‘বিএনপির রাজনীতি করা কি পাপ’

ফজিলাতুন্নেসা। ছবি: স্টার

ফজিলাতুন্নেসার পরিবারের জন্য সেই রাতটি ছিল ভয়াবহ। বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের ২ দিন আগে মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ওয়ারীতে ফজিলাতুন্নেসার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার এক ছেলেকে হত্যা করে এবং আরেক ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়।

তিনি জানান, তার এক নাতি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেই কারণেই তার পরিবারের এমন দুর্গতি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

'বিএনপির রাজনীতি করা কি পাপ?', প্রশ্ন করেন ৮৯ বছর বয়সী ফজিলাতুন্নেসা।

গত ৮ ডিসেম্বর ফজিলাতুন্নেসার বাড়িতে 'হামলা' চালানো আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বরং, ওই কর্মীরা তার ছেলে শাহাদাত হোসেন স্বপনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখায়।

পুলিশ স্বপনকে সম্প্রতি কাপ্তানবাজারে সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্বপনের বড় ভাই মিল্লাত হোসেন (৭০) দীর্ঘ দিন স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক ছিলেন। তাই ওই রাতে তাদের মা ফজিলাতুন্নেসা মিল্লাতকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাধা দিতে বলেন। মিল্লাত সেই চেষ্টাও করেন। কিন্তু, সে সময় হামলাকারীদের একজন মিল্লাতের মাথার পেছনে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে। আহত অবস্থায় মিল্লাতকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টারকে ফজিলাতুন্নেসা বলেন, 'মিল্লাতকে বলেছিলাম স্বপনকে বাঁচাতে যেতে। আমি যেতে না বললে হয়তো আজ মিল্লাত বেঁচে থাকত।'

এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি। কারণ পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ভয়ে বাড়িতে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন তারা।

মিল্লাতের ছেলে ফয়সাল মাহবুব ওয়ারী ইউনিট যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে খুঁজতেই ৮ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী পুরান ঢাকার ওয়ারীর গোপী মোহন বসাক লেনে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন ফয়সালের খোঁজে বাড়ির দ্বিতীয় তলার প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালায়।

বাড়ির ওয়্যারড্রব পর্যন্ত তাদের খুলে দেখাতে হয়। কিন্তু ফয়সালকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এক পর্যায়ে হামলাকারীরা দোতলা ভবনের ছাদে ৫২ বছর বয়সী স্বপনকে দেখে। পরে তারা স্বপনকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামাতে শুরু করে। কেউ কেউ তাকে মারধরও করতে থাকে।

তারা ২ তলায় নেমে এলে মিল্লাত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করা হয় বলে জানান তার আইনজীবী ছোট বোন ইয়াসমিন বুলবুলি।

তিনি বলেন, 'প্রথমে আমি এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম, কেন তারা আমার ভাইকে (স্বপন) মারধর করছে। তখন একজন আমাকে ধাক্কা দেয়। এমনকি একজন হুমকি দিয়ে বলে, আমি সরে না গেলে আমাকে গুলি করবে।'

এ বিষয়ে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই বাড়িতে কিছু লোক ঢুকে পড়লে মিল্লাত তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে মাথায় আঘাত পান।'

ওসি জানান, এ ঘটনার পর মিল্লাতের ছোট ছেলে ফারহান মাহবুব হৃদয় থানায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করেন।'

তবে পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের চাপে হৃদয় ইউডির মামলা করতে বাধ্য হয়।

যারা জোর করে ওই রাতে মিল্লাতের বাড়িতে ঢুকেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ না করায় আমরাও কোনো ব্যবস্থা নেইনি।'

ইয়াসমিন বুলবুলি বলেন, 'ওই রাতে বাসায় যারা ঢুকেছিলেন, তারা সবাই অপরিচিত। গভীর রাতে তারা আমাদের বাসায় ঢুকে পড়ে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।'

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালতে হত্যা মামলা করা হয় বলেও জানান বুলবুলি।

ফয়সাল টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনার পরের দিন আজিমপুর কবরস্থানে আমার বাবার দাফনে গেলে পুলিশ আমাকে ধাওয়া দেয়। তখন পালানোর সময় একটি দেয়াল পার হতে গিয়ে আমার একটি পা ভেঙে গেছে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Election Roadmap: BNP unhappy as Yunus gives no specific timeline

The election must be held by December, as any delay could cause the situation to spiral out of control, the BNP said after a meeting with the chief adviser yesterday.

8h ago