বাংলাদেশসহ ৩৩ দেশ থেকে ৮২৭০৫ শ্রমিক নেবে ইতালি

প্রতীকী ছবি

ইতালি সরকার বাংলাদেশসহ মোট ৩৩ দেশ থেকে ২০২৩ সালে ৮২ হাজার ৭০৫ জন নতুন শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং এ বিষয়ে সরকারি গেজেটও প্রকাশ করেছে। আগামী ২৭ মার্চ থেকে অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়া শুরু হবে এবং ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে ইতালি যেতে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়। এমনকি দালালরা অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নেয়।

দালালের খপ্পর থেকে সতর্ক থাকতে হবে। লাখ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিপদে পড়তে হতে পারে।

ইতালি প্রধানত ২ শ্রেণীতে শ্রমিক নেবে—সিজনাল ও নন-সিজনাল। সিজনাল শ্রেণীতে ৪৪ হাজার শ্রমিক নেবে দেশটি। এর মধ্যে শুধুমাত্র কৃষিকাজের জন্য নেওয়া হবে ২২ হাজার জন। যারা কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজ করতে আগ্রহী, তারা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। বাকিরা অন্যান্য সিজনাল কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সিজনাল শ্রমিকদের সাধারণত ৯ মাসের জন্য ভিসা দেওয়া হয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হয়। যদি কেউ ফিরে না যান, তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে কঠিন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়।

সিজনাল ভিসায় ইতালি যাওয়ার পর অধিকাংশ শ্রমিক সঠিক সময়ে ফিরে না যাওয়ার অপরাধে ইতালি সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রায় ৯ বছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা গত বছর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

সিজনাল ভিসায় ইতালিতে কাজ করে নির্দিষ্ট সময়ে নিজ দেশে ফিরে গেলে পরবর্তী সময়ে কাজের ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এক সময়ে তারা ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান। এ বছর ৬ হাজার ৬০০ জন এই শ্রেণীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে পারবেন।

গ্রীষ্ম মৌসুমে ইতালিতে কৃষিকাজের জন্য প্রচুর শ্রমিক দরকার হয়। এ ছাড়া, পর্যটন এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য অনেক খাতে শ্রমিক প্রয়োজন হয়। সিজনাল ভিসার শ্রমিকরা সাধারণত এসব খাতে কাজ করেন। একটু বেশি পরিশ্রম করলে এখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

নন-সিজনাল কোটায় ৩৮ হাজার ৭০৫ জন শ্রমিক নেবে ইতালি। এই শ্রেণীতে দক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। যেমন: ভারি যানবাহন চালক, অবকাঠামো নির্মাণ শ্রমিক, জাহাজ নির্মাণ শ্রমিক, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক, খাদ্য সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা শ্রমিক ইত্যাদি।

কারা শ্রমিক নিতে পারবে

ইতালির নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান দেশটির সরকারের বেঁধে দেওয়া শর্ত মেনে প্রবাসী শ্রমিক নেওয়ার আবেদন করতে পারবে।

নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি

নিয়োগদাতার বার্ষিক আয়-ব্যয়, কর, ক্রয় ভাউচার, শ্রমিকের থাকার জায়গাসহ বেশ কিছু বিষয় দেখে ইতালি সরকার।

শ্রমিকের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাসপোর্টের ফটোকপি এবং দক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে দক্ষতার সনদ দরকার হয়।

আবেদন খরচ

প্রতি জন শ্রমিকের জন্য ১৬ ইউরো খরচ হয়। এর বাইরে কেউ যদি আবেদন ফরম পূরণ করতে হেল্প ডেস্কের সাহায্য নেন, এর জন্য আরও ১০০ থেকে ১৫০ ইউরো খরচ হতে পারে।

বাংলাদেশের কোটা কত

বিগত বছরে দেশ প্রতি নির্দিষ্ট কোটা বেঁধে দেওয়া হলেও এ বছর তা করা হয়নি। অর্থাৎ কোন দেশ থেকে কত শ্রমিক ইতালিতে যেতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি।

তবে, এ বছর আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন একটা শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, নিয়োগদাতাকে প্রথমে শ্রমিকের চাহিদা জানিয়ে কর্মসংস্থান দপ্তরে আবেদন করতে হবে। তারা শ্রমিক সরবরাহ করতে অপারগ হলে একটা সনদ দেবে, যার ভিত্তিতে বিদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার আবেদন করা যাবে।

আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে জনপ্রশাসন অফিস থেকে নুল্লা ওয়াস্তা বা ভিসার অনুমোদনপত্র দেওয়া হবে। এটি নিজ দেশের ইতালিয় দূতাবাসে জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়।

অনলাইনে করা আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভিসার অনুমোদনপত্র আসতে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

সিজনাল শ্রমিকরা কেন ফেরত যান না

বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে ইতালি যেতে একজন শ্রমিকের যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা মাত্র ৯ মাস কাজ করে পোষানো যায় না।

এ ছাড়া, অনেক শ্রমিকের কাছে সঠিক তথ্য থাকে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদেরকে ভুল তথ্য দেয়। অনেক টাকা খরচ করে ইতালি পৌঁছানোর পর তারা জানতে পারেন যে ৯ মাস পর তাদেরকে ফেরত যেতে হবে। বড় খরচের কথা মাথায় রেখে অবৈধ অভিবাসী হয়েই তারা ইতালিতে থেকে যান।

অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তারা কী কাজ করেন

সাধারণত ইতালির নিয়োগদাতারা কোনো অবৈধ শ্রমিককে কাজ দেন না। ফলে, দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীরা হকারির জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন। দেশটির বড় শহর বা পর্যটন এলাকায় ফুলসহ বিভিন্ন জিনিস ফেরি করেন এবং সারাক্ষণ চোর-পুলিশ খেলায় লিপ্ত থাকেন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Police: Designed to inflict high casualties

A closer look at police’s arms procurement records reveals the brutal truth behind the July killings; the force bought 7 times more lethal weapons than non-lethal ones in 2021-23

4h ago