গাড়িতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশুর মৃত্যু, অস্ট্রেলিয়া জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া

সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমে গ্লেনফিল্ড রেলওয়ে প্যারেডে পার্ক করা একটি উত্তপ্ত গাড়িতে প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকে থাকার পর মারা যায় বাংলাদেশি ৩ বছর বয়সী এক শিশু। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমে গ্লেনফিল্ড রেলওয়ে প্যারেডে পার্ক করা একটি উত্তপ্ত গাড়িতে প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকে থাকার পর মারা যায় বাংলাদেশি ৩ বছর বয়সী এক শিশু।

এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। দেশটির প্রধান সংবাদপত্রগুলো গত ২ দিন ধরে বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যু নিয়ে প্রকাশ করছে বিভিন্ন সংবাদ, সম্পাদকীয়, ফিচার ও সাক্ষাৎকার। মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ব্রেকিং নিউজয়েও এখন বাংলাদেশি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু। মূলত আইনগত বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে এসব লেখায়।

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যের ফৌজদারি আইন বলছে, গাড়িতে ১২ বছরের নিচের বয়সী কোনো শিশুকে ১ মিনিটের জন্যও একা রেখে যাওয়া ফৌজদারি অপরাধ।

কুইন্সল্যান্ডে, ফৌজদারি কোডের ৩৬৪ এ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ ১২ বছরের কম বয়সী একটি শিশুকে অযৌক্তিক সময়ের জন্য রেখে যান তিনি একটি অপরাধ করেন৷ যার সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড।'

এটি প্রায় ১ দশক ধরে কুইন্সল্যান্ডের ফৌজদারি কোডে রয়েছে। আইন অনুযায়ী, পিতা/মাতা কেবল তখনই শাস্তি পেতে পারেন যদি তাদের অনুপস্থিতিতে সন্তান আহত বা অবহেলার শিকার হয়।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যে চিলড্রেন, ইয়ুথ অ্যান্ড ফ্যামিলি অ্যাক্ট ৪৯৪ ধারার অধীনে 'শিশুকে অযৌক্তিক রেখে যাওয়া অপরাধ।'আইনে বলা আছে, যার কাছে একটি শিশুর দায়িত্ব রয়েছে তিনি অবশ্যই শিশুটিকে ছেড়ে যাবেন না।

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ফ্যামিলি অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসের কোনো প্রকৃত আইন নেই তবে আইনজীবীরা বলছেন, কেউ সঠিক তত্ত্বাবধান ছাড়াই যদি কোনো শিশুকে গাড়িতে রেখে যান এবং তাতে শিশুটির সম্ভাব্য মানসিক বা শারীরিক ক্ষতি হয় তবে তা অবশ্যই অপরাধ।'

গাড়িতে বাংলাদেশি শিশু মারা যাবার পরই অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় গণমাধ্যম 'এবিসি নিউজ'তাদের ফেসবুকে পাঠকদের কাছে একটি প্রশ্ন জানতে চেয়েছে। প্রশ্নটি ছিল- আপনি একটি ছোট বাচ্চাকে গাড়ির পেছনে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন, আপনি এইমাত্র সার্ভোতে পেট্রোল ভরেছেন এবং ভেতরে গিয়ে অর্থ প্রদান করার সময় এসেছে। তখন বাচ্চাকে জাগিয়ে আপনার সঙ্গে নিয়ে আসবেন? নাকি ১ বা ২ মিনিটের জন্য তাকে গাড়িতে রেখে যাবেন?

এ প্রশ্নের জবাবে পাঠকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শিশুর বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ছেড়ে দিলেও মৃত্যুর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

শিশুটির পরিবার বলছে, শিশুর বাবা বড় ছেলেকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে শিশুটিকে চাইল্ড কেয়ারে নামাতে চেয়েছিল। কিন্তু শিশুটি ঘুমিয়ে গেলে তিনি ভেবেছিলেন, গাড়ির তেল ভরে নামিয়ে দেবেন কিন্তু তিনি শিশুর কথা ভুলে সরাসরি বাসায় চলে যান। সেখানে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন কাজে। শিশুটি গাড়িতেই ঘুমিয়ে থাকে। প্রায় ৬ ঘণ্টা পর শিশুর কথা মনে পড়ে তার। তিনি এসে শিশুকে অবচেতন অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেন।

পুলিশ ও প্যারামেডিক টিমের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিশুটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ওই সময় ওই এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা ছিল দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।

কিডসেফের নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টিন এরস্কাইন জানান, একটি গাড়ির ভেতরের তাপ মাত্র ১৫ মিনিটে বাইরের তাপমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ হয়। একটি শিশু দ্রুত ডিহাইড্রেট করে এবং তারা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক দ্রুত তাপ দ্বারা প্রভাবিত হয়।

এদিকে শিশুটি যেখানে মারা গিয়েছে সেখানে প্রতিবেশি ও পথচারীরা মোমবাতি, ফুল, খেলনা এবং তাদের অনুভূতি লিখে রেখে যাচ্ছেন।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

6h ago