প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবের যত অমিল
২০১২ সালের নভেম্বরে সরকার যখন রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের মধ্যে সাড়ে ২০ কিলোমিটার সড়ক বাস র্যাপিড ট্রানজিট করিডোরে রূপান্তরের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে, তখন ওই রুটে প্রশস্ত ও আরামদায়ক আর্টিকুলেটেড বাস চালানোর পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু, ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ঢাকা বিআরটি) পরে ওই রুটে বৈদ্যুতিক বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৩০টি বৈদ্যুতিক বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে।
তবে, প্রতিষ্ঠানটি আবারও পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ১৩৭টি ডিজেলচালিত এসি বাস কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে এবং আগস্টে বিআরটি সার্ভিস শুরু করতে চায়।
যদি আগস্টের মধ্যে তারা সার্ভিস শুরু করতে পারে, তাতেও তারা প্রকল্পের মূল সময়সীমার চেয়ে সাড়ে ৬ বছরেরও বেশি সময় পিছিয়ে থাকবে। আবার যেহেতু তারা আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপারেটর নিয়োগ দিতে পারছে না, তাই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনকে (বিআরটিসি) এসব বাস পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
তা ছাড়া, ২৫টি স্টেশনের সবগুলোই শুরুতে স্বয়ংক্রিয় টিকিট বিক্রির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হচ্ছে না। অর্থাৎ বিআরটি সেবাটি চালুর সময় তা 'আধা-স্বয়ংক্রিয়' হবে। এ ছাড়াও, ফ্লাইওভারের একটি অংশ শুরুতে পুরোপুরি প্রস্তুত নাও হতে পারে।
ঢাকা বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশা করছি জুলাই বা আগস্টের মধ্যে প্রথম লটে ৫০টি বাস আসবে। পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে আরও ২টি চালানে বাকি বাস চলে আসবে।'
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি লাইন-৩ প্রকৃতপক্ষে বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত বিআরটি নির্মাণের মূল পরিকল্পনার সম্প্রসারণ ছিল।
তবে, বিআরটি বর্তমান অংশ বাস্তবায়নের সময় নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে অন্তত মহাখালী পর্যন্ত এই লাইনটি সম্প্রসারণের আরেকটি পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আংশিক কার্যকরী বিআরটি প্রত্যাশিত মাত্রায় যানজট কমাতে পারবে না।
পিক আওয়ারে বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে সেবা দিতে বিআরটি সেবার আওতায় আর্টিকুলেটেড বা বাই-আর্টিকুলেটেড বাস ব্যবহার করা হয় উল্লেখ করে পরিবহন বিষেশজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, 'এই ধরনের বাস পরিবহন পরিচালনাকে আরও কার্যকর করে তোলে।'
এ ছাড়া, এসব বাস চালানোর জন্য অল্প সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।
'যেহেতু আমরা বিআরটি সেবার ধরনে পরিবর্তন আনছি, তাই আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না', বলেন তিনি।
এ ছাড়া, আর্টিকুলেটেড বাসের পরিবর্তে সাধারণ বাস বাস চলাচলে অপারেটিং ব্যয় বাড়বে এবং ব্যবস্থাপনায়ও সমস্যা সৃষ্টি হবে।
আনুষ্ঠানিকভাবে 'বৃহত্তর ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট' নামে পরিচিত এই প্রকল্পটি মূলত ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
জমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি পরিষেবা স্থানান্তর, নকশা পরিবর্তন, ঠিকাদারদের অর্থের অভাব এবং মহামারির কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছিল। তা ছাড়া, প্রকল্পের পূর্ত কাজ দুর্ঘটনার কারণে ২ বার স্থগিত করা হয়েছিল।
ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং সময়সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
এদিকে প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, বিশেষ করে বর্ষাকালে।
সাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রানজিট চালু হলে গাজীপুর থেকে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন যাত্রীরা। এখন যানজটের কারণে গাজীপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন BRT line-3: Promises falling flat
Comments