মুক্তচিন্তার পথিক: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

'আলোকিত মানুষ চাই'- স্লোগানকে উপজীব্য করে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এমন এক উদ্যোগ নেন, যেটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ ও মননশীল চিন্তাধারা তৈরিতে বৈপ্লবিক ভূমিকা রেখে আসছে। আবু সায়ীদের জন্ম কলকাতায়, ১৯৩৯ সালে। শুধু শিক্ষাবিদ হিসেবে নয়, বরং একজন দূরদর্শী লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং প্রগতিশীল সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি আমাদের সমাজে স্থায়ী প্রভাব রেখেছেন।

৩ যুগের শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক আবু সায়ীদ শত শত তরুণ শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছেন। ৬০' এর দশকে তিনি প্রভাবশালী সাহিত্য সাময়িকী 'কণ্ঠস্বর'র সম্পাদক ছিলেন। সেখানে তিনি তরুণ প্রজন্মের কবি ও লেখকদের পরিচর্যা করার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তিনি একইসঙ্গে ৭০' এর দশকে বিটিভির সবচেয়ে জনপ্রিয় উপস্থাপকদের একজন ছিলেন। এ সময় সপ্তবর্ণ ও আনন্দমেলার মতো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। 

তবে মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে অবদান রাখার কারণে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে থাকবেন। কমবয়সীদের মাঝে বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা এবং তাদের সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে জানানোর উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি সারা দেশে বইপড়ার বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেন। দেশে পাঠাগারের অভাব ঘুচাতে ১৯৯৮ সালে চালু করেন 'ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি' কর্মসূচি। বর্তমানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নিবন্ধনকৃত সদস্যের সংখ্যা ২২ লাখ এবং এর ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে সেবা দিচ্ছে। তার ৫০টিরও বেশি সাহিত্যকর্ম প্রগতিশীল মূল্যবোধের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।   

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ছিলেন স্বাধীন চিন্তাধারা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচারণার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ বিষয়গুলোকে তিনি কেবল তার লেখনীতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি পরিবেশ রক্ষা, গণস্বাস্থ্য ও দুর্নীতি দমন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মতো সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। 

তরুণসহ সব বয়সী মানুষের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল ও স্বাধীন চিন্তাধারার প্রচারণায় অগ্রগামী ভূমিকা রাখার জন্য দ্য ডেইলি স্টার আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে সম্মান জানাচ্ছে। তার লেখনী, তার গড়ে তোলা সংস্থা ও বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি লাখো তরুণ-তরুণীকে মুক্তচিন্তার চর্চায় উৎসাহিত করেছেন, বাকি বিশ্বকে দেখার দিব্যদৃষ্টিকে প্রসারিত করেছেন এবং বৈশ্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করেছেন। এসব কীর্তির মাধ্যমে তিনি আমাদের সমাজে ইতিবাচক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছেন, যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত পটভূমিকে ধারাবাহিকভাবে সমৃদ্ধ করে চলেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

34m ago