হল প্রভোস্টকে ছাত্রলীগ নেত্রী

‘আমি হলের দায়িত্বে আছি, যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দেব’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ। ফাইল ছবি

'এই হল আমার, আমার কথাতেই হল চলবে। আমি হলের দায়িত্বে আছি। যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দেব। আপনাকে এই হলের দায়িত্ব কে দিয়েছে? আপনি কে?'

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমানকে এভাবে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে।

আজ রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফোন করা হলে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেখ হাসিনা হলের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের পর একজন হাউজ টিউটরকে নিয়ে হলে যাই। গিয়ে দেখি হল প্রশাসনের বরাদ্দ দেওয়া সিটে অন্য এক শিক্ষার্থী আছে। যাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাকে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। যে সিট দখল করে আছে তাকে জিজ্ঞেস করি যে তুমি কীভাবে এই সিটে উঠলে? তখন সে জানায় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিন তাকে হলে উঠিয়েছে। আমি সেই শিক্ষার্থীকে সিট ছেড়ে দিতে বলি।' 

প্রভোস্ট বলেন, 'ওই সময় পাশের ২১৮ নম্বর রুম থেকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিন বের হয়ে এসে আমাকে বলে সে তাকে ওই সিটে উঠিয়েছে। সেখানেই থাকবে ওই শিক্ষার্থী। সেখান থেকে যাবে না।'

প্রভোস্ট বলেন, 'আমি তখন ফাইজাকে বলি, তুমি কাউকে হলে সিট দিতে পারো না। আমি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তুমি কে যে যাকে খুশি সেখানে রাখবে? তখন ফাইজা বলে, এই হল আমার। আমি হলের দায়িত্বে আছি। আমি যাকে খুশি ওঠাতে পারি। আমি হল সভাপতি। আমি যাকে খুশি সেখানে রাখব। আপনি কে?'

'পরে যাকে ওই সিট দেওয়া হয়েছিল সেই শিক্ষার্থীকে আজ রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে সিট ছাড়ার কথা বলে চলে আসি এবং যাকে আমরা সিট বরাদ্দ দিয়েছে তাকে হলে উঠতে বলি,' জানান তিনি।

প্রভোস্ট আরও জানান, ছাত্রলীগের ওই সভাপতির কাছে হল ফি বাবদ ১ হাজার ২৫০ টাকা পাবে প্রশাসন। টাকা না দিলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনকে প্রথমে কল করা হলে ডেইলি স্টারের পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কল কেটে দেন। 

পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবার ফোন দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেন।

প্রভোস্টের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাইজা মেহজাবিন বলেন, 'স্যারের সঙ্গে আগে থেকে কিছুটা মনোমালিন্য ছিল। তাই সিট বরাদ্দ নিয়ে তিনি (প্রভোস্ট) এসব কথা ছড়াচ্ছেন।'

পাওনা টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হল প্রশাসন টাকা পায়, আমাকে জানানো হয়েছে। পরে সুবিধামতো দিয়ে দেব।'

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা হলের ২১৪ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের দ্বাদশ আবর্তনের প্রেয়শী সানাকে ২১৬ নম্বর রুমের একটি সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। রুম শিফট করতে গিয়ে প্রেয়শী তার  নতুন সিটে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম আবর্তনের রায়হানা আনজুম মিমকে সেখানে দেখেন। ঘটনা সমাধানের জন্য হল প্রভোস্টকে ফোন দিলে হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান হলে এসে ১১তম আবর্তনের মিমকে সিটে অবস্থান করার কারণ জানতে চাইলে তিনি ফাইজা মেহজাবিনের নাম বলেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফাইজার এমন আচরণ নতুন কিছু না। তিনি একজন শিক্ষক সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারলে আমাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে থাকেন? প্রতিদিন সকালে তার চিৎকারে আমাদের ঘুম ভাঙে। হলে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থী তার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।' 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলের হাউজ টিউটর মো. আল আমিন বলেন, 'হল প্রভোস্টের সঙ্গে ফাইজার আচরণ শিক্ষার্থী সুলভ নয়।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমাদের হল প্রশাসন সিট দিয়েছে। কিন্তু ফাইজার কথা হচ্ছে সেই সিট টিকিয়ে রাখতে গেলে নাকি ছাত্রলীগ করতে হবে। যারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না তাদের সিট নিয়ে ফাইজা ঝামেলা করেন।'

কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি শুনেছি। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেউ হলের মধ্যে এমন কথা বলার অধিকার রাখে না। হলের সম্পূর্ণ দায়িত্ব হল প্রশাসনের। হলের যাবতীয় এখতিয়ার হল প্রশাসনের। সেই নেত্রী এ ধরনের কথা বলে থাকলে ব্যক্তিগতভাবে বলেছে। সাংগঠনিকভাবে আমরা এর দায়িত্ব নেব না।'

'বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব,' তিনি যোগ করেন।

হল আসলে কে চালায় প্রশাসন না ছাত্রলীগ, এমন প্রশ্ন করা হলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম মইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের প্রশাসন আছে। প্রশাসনের নিয়মেই হল চলে। কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থে হলের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে হল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

12h ago