বান্দরবানে মারমা নারী ধর্ষণ

হাসপাতাল থেকে অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন

বান্দরবানের লামা উপজেলায় মারমা নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কায়সারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
লামায় মারমা নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কায়সারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: স্টার

বান্দরবানের লামা উপজেলায় মারমা নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কায়সারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে রাঙ্গামাটি ডিসি অফিসের সামনে চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, 'দেশে কিশোরী ও তরুণীরা একেরপর এক ধর্ষণ, জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। পাহাড়ের নারীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। পাহাড়ের নারীরা শিক্ষাক্ষেত্র, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে দুর্বল হওয়ায় তারা সবসময় ধর্ষণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নির্যাতনকারীরা সবসময় সবল এবং ক্ষমতাবান হয়। যারা ক্ষমতাশালী, তারা সবসময় দুষ্কৃতিকারীদের সহযোগিতা করে। যার কারণে অপরাধীরা বার বার এগুলো করার সাহস পাচ্ছে। এযাবতকালে যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে কিছু অপরাধের বিচার হলেও অধিকাংশ নারী এখনো যথাযথ বিচার পাননি।'

তিনি বলেন, 'দেশের অন্যান্য জেলার মতো ৩ পার্বত্য জেলাতেও বিশেষ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার কারণে আজ অনেক ঘটনার বিচার সম্ভব হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। আজকে সমাজে তথা দেশে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটির পরিবর্তন হওয়া দরকার।'

সুস্মিতা চাকমা বলেন, 'লামায় এলাকাবাসীরা পিটুনি দিয়ে ধর্ষক কায়সারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। এরপরও কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা-বেষ্টনী ভেদ করে হাসপাতাল থেকে অপরাধী কায়সার পালিয়ে গেলেন, আমি প্রশাসনের কাছে এর জবাব চাই।'

'আমাদের চৌকস পুলিশ, সেনা-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তারা আন্তরিক থাকলে অপরাধীকে ধরা, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন কিছু নয়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দুষ্কৃতিকারীরা উৎসাহ পাবে। এরকম চলতে থাকলে আমরা কেউই নিরাপদে থাকতে পারব না।'

অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাকমা বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের আয়তনের বাইরে নয়। প্রতিবারই ধর্ষণের মতো ঘটনায় আমরা রাজপথে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছি। আজও দাঁড়িয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে কেন আমার বোন নিরাপদে থাকবে না? কেন তারা ঘরের ভেতর ও বাইরে অনিরাপদ থাকবে? কেন তারা ধর্ষণের শিকার হবে?'

তিনি বলেন, 'গত শুক্রবার বান্দরবানের লামায় ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যান অপরাধীকে সহযোগিতা করেছেন এবং ভুক্তভোগীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল হাসপাতাল থেকে ধর্ষক কায়সার পালিয়ে গেছেন। পাহাড়ে যত ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে, যত অপরাধের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, এখানে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, সেই দলগুলো সেসব ঘটনার কোনো প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত করেনি। ধর্ষকের কোনো জাত-পাত নেই। তাদের একটাই পরিচয়, তারা ধর্ষক। সুতরাং সবার উচিত ধর্ষণের মতো ঘটনার প্রতিবাদ করা।'

থোয়াইক্যজাই চাকমা আরও বলেন, 'যতক্ষণ না পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের কোনো সুশাসন এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে না।' 

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামে একেরপর এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো সুবিচার পাচ্ছি না। ধর্ষণকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। যেখানে জনমানুষের সমস্যা হবে, সেখানে সকাল-বিকেল ছুটে যাওয়া জনপ্রতিনিধির কাজ। কিন্তু লামার ফাঁসিয়াখালীর ইউপি চেয়ারম্যান ধর্ষণকারীর পক্ষ নিয়ে ধর্ষককে সহযোগিতা করে আসছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।'

হিল উইমেনস ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু সিং মারমা বলেন, 'লামায় মারমা নারীকে দিনে-দুপুরে নিজ এলাকায় ঘরের পাশে তরকারি খুঁজতে গিয়ে যদি সেটেলার কায়সার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হতে হয়, তাহলে আজকে পাহাড়ি নারীর নিরাপত্তা কোথায়? ধর্ষক কায়সারকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা যারা করেছেন, সেই ইউপি চেয়ারম্যানসহ তারাও ধর্ষকের সমান অপরাধী। ধর্ষকের সঙ্গে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং ধর্ষক কায়সারকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।'

এ ছাড়াও, মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জিকো চাকমা ও টিকেল চাকমা প্রমুখ।

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago