিশের কাছে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছি।

পুলিশের চেকপোস্ট এড়াতে কয়েকটি পরিবহন পাল্টে ভেঙে ভেঙে এসেছেন বলে জানান তারা।

লক্ষ্মীপুর থেকে আসা বিএনপি কর্মী আবদুল খালেক (৫০) বলেন, 'আমি কয়েক গাড়ি বদলে এসেছি। চিটাগাং রোডে আসার পর বাসের সব যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছে। পরে অন্য একটা বাসে এসেছি। এত কষ্ট করে এসেছি শুধু এই সমাবেশ সফল করার জন্য।'

বরিশাল জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একাধিক বাস, প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি পরিবহন ভেঙে ভেঙে শ্রমিক দলের ২৫০ কর্মী নিয়ে এসেছি।'

গতকাল রাতে গোলাপবাগ মাঠে অবস্থান নেওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

আসার পথে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বরিশাল থেকে শুরুতে ইলিশ পরিবহনে উঠেছি। প্রথমেই বরিশাল এলাকায় পুলিশ বাসে তল্লাশি চালায়। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন। তারা বিএনপির লোকজনকে চেনেন। তারা অনেকেই চিহ্নিত করে পুলিশকে দেখিয়ে দিয়েছেন। এভাবে অনেককেই পুলিশ বিভিন্ন মামলায় আসামি হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করে নিয়ে গেছে। শুরুতে বরিশাল, পরে গোপালগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জের ইকুরিয়া, সবশেষে ঢাকার ধোলাইপাড়— মোট ৪ জায়গায় পুলিশ তল্লাশি করেছে।'

কেরাণীগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ৪ জন সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে এসেছি। পুলিশ মাঝপথে চেক করেছে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন। তারা যাদেরকে চিনতে পেরেছেন, তাদেরকে নামিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, কোথায় চাচ্ছি। বলেছি যে, মোহাম্মদপুরে যাচ্ছি, জরুরি ব্যবসার কাজ। মালামাল আনতে যাচ্ছি।'

রওনা দেওয়ার আগে মোবাইলের সব ছবি ডিলিট করে এসেছেন বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Keep local realities in mind while making plans: PM to economists

Prime Minister Sheikh Hasina today asked the economists to design their policies, plans and programmes considering the local realities as advice from a foreigner will not be fruitful here.

34m ago