মহামারি

যেভাবে বন্ধ হয়ে গেল ৬৪ এয়ারলাইন্স

মহামারিতে আলিতালিয়ার মতো পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এয়ারলাইন্সও বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স
মহামারিতে আলিতালিয়ার মতো পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এয়ারলাইন্সও বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি অন্য অনেক খাতের মতো উড্ডয়ন খাতকেও বড় আকারে প্রভাবিত করেছে। ২০২০ সালে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পরার পর করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে ৬৪ এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বেশিরভাগ বিমানবন্দরে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে বিমানবন্দরগুলো শূন্য হতে শুরু করে এবং কমতে থাকে উড়োজাহাজ সংস্থার রাজস্ব।

তবে বিশ্লেষকরা ভেবেছিলেন ২০২৩ সালে উড়োজাহাজ ও পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।

কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু উড়োজাহাজ সংস্থা দেউলিয়া হয়ে পড়ছে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বুকিং সংস্থা ফ্লাইট সেন্টারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে উড়োজাহাজের ভাড়া গড়ে ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে কমছে যাত্রীর সংখ্যা আর চাপের মুখে পড়েছে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।

আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ ভ্রমণ সংস্থার টিকেটিং ডাটাবেজ থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে ফরোয়ার্ডকিজ নামের এক সংস্থা। তাদের মতে, ২০২৩ এর প্রথম প্রান্তিকে সারা বিশ্বে ফ্লাইট বুকিং এর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ কম।

এর মাঝে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য (৫ শতাংশ কম), উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা (৯ শতাংশ), ইউরোপ (১৫ শতাংশ) ও আফ্রিকা (১৮ শতাংশ)

উড়োজাহাজ সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে এবারের মহামারি সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ বা জঙ্গি হামলার মতো বিষয়গুলোর চেয়ে উড্ডয়ন খাতকে বেশি নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করেছে।

উড্ডয়ন খাত সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট অলপ্লেন ডট টিভির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর থেকে অন্তত ৬৪ উড়োজাহাজ সংস্থা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।

কিছু সংস্থা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার পর পুনরুজ্জীবিত হয়েছে অথবা নাম বদলে নতুন করে বাজারে এসেছে। তবে বেশিরভাগই চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।

গড়পড়তা যাত্রীর কাছে জেট টাইম, নকস্কুট বা ফ্লাই মাই স্কাইর নাম অপরিচিত মনে হলেও, বেশ কিছু বড় উড়োজাহাজ সংস্থাও বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ইতালির সাবেক রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা আলিতালিয়া (বর্তমানে এই ভূমিকায় আছে আইটিএ এয়ারওয়েজ)। এছাড়াও, ২০২১ সালে নামিবিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার নামিবিয়া তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। 

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য 'হল' ইতালির সাবেক

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ এ যথাক্রমে ৩১, ১৯ ও ১২টি উড়োজাহজ সংস্থা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে।

তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা প্রভাবিত হয়নি।

এশিয়া বা ইউরোপে অসংখ্য উড়োজাহাজ সংস্থা রয়েছে, যার মধ্যে পুরনো ও স্টার্টআপ, উভয়ই রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উড্ডয়ন খাত ৪ প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ—আমেরিকান, ডেল্টা, সাউথওয়েস্ট ও ইউনাইটেড।

যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও স্পেনের কাতালোনিয়ার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উড়োজাহাজ পরিবহণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পেরে সুআউ-সানচেজ সিএনএনকে জানান, মহামারির পর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো অনুসরণ করার চেষ্টা করছে।

তিনি জানান, উড়োজাহাজ সংস্থার দেউলিয়া হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অচিরেই ছোট ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলো বড় উড়োজাহাজ সংস্থার পতাকার নিচে একীভূত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতির উদ্রেক হবে। ইউরোপে ইতোমধ্যে এয়ার লিংগাস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, আইবেরিয়া, লেভেল ও ভুয়েলিং এর মালিকানা নিয়েছে আইএইজি।

২০২১ সালে বন্ধ হয়ে যায় এয়ার নামিবিয়ার কার্যক্রম। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০২১ সালে বন্ধ হয়ে যায় এয়ার নামিবিয়ার কার্যক্রম। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সানচেজের মতে আগামী কয়েক বছর ভাড়া বাড়তে থাকবে এবং তা গড়ে ২৫ শতাংশ হতে পারে।

উড্ডয়ন সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ফ্লাইটগ্লোবালের কৌশলগত কনটেন্টে প্রধান মুরডো মরিসন জানান, করোনাভাইরাস মহামারির গুরুতর পরিস্থিতির উন্নয়ন হওয়ায় চাহিদার তুলনায় ফ্লাইটের সরবরাহ কম। এ কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় দূরপাল্লার ফ্লাইটের ভাড়া অনেক বেশি।

তবে এ ধরনের পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে এবং ফ্লাইটের ভাড়া কমে আসবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। ২০২৩ সালে আর তেমন কোনো বড় উড়োজাহাজ সংস্থা দেউলিয়া হবে না বলেও তিনি প্রত্যাশা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago