পিরিয়ডে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা: কী করবেন, কী করবেন না

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি আমার এক নাতনির পিরিয়ড হয়েছে। সে খুব সহজে নতুন এ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছে। বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতেও বের হতে দেখি তাকে। আমার আফসোস হয় এই ভেবে যে, কেন আমিও আমার মেনোপজের মতো প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে তার মতো করে গ্রহণ করতে পারলাম না।

এ ব্যাপারটা ভাবতেই মনে পড়ে গেল, আমাদের মায়েরা কীভাবে কোনো ছাড়াই পিরিয়ডের সঙ্গে সামাজিক ট্যাবু, নীরবতা ও লজ্জার মতো বিষয়গুলোর সংযোগ তৈরি করে রেখেছিলেন। আমরা ওই সময়টা খেলার, স্বাধীনভাবে চলার এবং স্বাভাবিক কাজগুলো করার অনুমতি পাইনি। এমনকি প্রথম কয়েকদিন গোসল করারও অনুমতি ছিল না। আমরা আমাদের বাবা কিংবা ভাইদের এ ব্যাপারে বলতে পারতাম না; অন্যান্য মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ কমিয়ে দিতে হতো।

আমরা প্যাড কিনতে পারতাম না। অনেকেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হতাম। কোনো ছেলে যদি আমাদের পিরিয়ডের দাগ দেখে ফেলে তাহলে স্রষ্টা আমাদের শাস্তি দেবেন- এমন কুসংস্কারও বিশ্বাস করতাম। এই পুরো ব্যাপারটা বুঝলাম একদম জীবনের শেষদিকে এসে।

ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা এবং আমাদের একে একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। এটিকে গোপন কোনোকিছু ভেবে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা আলাদাভাবে দেখা উচিত নয়। 'এই দিনগুলো' আপনার প্রতিদিনের জীবনেরই অংশ। মা-খালারা এ সময়টাকে যেমন ভাবেন, সময়টা একেবারেই তেমন নয়। পিরিয়ড লজ্জাজনক নয় এবং আপনি তখন অপবিত্রও থাকেন না।

আজকাল অনেক নারীকে বাড়ির বাইরে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করতে হয়। প্রায়ই তাদের জন্য কোনো উপযুক্ত ওয়াশরুম থাকে না। পিরিয়ডের সময় এ বিষয়টার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যায়। এই চ্যালেঞ্জ পার করতে এমন একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন দরকার , যা কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা দিতে পারে এবং নারীরা লিকেজ বা অস্বস্তি ছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারেন। এমন একটি সঠিক উপকরণ এ সময় কর্মক্ষেত্রে নারীদের আরও কর্মক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

পিরিয়ডের ব্যাপারে আমার নাতনির চিন্তাভাবনা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রচলিত সব অর্থহীন কথাবার্তা বলার পরিবর্তে আমি তাকে শুধু পিরিয়ডের স্বাস্থ্যবিধি এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছি। ভাবলাম, অন্যান্য কিশোরীদের জন্যও কিছু লিখি।

পিরিয়ডের সময় নারী ও কিশোরীদের পরিষ্কার পণ্য ব্যবহার করতে হবে, তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন পরা ও পরিবর্তন করার মতো উপযুক্ত জায়গা থাকতে হবে এবং ব্যবহৃত পণ্যটি সঠিকভাবে ও সঠিক স্থানে ফেলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।

পিরিয়ড সাধারণত ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। অনেক মেয়ের ৯ বছর বয়সেও হতে পারে। তাই প্রতিটি মেয়েকেই আগে থেকে এই ব্যাপারে জানাতে হবে এবং প্রস্তুত করতে হবে। যেন বাসার বাইরে প্রথম পিরিয়ড হলে তারা যেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়।

 পিরিয়ডের সময় গোসল করা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ করার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো।

একটি ব্যবহৃত প্যাড কীভাবে ফেলতে হবে তা শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্যবহৃত প্যাডটি রোল করে কোনো কাগজ বা টয়লেট পেপারে মুড়ে বিনে ফেলে দিতে হবে। কখনও টয়লেটে ফেলবেন না। এরপর অবশ্যই ভালোমতো হাত ধুতে হবে।

পিরিয়ডের সময় ফেমিনিন ডিওডোরেন্ট ও স্প্রে ব্যবহার প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এমনকি পিরিয়ড ছাড়া অন্য সময়ও এগুলো ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করা হয় না।

পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নানা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়, দুর্গন্ধ দূরে রাখা যায় এবং স্বস্তিতে থাকা যায়। অন্যদিকে আপনি যদি পিরিয়ডের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তাই আমার সব নাতনিদের বলতে চাই—স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা উপভোগ কর, এই সময় পরিপাটি, ঝরঝরে ও পরিষ্কার থাক।

অনুবাদ করেছেন সাইমা তাবাসসুম উপমা

Comments

The Daily Star  | English
US wants Bangladesh trade plan,

Reducing US trade GAP: Dhaka turns to Boeing, wheat imports

Bangladeshi officials are preparing for a third round of talks in Washington next week

9h ago