বাজার খরচের হিসাব মেলানোই দায়

রাজধানীর কারওয়ান বাজার। ছবি:স্টার

কারওয়ান বাজারে সাদা রঙের একটি থলি হাতে সবজির দোকানগুলোতে ঘুরতে দেখা গেল অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আব্দুস সাত্তারকে (ছদ্ম নাম)। বেশ খানিক্ষণ ঘোরাঘুরি করে একটি দোকান থেকে ২৫ টাকায় আধাকেজি গাজর কিনতে দেখা গেল তাকে। পরে আরও ৩টি দোকান ঘুরে ৩০ টাকায় একটি বাঁধাকপি কিনলেন তিনি।

পরে পেঁপে, শিম ও টমেটো কেনার সময়েও দোকানদারের সঙ্গে বেশ দরাদরি করতে দেখা গেল আব্দুস সাত্তারকে। শেষের দিকে ডিম কিনতে গিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। রীতিমতো চিৎকার করেই বলে উঠলেন, '১০ দিন আগে একই জায়গা থেকে বাজার করে গেলাম। আজকে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। কীভাবে হিসাব মেলাবো?'

গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দোকানগুলো ঘুরে আব্দুস সাত্তারের এই কথার সত্যতা মিলল। বোঝা গেল তার উত্তেজিত হওয়ার কারণ।

দেখা গেল, শীতের এই ভরা মৌসুমে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে। মাছ, মাংস ও ডিমের দামও চড়ছে।

এদিন কারওয়ান বাজারে আকার ও জাতভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া গাজর ও শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, মূলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। করলা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা এবং বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এর বাইরে নতুন আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এবং কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কারওয়ান বাজারে সবজির দোকান। ছবি: স্টার

গত ৩০ ডিসেম্বর একই বাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, গাজর ৪০ টাকায়, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, মূলা ১৫ থেকে ২০ টাকায়, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায় ও করলা ৪০ টাকায়। এ ছাড়া নতুন আলুর দাম ছিল ২০ টাকা।

শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির এই বাড়তি দাম নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে আকলিমা নামের একজন ক্রেতা বলেন, 'কী কারণে এই সময়ে সবজির দাম এতটা বেড়েছে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা ঠিকঠাক কিছু বলতে পারছেন না। তাদের মুখে একটাই মুখস্ত বুলি— বাজারে সরবরাহ কম।'

সবজি বিক্রেতা মো. রনি বলেন, 'বাজারে সরবরাহ কম। কুয়াশার কারণে অনেক সবজির গাড়ি সময় মতো আসতে পারছে না। আমাদেরকেও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই সবজির দাম ৮ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে একটু বেড়েছে।'

কারওয়ান বাজারে গতকাল প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। অথচ ১০ দিন আগে এই মরিচের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এ ব্যাপারে মরিচ বিক্রেতা নজরুল ইসলামের ভাষ্য, 'কাঁচামরিচের দাম আরও বাড়বে। কৃষকরা এখন আর কম দামে মরিচ বিক্রি করতে চান না। তারা কাঁচামরিচ শুকিয়ে বিক্রি করলে অনেক বেশি দাম পান। তা ছাড়া অনেকে এখন মরিচ খেতে ইরি ধান লাগাবেন। তাই মরিচের খেত তুলে দিচ্ছেন। এ কারণে দাম বেড়েছে।'

পেঁয়াজ বিক্রেতা আনিসুর রহমানও জানালেন, বাজারে এখন পেঁয়াজসহ আদা, রসুন সবকিছুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারে মাংসের দোকান। ছবি: স্টার

বেড়েছে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম

আজ কারওয়ান বাজারে প্রতি ডজন মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকায়। এদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ টাকা ও লেয়ার মুরগির দাম ছিল ২৬০ টাকা।

১০ দিন আগে কারওয়ান বাজারে প্রতি ডজন মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। হাঁসের ডিমের দাম ছিল ১৯০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম একই থাকলেও লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কম ছিল।

এদিকে ১০ দিনের ব্যবধানে খাসির মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে ডিমের দোকান। ছবি: স্টার

প্রতি কেজি তেলাপিয়া, পাঙাস ও রুই মাছ ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ১৫০ থেকে ২০০ এবং ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।

জনপ্রিয় খাঁসির মাংসের দোকানের স্বত্তাধিবারী জালাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে এ কারণেই খাঁসির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ কম আছে। তাই প্রতি কেজির মাংসের দাম ২ থেকে ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Students to resist AL event today

The student movement against discrimination will hold a mass gathering at Zero Point in the capital’s Gulistan today, demanding trial of the Awami League.

3h ago