মাসে ১০০ টাকার শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র

মাসে ১০০ টাকার ডে-কেয়ার সেন্টার
ছবি: স্টার

আড়াই বছর আগে যখন রোমানা বেগমের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়ার জন্ম হয়, তখন ৬ হাজার টাকা মাসিক বেতনে তাদের অনেক কষ্ট করে চলতে হতো। 

রোমানা তার পরিবারের উপার্জন বাড়াতে ছোট ছোট দোকানগুলোতে পণ্য প্যাকেটজাত করণ এবং বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবেও কাজ করতেন।

তবে, ঢাকা শহরে তার কোনো আত্মীয় না থাকায় এসব কাজের পাশাপাশি তার সন্তানের যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই কাজে যেতেন।

গত জানুয়ারি মাসে রোমানা রাজধানীর আজিমপুরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত একটি স্বল্পমূল্যের ডে-কেয়ার সেন্টারের খোঁজ পান। যেখানে প্রতিমাসে মাত্র ১০০ টাকায় ৩ বেলা খাবারসহ দিনব্যাপী শিশুর যত্ন নেওয়া হয়।

এরপর, গত ২ মাস ধরে মেয়েকে সেখানে রেখে কাজে যান রোমানা।

প্রথমদিকে, সন্তানকে সেখানে রেখে আসার কারণে বেশ উদ্বিগ্ন থাকতেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারলেন এর ফলে তিনি কাজে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারছেন। 

রোমানা বলেন, 'আমার মেয়ে ডে কেয়ারে সমবয়সী অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করে, অতিরিক্ত কোন খরচ ছাড়াই তারা দিনে ৩ বেলা খাবার দেয়।'

শিল্পপাড়ার গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে মাসে ৭ হাজার টাকা আয় করেন হাসিনা বেগম। তবে, তার স্বামী শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেন না।

সম্প্রতি পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসা হাসিনা মনে করেন, সন্তানদের নিরাপত্তা ও যত্নের চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজে মনোযোগ দেওয়া বেশ কঠিন। 

ওই এলাকায় কম খরচের ডে-কেয়ার সেন্টারের কথা শোনার পর তিনি সেখানে ৩ ও ৪ বছর বয়সী ২ সন্তানকে নিয়ে যান।

হাসিনা বলেন, 'আমার বাচ্চারা গত ৫ মাস ধরে খিলগাঁও সরকারি ডে-কেয়ারে যাচ্ছে। সেখানকার তত্ত্বাবধায়করা তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। এতে আমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারি, সারাক্ষণ সন্তানদের নিয়ে চিন্তা করতে হয় না বলে জীবন অনেক সহজ হয়েছে।'

দ্য ডেইলি স্টার বেশ কয়েকজন নিম্ন আয়ের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছে এবং তাদের সবাই সরকারি ডে-কেয়ারের সেবা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

অন্যদিকে, প্রাইভেট ডে কেয়ারগুলোতে ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেয়।

সামির রহমান নামের একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদককে জানান, মোহাম্মদপুরের একটি প্রাইভেট ডে-কেয়ার সেন্টারে দিনে সাড়ে ৫ ঘণ্টা রাখার জন্য তাকে মাসে ৬ হাজার টাকা এবং খাবারের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দিতে হয়।

স্বল্প আয়ের মানুষ, যারা প্রতি মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করেন তাদের পক্ষে সন্তানের ডে-কেয়ারে রাখা এবং খাবারের জন্য প্রতি মাসে এই পরিমাণ টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয় না।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর (ডিডব্লিউএ) রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মগবাজার, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, আজিমপুর, ফরিদাবাদ ও কামরাঙ্গীরচরে মোট ৮টি দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করছে।

এই কেন্দ্রগুলো ১০০ টাকা মাসিক ফি-তে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য দিবাযত্ন প্রদান করে।

এ ছাড়া শহরের মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য ৬টি ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে। যেগুলো ৫০০ টাকা ভর্তি ফি ও প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে নিয়ে থাকে।

অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অনুসারে, ডিডব্লিউএ সারা দেশে মোট ৪৩টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেছে, যার মধ্যে ৩৩টি নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য এবং ১০টি মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ৪৩টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭২৮ জন শিশুকে পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে একজন ডে-কেয়ার অফিসার, একজন শিক্ষক, একজন স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক, ২ জন বাবুর্চি, ৪ জন তত্ত্বাবধায়ক, ২ জন নিরাপত্তা প্রহরী এবং একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

এ ছাড়া, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশে ১১ জেলায় ২০টি অতিরিক্ত দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যেখানে ৪ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের দিবাযত্ন প্রদান করা হয়।

শিশুর বয়স এবং পিতামাতার আয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিষেবা ফি-সহ এই কেন্দ্রগুলোকে ৪টি বয়সের ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে ডিডব্লিউএ'র মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য ডে কেয়ারে ৮০টি আসন রয়েছে এবং মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য প্রতিটিতে ৬০টি করে আসন রয়েছে।'

একটি শিশুর জন্য প্রতিদিন ৯০ টাকা করে ব্যয় হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে মাত্র ১০০ টাকায় এই সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি।'

ফরিদা পারভিন আরও বলেন, 'দেশের বহু সংখ্যক নারী কর্মীর প্রয়োজনে ডিডব্লিউএ ইতোমধ্যে ২০টি নতুন ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে এবং সারা দেশে ৬০টি অতিরিক্ত কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।'
 

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago