মহামারিতে ঝরে পড়েছে সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী

মহামারিতে ঝরে পড়েছে সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী
ছবি: এমরান হোসেন

কোভিড মহামারি বড় ধরনের আঘাত হেনেছে দেশের শিক্ষাখাতে। সরকারি তথ্য অনুসারে, মহামারির কারণে ঝরে পড়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষার্থী। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মোট ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৯ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। 

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যুরো অব অব এডুকেশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (ব্যানবেইস) ও ডাইরেকটরেট অব প্রাইমারি এডুকেশনের তথ্য অনুসারে, একই সময়ে মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়েছে ৬২ হাজার ১০৪ জন এবং প্রাথমিকে ঝরে পড়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৯ জন শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম এ মান্নান এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার প্রধান কারণ হলো, মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট।'

ইউনেস্কো গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিংয়ের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিক্ষার জন্য মোট খরচের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বহন করতে হয় পরিবারকে। 

অধ্যাপক মান্নান বলেন, 'মহামারি চলাকালে অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু (ছাত্র) অভিবাসী শ্রমিক হিসাবে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।'

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী টিউশনি করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ মেটাতো। কিন্তু মহামারির সময় তারা আয়ের ওই উৎসটি হারিয়ে ফেলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দেয়।

কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আংশিকভাবে পুনরায় চালু করা হয়। মহামারির কারণে বাংলাদেশে ৫৪৩ দিনের জন্য স্কুল বন্ধ ছিল। যেটা বিশ্বে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা দেশেগুলোর মধ্যে একটি। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে জমা দেওয়া ইউজিসি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ছিল ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬ জন এবং ২০২১ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১৭ জন। 

ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ২ জাহার ১২৬ জন এবং ২০২১ সালে এসে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৯ লাখ ২২ জন। 

মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ৬২ হাজার ১০৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ হাজার ৮৩৮ জন ছাত্রী।

২০২১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক শুমারি অনুযায়ী, ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৯১ জন  এবং পরের বছর সংখ্যাটি এসে দাঁড়ায় ২ কোটি ১ লাখ ৯৭২ জনে। পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ছাত্রী।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএসএইচই) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসের জন্য মহামারিকে দায়ী করেছেন। 

অবশ্য তিনি আরও বলেন, 'অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরে আসছে। এ ছাড়া আশা করছেন ২০২২ সালের সরকারি প্রতিবেদনে সেটার প্রতিফলন ঘটবে। 

তিনি আরও বলেন, 'মহামারি চলাকালীন অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।'

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীরও শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসের জন্য মহামারিকে দায়ী করেন।

২০২২ সালের আগস্টে প্রকাশিত ডিএসএইচই'র প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তত ৪৭ হাজার ৪১৪ জন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে এবং ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৭০৬ শিশুকে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়েছে। তথ্যটি দেশের ২০ হাজার ৯৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১১ হাজার ৭৬৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইইআর) এর অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ''মহামারি চলাকালে যাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চাকরি নিতে হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই জেনেছে, তারা শ্রেণিকক্ষে যা শিখেছিল তা 'বাস্তব জীবনে' খুব একটা কাজে আসেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার্থীরা হিসাব করে দেখেছে, সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেলে তাদের কী পরিমাণ সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হবে; যেটা তাদের চাকরি ক্ষেত্রে নাও লাগতে পারে।'

''একটি 'জীবনমুখী' শিক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত', যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়কে আরও নমনীয় করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উচিত তাদের প্রণোদনা দেওয়া।'

এ ছাড়া তাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

3h ago