নতুন আলোর স্বপ্ন দেখানো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ফেলুদা, সত্যজিৎ রায়,
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন নতুন আলোর স্বপ্ন দেখাতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন স্বপ্ন দেখানো আলোকিত অভিনয়শিল্পী। তার হাতে ছিলে যেন বাংলা চলচ্চিত্রের আলোকবর্তিকা। মানুষের কাছে অপু, ফেলুদা হয়ে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন বরেণ্য এই অভিনেতা।

আজ এই কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

১৯৫৮ সালের ৯ আগস্ট সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের 'নতুন জন্ম' হয়। সেদিন তিনি সত্যজিৎ রায়ের ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়িয়েছিলেন 'অপু' হয়ে।

দর্শক নন্দিত এই অভিনেতা প্রথম অভিনয় করেছিলেন সত্যজিতের 'অপুর সংসার' চলচ্চিত্রে। এরপর একে একে সত্যজিতের 'দেবী', 'তিন কন্যা', 'অভিযান', 'চারুলতা', 'কাপুরুষ', 'অরণ্যের দিনরাত্রি', 'অশনি সংকেত', 'ঘরে বাইরে', 'সোনার কেল্লা', 'হীরক রাজার দেশে', 'জয়বাবা ফেলুনাথ', 'গণ শত্রু' ও 'শাখা প্রশাখা' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

শুধু সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনা নয় তপন সিনহা, মৃণাল সেন থেকে শুরু করে তার পরের প্রজন্ম ও নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন সৌমিত্র।

ঋতুপর্ণ ঘোষের 'অসুখ', সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'হেমলক সোসাইটি', গৌতম ঘোষের 'দেখা' ও 'আবার অরণ্যে', নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের 'বেলা শেষে' ও 'পোস্ত' এবং অতনু ঘোষের 'ময়ূরাক্ষী' সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।

দর্শকের আবেগের এক নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নানান চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে বারবার ভেঙেছেন ও গড়েছেন। তার আলোচিত সিনেমার অন্যতম 'অপুর সংসার'। এটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৯ সালে। এর মাধ্যমেই বড়পর্দায় হাতেখড়ি হয়েছিল তার। সত্যজিতের 'অশনি সংকেত' মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এই সিনেমাতে তার সঙ্গে ববিতা অভিনয় করেছিলেন।

১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া 'চারুলতা'য় সৌমিত্রের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। 'জয় বাবা ফেলুনাথ' মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৮ সালে। দিনেন গুপ্ত পরিচালিত 'বসন্ত বিলাপ' মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন অপর্ণা সেন। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পাওয়া অজয় কর পরিচালিত 'সাত পাকে বাঁধা'য় তার বিপরীতে ছিলেন সুচিত্রা সেন। সত্যজিৎ পরিচালিত 'সোনার কেল্লা' মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৮ সালে। এতে সৌমিত্রকে দেখা যায় ফেলুদার চরিত্রে। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া 'দেবদাস'-এ তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার বিপরীতে ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী।

১৯৮০ সালে মুক্তি পায় 'হীরক রাজার দেশে'। 'গুপী বাঘা' সিরিজের এই গল্পে তাকে বিশেষ ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও মঞ্চ ছিল তার প্রাণের জায়গা। তিনি মঞ্চেই শ্বাস নিতেন। মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। মঞ্চে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম- 'নাম জীবন', 'রাজকুমার', 'ফেরা', 'নীলকণ্ঠ', 'ঘটক বিদায়', 'ন্যায় মূর্তি', 'টিকটিকি' ও 'রাজা লিয়ার'।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'দেনাপাওনা' ও 'স্ত্রীর পত্র' পরিচালনা করেছিলেন সৌমিত্র। কলকাতার মঞ্চকে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।

অভিনেতা, নায়ক ও আবৃত্তিকারের ভুবন ছাড়িয়ে একজন জীবনের কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 'এক্ষণ' নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন, আছে কবিতা সমগ্রও।

তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। 'অন্তর্ধান' সিনেমার জন্য পেয়েছিলেন বিশেষ জুরি সম্মান। ৯ বছর পর একই সম্মান পান 'দেখা' চলচ্চিত্রের জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হতে তার সময় লেগেছিল আরও ১৫ বছর।

অভিনয়জীবনের ৫ দশক পেরিয়ে ২০০৬ সালে 'পদক্ষেপ' সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হয়েছিলেন সৌমিত্র। ২০১২ সালে পেয়েছিলেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ২০০৪ সালে তাকে 'পদ্মভূষণ'-এ ভূষিত করা হয়। সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পালক তার মুকুটে যোগ হয়েছিল ২০১২ সালে।

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর টানা ৪০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ৮৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বরেণ্য এই অভিনেতা।

Comments

The Daily Star  | English

Money laundering: NBR traces Tk 40,000cr in assets abroad

The National Board of Revenue has found assets worth nearly Tk 40,000 crore in five countries which it believes were bought with money laundered from Bangladesh, said the Chief Adviser’s Office yesterday.

8h ago