‘বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের খুব কাছের’

Robin Das

রবিন দাসের নামটি আলোচনায় আসে গত বছরে জুন মাসে। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের লর্ডস টেস্টে বদলি ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কারো ইংল্যান্ডের জার্সিতে সর্বোচ্চ মঞ্চে নামার ঘটনা ওটাই প্রথম।

পাকিস্তান এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনেক ক্রিকেটারই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। সেদেশের মূলধারার ক্রিকেটে তাদের অবস্থানও বেশ পোক্ত। ব্রিটেনে বিপুল বাংলাদেশিদের অভিবাসী থাকলেও মূল ধারার ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব এতদিন সেভাবে ছিল না। কাউন্টি দল এসেক্সের হয়ে আলো কেড়ে রবিন ধীরে ধীরে সেই জায়গা নিচ্ছেন। এবার তিনি এসেছেন শেকড়ের কাছে, খেলবেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। অন্যরকম আবেগের দোলাচল খেলা করছে তার মনে।

বিপিএলে শুরুতে সিলেট স্টাইকার্সের হয়ে খেলার ব্যাপারে আলাপ চলছিল রবিনের। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে দলে নিয়েছে ঢাকা ডমিনেটর্স। দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন এখানে খেলতে আসার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল তার,  'আমি খুবই খুশি। যখন জানতে পারলাম বিপিএল খেলব সেটা ছিল ভীষণ রোমাঞ্চকর। এটা এমন একটা লিগ যেখানে খেলতে আমি মুখিয়ে ছিলাম অনেকদিন ধরে।'

রবিনের বাবা মৃদুল কান্তি দাসের জন্ম সিলেটের সুনামগঞ্জে। বেড়েও উঠেন সেখানে। পরে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। সেদেশে গিয়ে বিয়ে করে থিতু হন তিনি। ইংল্যান্ডেই জন্ম রবিন ও তার ভাই জনাথন দাসের। বড় ভাই জনাথন ক্রিকেট খেলতেন, খেলেছেন সুনামগঞ্জ জেলা দলেও। তবে এরপর বেশি দূর এগুতে পারেননি।

ডানহাতি ব্যাটার রবিন অবশ্য ছুটছেন বেশ ভালো গতিতে। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে থিতু হয়ে এসেছেন  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে। পারিবারিক সূত্রে বাংলাদেশে আগেও এসেছেন রবিন। তবে এবারের যাত্রাটা তার কাছে অন্যরকম আবেগের,  'বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের খুব কাছে কারণ এটা আমার বাবার দেশ। এখানে পরিবারের অনেকেই থাকেন। আমি এখানে অনেক এসেছি। এবার খেলতে এলাম। বাংলাদেশের মূল ধারার ক্রিকেটে খেলতে আসায় আমার পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে গর্বিত। কারণ এই দেশটাকে আমরা ভালোবাসি।'

মূলত আগ্রাসী ব্যাটার হিসেবে পরিচিতি ২০ পেরুনো রবিনের। সম্প্রতি রয়্যাল লন্ডন কাপে দেখিয়েছেন ঝলক।  ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটার নিয়মিত অনুসরণ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশেষ করে তার ভালো লাগে লিটন দাসের ব্যাটিং। এবার বিপিএলে লিটনের সঙ্গেও আলাপ করতে অপেক্ষায় রবিন,  'আমার প্রিয় ক্রিকেটার লিটন দাস। সে গত বছর সব সংস্করণে ভীষণ সফল ছিল। আমার মনে হয় সে অবিশ্বাস্য খেলোয়াড়। তার খেলা দেখতে খুব ভালো লাগে। এখনো তাকে দেখিনি। দেখা যাক কোন সময় দেখা হলে কথা বলতে  হবে।'

রবিনের আপাতত চ্যালেঞ্জ মাঠে নামা। ঢাকার একাদশে ঠাঁই পেলেও এখানকার কন্ডিশন তার জন্য খুব অনুকূল হওয়ার কথা না। কিন্তু রবিন মানসিকভাবে প্রস্তুত আছেন,   'আমি সব সময় প্রস্তুত থাকি। কোন একটা নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টের জন্য নয়। নিজেকে বরাবর তৈরি রাখি। কন্ডিশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপর নির্ভর করে আপনি কতটা চতুর (স্মার্ট) ক্রিকেটার। মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা থাকা আজকাল খুব দরকার।'

'উইকেট মন্থর হলে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই থাকে। এটা যেহেতু নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেশি চিন্তা না করাই ভালো। কেবল এটা সামলানোর মানসিকতা রাখবে হবে, এটুকুই।'

ঢাকায় রবিন সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেনদের। দলটির কোচ হিসেবে আছেন শ্রীলঙ্কান চামিন্দা ভাস। অনেকের সঙ্গেই রবিনের প্রথম আলাপ, নতুন পরিবেশে অবশ্য বেশ স্বস্তিতে তিনি,  'আমি কোচদের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। পরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হলো। সবাই খুব আন্তরিকভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমার সম্পর্কে তারা অনেক কিছু জানতে চাইল। দলের আবহ খুব ভালো লেগেছে।'

গত জুনে লর্ডস টেস্টে বাড়তি সদস্য হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে থাকার। কিছু সময়ের জন্য ম্যাথু পটসের বদলি হিসেবে ফিল্ডিংয়েও নেমেছিলেন তিনি, সেই অভিজ্ঞতা তাকে করেছে ঋদ্ধ,  'এটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ছিল। একটা টেস্ট দলের অংশ হতে পারা। তাদের কাছ থেকে অনেক শিখেছি। লর্ডসের টেস্ট ম্যাচের আবহ আমাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।'

ব্রিটিশ বাংলাদেশি হওয়ায় রবিনের সামনে দুই দেশের হয়ে খেলার সুযোগ আছে। তবে বাবার দেশ নয়, রবিনের প্রথম ইচ্ছা ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে চাপানোর। সেই লক্ষ্য যেতে অনেক উঁচুতে যেতে চান এই তরুণ,  'আমি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে চাই। সেটা অবশ্যই কঠিন চ্যালেঞ্জ। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে গেলে অনেক উঁচুতে উঠতে হবে। আমি সেই উচ্চতায় উঠতে চাই, সেটাই আমার লক্ষ্য। সেজন্য অনেক কিছু শেখার মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

9h ago