বেকারত্ব ঘোচালো কুল চাষ, বছরে আয় ১০ লাখ টাকা

কুল চাষ
বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিসাখালি ইউনিয়নের গোছখালিতে আবু বক্কর সিদ্দিক রাসেলের কুল বাগান। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

কুল চাষ করে বাজিমাত করেছেন এক যুবক। সাড়ে ৪০০ কুলগাছ রোপণ করে বছরে আয় করছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা।

এক সময়ের বেকার যুবকের এমন সাফল্য সারা ফেলেছে এলাকায়। তার এ সাফল্য দেখে অন্যরাও ঝুঁকছেন কুল চাষে।

বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিসাখালি ইউনিয়নের গোছখালি এলাকার যুবক আবু বক্কর সিদ্দিক রাসেল। কাজ করতেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। ২০২০ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন রাসেল।

বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে কৃষি ক্ষেত্রে কিছু করা যায় কিনা ভাবতে থাকেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেন এবং তার পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নেমে পড়েন কৃষিকাজে। নিজেদের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় ২ দশমিক ১৭ একর জমি ইজারা নেন তিনি।

বাড়ির পাশে ইজারা নেওয়া সেই জমি উঁচু করে শুরু করেন মাল্টা চাষ। কিন্তু, সুবিধা করতে পারেননি। লোকসানে পড়তে হয় তাকে। কিছুটা মনোবল হারিয়ে ফেলেন রাসেল। কেটে যায় একটি বছর। তবে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এবার তিনি শুরু করেন কুল চাষ।

কুল চাষ
রাসেলের বাগানে সারা বছরই কুল পাওয়া যায়। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

২০২১ সালের শুরুতে কুষ্টিয়ার মেহেরপুর এলাকার এক বাগান থেকে সংগ্রহ করেন ৪ প্রজাতির কুল গাছ। ফল ধরেছে সব গাছে। গাছে গাছে দুলছে থোকায় থোকায় কুল।

আকার, স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশ। প্রথমে ১২০ টাকা কেজি করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। এখন বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। এর মধ্যে কিছু কুলগাছ বারোমাসি ফলন দেয়, আবার কিছু মৌসুমভিত্তিক।

সারা বছরই রাসেলের বাগানে কুল পাওয়া যায়। বছরে অন্তত ১০ টন কুল উৎপাদন হয় তার বাগানে। বছরে তিনি আয় করছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা।

রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি একর জমি বার্ষিক ১৫ হাজার টাকা ইজারা নিয়ে এই কুলবাগান গড়ে তুলেছি। এখানে ৪ ধরনের—আপেল কুল, কাশ্মীরি কুল, বনসুন্দরী কুল ও বাউকুল আছে। ফলন দেখে আমি খুব খুশি।'

তিনি জানান, প্রথমে মালটা চাষ করতে গিয়ে লোকসান হলেও এখন কুল চাষ করে তা পুষিয়ে নেওয়া গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কুল কিনে নিয়ে যান।

কুল চাষ
নিজের বাগানে আবু বক্কর সিদ্দিক রাসেল। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

সম্প্রতি, এক পাইকার ৩ মণ কুল কিনেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, এভাবে প্রতিদিনই বাগান থেকে কমবেশি কুল কিনে নেন পাইকাররা।

প্রথমে সোয়া ২ একর জমিতে কুলবাগান শুরু করলেও এ বছর তিনি আরও সাড়ে ৩ একর জায়গায় বাগান সম্প্রসারণ করেছেন। এ বাগানে আগামী বছর থেকে তিনি কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন।

রাসেল ২ শ্রমিক নিয়ে পুরো বাগানের পরিচর্যা করেন।

তার সাফল্য দেখে এলাকার কয়েকজন বেকার যুবক শুরু করেছেন কুল চাষ। তাদের বাগানে আগামী বছর থেকে কুল উৎপাদন শুরু হবে।

আমতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাসেল চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিল। আমাদের পরামর্শে কুলবাগান করে সে এখন স্বাবলম্বী। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার না করেই সে ভালো আকার ও স্বাদের কুল পাচ্ছে। এ কারণে বাজারে তার কুলের চাহিদা বেশি।'

তিনি জানান, রাসেলই প্রথম ওই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু করেছেন। তার সাফল্য বেশ কয়েকজনকে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Explosions erupt after gas cylinder-laden truck overturns in B'baria

According to police, the truck overturned due to the poor condition of the road. No casualties were reported.

58m ago