উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

২ গোল হজমের পর ৫ গোল দিয়ে জিতল রিয়াল

ছবি: এএফপি

রাজকীয় প্রত্যাবর্তন বোধহয় একেই বলে। খেলা শুরুর ১৪ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে বসল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে তারা ঘুরে দাঁড়াল সম্ভাব্য সবচেয়ে সেরা কায়দায়। প্রথমার্ধেই সমতায় ফেরার পর দ্বিতীয়ার্ধে রীতিমতো চালাল তাণ্ডব। কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের আগ্রাসী ফুটবলে খড়কুটোর মতো যেন উড়ে গেল লিভারপুল।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সফলতম ক্লাব রিয়াল আরেকটি স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিয়েছে ভক্তদের। আসরের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে লিভারপুলের মাঠ অ্যানফিল্ডে তারা জিতেছে ৫-২ গোলে। শিরোপাধারীদের পক্ষে প্রথমার্ধে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও দ্বিতীয়ার্ধে করিম বেনজেমা জোড়া গোল করেন। তাদের আরেক গোলদাতা এদার মিলিতাও। এর আগে দারউইন নুনেজ স্বাগতিকদের এগিয়ে দেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মোহামেদ সালাহ।

বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। তাদেরকে টপকে পরের পর্বে যেতে হলে লিভারপুলকে করে দেখাতে হবে অসাধারণ কিছু। আগামী ১৬ মার্চ শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ভেন্যু রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যু।

রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে বল দখলে কিছুটা পিছিয়ে ছিল স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল। গোলমুখে তাদের নেওয়া নয়টি শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলও নয়টি শট লক্ষ্যে রাখে। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল পাঁচটি।

শুরুর তেজ পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেনি লিভারপুল। বিশেষ করে, বিরতির পর মাঠে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যদের। ফরোয়ার্ডদের নজর কাড়ার ম্যাচে দুই দলের গোলরক্ষকও আলোচনার খোরাক যোগান। তবে একদম বিপরীত কারণে। থিবো কোর্তোয়া ও অ্যালিসনের হাস্যকর ভুলে যথাক্রমে রিয়াল ও লিভারপুল একটি করে গোল হজম করে।

নড়েচড়ে বসার আগেই ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। ডানপ্রান্ত থেকে সালাহর রক্ষণচেরা পাসে ব্যাকহিল ফ্লিকে চমৎকার গোল করেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার নুনেজ। পুরোপুরি বোকা বনে যান বেলজিয়ান গোলরক্ষক কোর্তোয়া।

আট মিনিট পর সালাহ নিজেই গোল পেতে পারতেন। ঝড়ের গতিতে ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শট নিলে তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৪তম মিনিটে জাল খুঁজে নেন তিনি। এতে বড় দায় আছে কোর্তোয়ার। দানি কারভাহালের ব্যাক পাস পেয়ে ক্লিয়ার করতে সময় নিচ্ছিলেন তিনি। বেখাপ্পাভাবে বল তার হাঁটুতে লেগে চলে যায় সালাহর কাছে। সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি মিশরীয় ফরোয়ার্ড।

সাত মিনিট পর ম্যাচে ফেরার লাইফলাইন পেয়ে যায় সফরকারীরা। বেনজেমার কাছ থেকে বল পেয়ে বামপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকেন ভিনিসিয়ুস। কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে না এলে কোণাকুণি শটে নিশানা ভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

২৫তম মিনিটে লিড বাড়ানোর সম্ভাবনা জাগায় লিভারপুল। গোললাইন থেকে বল বিপদমুক্ত করেন মিলিতাও। পাঁচ মিনিট পর ভিনিসিয়ুসের শট দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন তার স্বদেশি অ্যালিসন। কিন্তু ৩৬তম মিনিটে মঞ্চস্থ হয় আরেকটি অমার্জনীয় ভুলের দৃশ্য। জো গোমেজের ব্যাক পাস পেয়ে তাকেই বল ফেরত দিতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন অ্যালিসন। সামনে থাকা ভিনিসিয়ুসের পায়ে লেগে ফাঁকা জালে বল জড়ালে স্কোরলাইন ২-২ হয়।

৪৫তম মিনিটে ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের ফ্রি-কিক রুখে দেন কোর্তোয়া। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রিয়ালকে এগিয়ে যেতে দেননি অ্যান্ড্রু রবার্টসন। বাম প্রান্ত থেকে দূরের পোস্টে ভিনিসিয়ুসের ক্রসে রদ্রিগো পা ছোঁয়ানোর আগেই তা প্রতিহত করেন তিনি।

সমতায় ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে থাকা রিয়াল বিরতির পর হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ২২ মিনিটের মধ্যে তারা গোলের উল্লাস করে তিনবার। হতবাক হয়ে পড়া লিভারপুল সেসময় বলার মতো সুযোগও তৈরি করতে পারেনি। দলটির খেলোয়াড়দের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল হতাশা আর অবিশ্বাসের ছাপ।

ম্যাচের ৪৭তম মিনিটে রিয়াল প্রথমবারের এগিয়ে যায়। বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিকে লুকা মদ্রিচ বল হাওয়ায় ভাসান ছয় গজের বক্সের প্রান্তে। সঙ্গে লেগে থাকা মার্কারকে এড়িয়ে দূরের পোস্ট থেকে সামনে ফাঁকায় চলে আসেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মিলিতাও। এরপর হেড করে অ্যালিসনকে পরাস্ত করেন তিনি।

আট মিনিট পর গোলের স্বাদ নেন বেনজেমা। ভাগ্যের সহায়তা ছিল তাতে। রদ্রিগোর কাছ থেকে বল পেয়ে দুর্বল শট নেন তিনি। কিন্তু গোমেজের পায়ে লেগে দিক পাল্টে তা পেরিয়ে যায় গোললাইন। উল্টোদিকে ঝাঁপিয়ে পড়া অ্যালিসনের কিছুই করার ছিল না।

৬৭তম মিনিটে হওয়া গোলে অবশ্য কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। পাল্টা আক্রমণে ক্রোয়াট মিডফিল্ডার মদ্রিচ খুঁজে নেন ভিনিসিয়ুসকে। তিনি ভার্জিল ফন ডাইকের পায়ের ফাঁক দিয়ে পাস দেন বেনজেমাকে। গোলপোস্ট ছেড়ে তখন বেরিয়ে আসেন অ্যালিসন। তাকে কাটিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচে রিয়ালের পঞ্চম গোল করেন বেনজেমা।

বাকি সময়ে কোনো দলই বড় কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে মাতোয়ারা হয় রিয়াল। পরের লেগে লিভারপুলের বিপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে হারলেও তারা উঠে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে।

Comments

The Daily Star  | English
NID cards of Sheikh Hasina and family locked

NIDs of Hasina, 9 family members 'locked'

The NIDs of the 10 listed individuals were locked through an official letter on April 16

1h ago