শান্তকে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া মনে করেন মাশরাফি

mashrafe mortaza
মাশরাফি বিন মর্তুজার মতে নাজমুল হোসেন শান্ত দেশের ক্রিকেটে অনেক কিছু দিবেন। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কিছুর মতো ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারও সারাক্ষণই থাকে কাঁটাছেড়ার নিচে। নিখাদ ক্রিকেটীয় সমালোচনার সীমারেখা ছাড়িয়ে যা অনেক সময় রূপ নেয় ব্যক্তি আক্রমণে। চটকদার সব ট্রলের শিকার হয়ে চাপে থাকতে হয় ক্রিকেটারদের। সাম্প্রতিক সময়ে নির্মম বিদ্রূপের শিকার হওয়া দুই ক্রিকেটারের নাম লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন নিজের ব্যাটের ঝলকে তিক্ততা দূরে ঠেলে এখন জ্বলছেন উজ্জ্বল তারা হয়ে। সম্প্রতি ব্যাটে রান পেলেও শান্ত এখনো মানুষের মন যোগাতে পারেননি। তবে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়কের মতে, শক্ত মানসিকতার শান্তর কাছ থেকে আগামীতে অনেক কিছুই পাবে দেশের ক্রিকেট।

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পরই শান্তকে নিয়ে বাড়ে সমালোচনার স্রোত। তার ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। বিশ্বকাপে যদিও দলের হয়ে দুই ফিফটিতে তিনি করেন সর্বোচ্চ রান। তবে মন্থর খেলার ধরনে কুড়ি ওভারের চাহিদা তার ব্যাটে মিটছে কিনা, সেই সমালোচনা হতে থাকে তীব্র।

অন্য সংস্করণেও শান্তর ব্যাটিং চলে আসে আতস কাঁচের নিচে। প্রতিটি ব্যর্থতার পর নানান রকম ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হতে থাকেন এই বাঁহাতি ওপেনার।

চলমান বিপিএলেও শান্ত টেনে এনেছেন তার বিশ্বকাপের ছন্দ। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৫৬.২০ গড় আর ১১৪.২২ স্ট্রাইক রেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৮১ রান করেছেন তিনি। সর্বশেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৬৬ বলে অপরাজিত ৮৯ রান করে এসে গণমাধ্যমকে জানান, মানুষের বিদ্রূপকে তিনি পাত্তা না দিলেও তাতে আক্রান্ত হচ্ছে তার পরিবার।

এবার বিপিএলেও এমনটা চলতে থাকায় সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফি তাকে দিয়েছেন ভরসার হাত, যুগিয়েছেন প্রেরণা।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার শান্তর সম্ভাবনা আর মানুষের ট্রল নিয়ে কথা বলেন মাশরাফি, 'যদি বিশ্বকাপ দেখেন, শান্ত কিন্তু পুরো দেশের, আমাদের সবার বিপক্ষে গিয়ে প্রায় দুইশ রান করে এসেছে। পরে আবার স্ট্রাগল করেছে, এখন আবার রান করছে। শান্তকে কিছুটা এসবের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমি সবসময় যেটা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্ট্রাগলিং পার্ট থাকতে পারে কিছুদিন। মানসিকভাবে শক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যেটা শান্তর ক্ষেত্রে আমি দেখেছি যে, লিটনের মতোই বাইরের জিনিসগুলো ওকে বদার করে না। সেইক্ষেত্রে আমার কেন জানি বিশ্বাস হয় যে এই ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। আমি বিশ্বাস করি, এই ছেলেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিতে পারবে।'

গত বছর এক আলোচনায় মাশরাফি বলেছিলেন, তাদের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সোশ্যাল মিডিয়া থাকলে অনেক কিছুই হতো ভিন্নরকম, অনেকের ক্যারিয়ারই হতো না লম্বা। সেই কথাই আবার মনে করিয়ে দিলেন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক,  'বাংলাদেশে হাতেগোনা একজন-দুজন বা সর্বোচ্চ তিনজন ক্রিকেটার পেতে পারেন, যারা এই ধরনের আক্রমণ ছাড়াই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে লম্বা সময় টিকে থেকেছে। ওই সময় যদি সোশাল মিডিয়া থাকত (এখনকার মতো), তামিম তাহলে তামিম হতে পারত না। মুশফিক আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। মাহমুদউল্লাহও একই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি দেখেন, যারা ১০-১২ বছর খেলেছে, এভাবেই (পারফরম্যান্সের উঠা নামার মধ্য দিয়ে) থিতু হয়েছে।'

২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যাটিং ব্যর্থতায় চরম ট্রলের শিকার হন লিটন। তার ধর্ম নিয়েও করা হয় আক্রমণ। এমনকি বিভিন্ন পণ্য বিক্রির পেজে তার প্রতি রানের জন্য ঘোষণা করা হয় ছাড়। মাশরাফির মতে, লিটন সেসবের মধ্যে টিকে থেকে ধারাবাহিক সাফল্য দিয়ে এখন প্রমাণ করেছেন কত বড় ব্যাটার তিনি। তবে আবার ব্যর্থ হলে তাকেও ফের সেই তিক্ততায় পড়তে হতে পারে, 'লিটনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস। তাকে তার ধর্ম টেনেও অনেক কিছু বলা হয়েছে একটা সময়। এইসব চলেছেই। এসবের ভেতর দিয়েই ক্রিকেটারদের খেলতে হবে, কিছু করার নেই। কারণ আপনি তো আরেকজনকে বদলাতে পারবেন না। যেটা করতে পারবেন, তা হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এসব থেকে দূরে থাকা। কারণ, এখানে শুধু যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়েই হয়, তা নয়। যখন যাকে মনে হয়… দুটি কমেন্ট করে গেল, দুটি লাইক পেল…। এই দেশে লোকে নেতিবাচকগুলোই বেশি পিক করে, পজিটিভ কিছু লিখে তো ফেইসবুকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না। এজন্য পজিটিভ জিনিসগুলো ফেইসবুকে কম পাবেন, ব্যক্তি আক্রমণের ক্ষেত্রে।'

'লিটনের কিন্তু এটাই হয়েছে। আজকে সবাই ওকে বাহবা দিচ্ছে। শুরুতে তো সোশাল মিডিয়ায় আরও জঘন্য অবস্থায় ছিল ও। আজকে বাংলাদেশ দলে থিতু হয়েছে। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখন বিশ্বাস করতাম, লিটনের যে বেসিকস আছে…(বড় কিছু করবে) আজকে অনেকেই বলেন যে, লিটন যতক্ষণ ব্যাটিং করে, টিভির সামনে থেকে উঠতে ইচ্ছে হয় না… কিন্তু ওই সময় (চণ্ডিকা) হাথুরুসিংহে ছিলেন, আমি অধিনায়ক ছিলাম, আমরা বিশ্বাস করতাম যে এই ছেলেটা বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ। আজকে লিটন তা প্রমাণ করেছে। কিন্তু কে জানে, কালকে লিটন আবার খারাপ খেললে একই জিনিস আবার হতে পারে। তবে লিটন এমন একজন, আমাদের বিশ্বাস যে দীর্ঘদিন পর একজন ওপেনার পেয়েছি, যে এখন যারা সিনিয়র হয়েছে, তারা যাওয়ার পর লিটন ওই জায়গাটা কাভার করতে পারবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Israel wants to take control of all of Gaza: Netanyahu

The Israel PM says Israel intends to take military control of all of Gaza and will eventually hand it over to armed forces

1h ago