যদি ডান-বাম গুলিয়ে ফেলেন

যদি ডান-বাম গুলিয়ে ফেলেন
ছবি: সংগৃহীত

দিক-নির্দেশক কম্পাসের দিক মূলত চারটে, অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ হলেও নিত্যদিনের জীবনে আমরা বেশি ব্যবহার করি মাত্র দুটো দিক। উত্তর-দক্ষিণ বা সহজ কথায়, ডানদিক আর বাঁ দিক। আমাদের হাত, পা, চোখ, কান– শরীরের বহু অংশই এই দুটো দিকে বিভক্ত, আমাদের চলার পথও। কখনো কখনো তো আমাদের আদর্শেও লেবেল লাগে, ডান কিংবা বামের। 

তবে কেউ যদি এই অতি প্রয়োজনীয় দুটো দিকই গুলিয়ে ফেলেন? তখন কী হয়? দিক নিয়ে মস্তিষ্কের এই গোলকধাঁধা নিয়েই এ লেখা। 

কেন এই বিভ্রান্তি?  

নেদারল্যান্ডসের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু-মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আইনেক ভ্যান ডার হ্যাম বলেন, 'কেউ কিন্তু সামনে-পেছনে বা উপর-নিচ নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন না। কিন্তু ডান-বাম আলাদা করার বিষয়টা অন্যরকম, এর কারণ হচ্ছে প্রতিসাম্য। যখন আপনি ঘুরে দাঁড়ান, তখনই বিষয়টা উল্টেপাল্টে যায় আর এ থেকে দ্বিধার সৃষ্টি হতে পারে।'

'প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডান-বামের বৈষম্য' শীর্ষক একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে সমস্যাটি বেশ সাধারণ। প্রতিদিনের জীবনে প্রতি ৩ জনে অন্তত একজনকে এ ঝামেলা পোহাতে হয়। এই ব্যক্তিদের একইসঙ্গে ডিসলেক্সিয়া, ডিসপ্রেক্সিয়ার মতো প্রতিবন্ধকতাও থাকতে পারে। এমনকি অনেকের মাঝে ঘড়ির কাঁটায় সময় দেখা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়।

মূলত স্নায়ু-মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কের দর্শন আর সংবেদী স্নায়ু একসঙ্গে কাজ করতে না পারা এ ধরনের সমস্যার পেছনের কারণ হতে পারে। তাই বেশিরভাগ মানুষের কাছে যেটি প্রায় সহজাত বিষয়, কারও কারও কাছে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই বিভ্রান্তির পেছনে দায়ী আরেকটি প্রভাবক হচ্ছে ডিস্ট্র্যাকশন ইফেক্ট। এই ইফেক্টের ফলে আমাদের চারপাশের কোলাহল, ভিড়ের উপস্থিতি, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি বিষয় আমাদের ওপর যে প্রভাব ফেলে– তার কারণে ডান-বাম গুলিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। যদিওবা স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তির ডান-বাম চিহ্নিত করার ক্ষমতা ঠিকঠাক থাকে, এই ইফেক্টের ফলে ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। 

অন্য যেকোনো ক্ষেত্রের চেয়ে ডাক্তারিবিদ্যায় এ ঝামেলা একটু বেশিই বিপদজনক। ডান-বাম চিনতে ভুল করে চিকিৎসক যদি কিডনি বা ভুল হাত-পায়ে ইনজেকশন দিয়ে ফেলেন, তাতে রোগীর প্রাণ শঙ্কায় পড়বে– বলাই বাহুল্য। অনেকটা এ চিন্তা থেকেই 'মেডিকেল এডুকেশন' নামের  জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার জন্য জরিপ চালানো হয়েছিল ২৩৪ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর উপর। এই ডান-বাম চেনা নিয়েই ছিল সে গবেষণা। এ থেকে ডিস্ট্র্যাকশন ইফেক্ট আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কেন না শান্ত পরিবেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে ডান-বাম নির্দেশ করতে অনেক শিক্ষার্থীরই বেগ পেতে হচ্ছিল। 

সমাধান কী?

এ ভোগান্তির একটি সহজ ও সাধারণ উপায় রয়েছে। বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনির মধ্যে ৯০ ডিগ্রি, অর্থাৎ দেখতে সমকোণের সদৃশ একটি আকৃতি তৈরি করলে তা দেখতে ইংরেজি 'এল (L)'-এর মতো দেখায়। এ থেকে 'লেফট' বা বাম দিক মনে রাখা সম্ভব। তবে কারও যদি একটু বেশিই গুলিয়ে ফেলার অভ্যেস থাকে, তবে এ বুদ্ধি কাজে না দিলে অবাক হবার কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি হয়তোবা ডান হাতের আঙুল দিয়ে কারিকুরি করে 'এল (L)' তৈরির চেষ্টা চালাবেন! 

এর পরের উপায়টা একটু ফিল্মি। আমির খান অভিনীত বলিউডের সেই ভুলে যাওয়া রোগের 'গজনী' সিনেমার কথা ভুলে যাননি তো? ডান-বাম মনে রাখতে প্রাথমিকভাবে 'গজনী ফর্মুলা' প্রয়োগ করেও দেখা যেতে পারে। মানে, ২ হাতে কলম দিয়ে ডান-বাম লিখে রাখা আরকি। কেউ কেউ আবার এর স্থায়ী ব্যবস্থাও করেন, কোনো এক হাতে ট্যাটু করার মাধ্যমে। 

যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে সেটিকে স্বীকার করে নেওয়া। কারও যদি ডান-বাম নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে থাকে, তবে ঠিক কাজটি হবে আশপাশের লোকজনকে সেটি সম্বন্ধে জানিয়ে রাখা। নিজের এ সমস্যা না থাকলেও যদি অন্য কারও থাকে, তবে যথাসাধ্য সাহায্য করা উচিত। যদি চেনা কেউ 'আপনার ডান, না আমার ডান?' জাতীয় প্রশ্ন করে বসে, তবে তাকে নিয়ে হাসাহাসি না করে দিক চিনে নিতে সাহায্য করাই হবে সংবেদনশীলতার পরিচয়।

তথ্যসূত্র: দ্য কনভারসেশনডটকম, সাইকোলোজিটুডে, বিবিসি

 

Comments

The Daily Star  | English
CAAB pilot licence irregularities Bangladesh

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

10h ago