একুশে পদক পাওয়ার পর মাসুদ আলী খান

‘সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ স্ত্রীর কাছে’

অভিনেতা মাসুদ আলী খান
মাসুদ আলী খান। ছবি: শাহ আলম সাজু/স্টার

মাসুদ আলী খান। খ্যাতিমান অভিনেতা। এদেশের প্রথম নাটকের দল 'ড্রামা সার্কেল'র সদস্য তিনি। টেলিভিশনের অনেক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্র, বেতার ও মঞ্চে অভিনয় করেছেন দীর্ঘ দিন।

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন গুণী এই অভিনেতা। পুরস্কার পাওয়ার সংবাদ শোনার পর গতকাল রোববার গ্রিন রোডের বাসায় কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

একুশে পদকের জন্য অভিনন্দন। সংবাদটি প্রথম শোনার পর কার কথা মনে পড়েছে?

সত্যি বলতে আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ স্ত্রীর কাছে। বহুকাল থেকে আমাকে 'সহ্য' করে আসছেন। দিনের পর দিন শুটিং থেকে অনেক দেরি করে ফিরতাম। সেই বিয়ের পর থেকেই। শুটিং নিয়মিত থাকায় বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হতো। আমার জন্য ভাত গরম করে রাখা, দরজা খুলে দেওয়া—কত ত্যাগ করেছেন। তার কাছে বেশি কৃতজ্ঞ। সংবাদটি শোনার পর তার কথা সবার আগে মনে পড়েছে। সংবাদটি যখন জানানো হয় তখন তিনি বাসায় ছিলেন না, ডাক্তারের কাছে ছিলেন।

অবশ্যই মা-বাবার কথাও মনে পড়ছে। তারা কখনো গানে বাধা দেননি। আমার ছেলে পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে আছে। তাদের কথাও মনে পড়েছে।

দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় আপনার একুশে পদক পাওয়ার বিষয়ে লেখা হয়েছে, জানতেন?

ডেইলি স্টারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তোমার কাছেও। তুমি লেখালেখি করেছ। কাউকে প্রস্তাব করতে হয় এই পুরস্কারের জন্য। হয়ত এতদিন আমার কথা কারো মনে হয়নি। তোমরা লেখালেখি করেছ। সেজন্য নাম প্রস্তাব করেছে। তারপর সরকার এটা দিয়েছে।

পুরস্কার পাওয়ার সংবাদ জানার পর আপনার একান্ত অনুভূতি?

আমি খুশি। কৃতজ্ঞ সবার কাছে। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সহকর্মীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। আমার নাম জানার পর এক এক করে অনেক সহকর্মী ফোন করেছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন, ভালো লাগছে।

অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনার প্রিয় লেখক কে বা কারা?

শীর্ষেন্দু। তারপর সুনীল। এক নম্বর শীর্ষেন্দু। একটি বই পড়া শুরু করলে শেষ না করে থামতাম না। এরকমই পড়ার নেশা ছিল। বয়সের কারণে এখন আর সেভাবে পড়া হয় না। আরও অনেকেই প্রিয় লেখক হিসেবে আছেন।

অভিনয়ের ইচ্ছা কবে জেগেছিল?

ছেলেবেলায় মানুষ কত কী হতে চায়। আমার মধ্যে ওরকম কিছু ছিল না। তখন ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ি। বাবা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ছবি দেখতে। সেই সময়ে ঢাকায় এসেছিলাম চাচার সঙ্গে। ঢাকায় এসে 'জীবন মরণ' সিনেমা দেখি। তখন তো ঢাকা এরকম ছিল না। ওই যে সিনেমা দেখলাম ছেলেবেলায়, তারপর থেকেই মনে গেঁথে গেল। অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা তখনই জাগে। তারপর স্কুলে নাটক করি। আরও পরে ঢাকায় এসে অভিনয় শুরু করি। একটা জীবন কেটে গেল অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে।

জীবন নিয়ে ভাবনা?

জীবন এরকমই। যদি পারতাম অভিনয়ই করতাম। চাকরি না করে শুধু অভিনয়ই করতাম। তখন তো অভিনয় করে সংসার চালানো কঠিন ছিল।

প্রথম কোন সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন, মনে আছে?

'নদী ও নারী' সিনেমায়। কাজী খালেক সাহেব ছিলেন। নায়িকা ছিলেন ড. রওশন আরা। পদ্মার চরে শুটিং হয়েছিল। খালি খায়ে শুটিং করার স্মৃতি মনে পড়ে। নিজামতউল্লাহ ছিলেন। কত স্মৃতি! পদ্মার চর গড়ে আবার ভেঙে যায়। মুক্তির পর গুলিস্তান হলে দেখেছিলাম। নিজেকে দেখে মনে হয় অভিনয় আরেকটু অন্যরকম করা দরকার ছিল।

অভিনয় থেকে দূরে আছেন, কষ্ট হয় কি?

এখন অভিনয় করতে পারি না, কষ্ট হয়। এখন শুধু অভিনয় দেখি। নাটক বেশি দেখি।

আফসোস কাজ করে?

না। শিল্পী হিসেবে কোনো আফসোস কাজ করে না। অভিনয় শিল্পকে কিছু দিতে পারছি না, এটাই দুঃখ। এছাড়া কোনো আফসোস নেই।

এই সময়ে আপনার চাওয়া?

আমার চাওয়া—একদম সত্য যদি বলি, আমি এখন চাই খুব শান্তিতে মৃত্যু। ড. ইনামুল হক যেমন মারা গেলেন। ওইরকম শান্তির মৃত্যু চাই।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

4h ago