কুলাউড়া পৌরসভা

ড্রেন ভরছে পলিথিন আর প্লাস্টিক বোতলে, বাড়ছে জলাবদ্ধতা

ড্রেনে প্লাস্টিক বোতল
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া শহরের নালাগুলোয় প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিনসহ অন্যান্য আবর্জনা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

একটু বৃষ্টি হলেই মৌলভীবাজারের কুলাউড়া শহরের প্রায় সব রাস্তায় পানি উঠে যায়। অন্যদিকে দক্ষিণবাজার হয়ে রেলস্টেশন যাওয়ার রাস্তা প্রায় ১২ মাসই পানিতে ডুবে থাকে।

গত বছর বর্ষায় মৌলভীবাজারের পানি নামলেও কুলাউড়ার মিলিপ্লাজা থেকে উপজেলা চত্বর পর্যন্ত পানি নামতে বেশ সময় লাগে। এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য বৃষ্টির আগে পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে।

এসময় দেখা যায় পলিথিন, প্লাস্টিক, ককশিটসহ বাণিজ্যিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নালায়।

কুলাউড়া পৌর কর্তৃপক্ষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছে, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা পরিষ্কার করতে কয়েকটি এলাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত আছেন। তারা নির্দিষ্ট সময় ট্রাকে করে আবর্জনা নিয়ে যান। নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা রাখার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকেও প্রচারণা চালানো হলেও লোকজন নালাতেই আবর্জনা ফেলছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, পৌরসভা থেকে দক্ষিণবাজার পর্যন্ত এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা তুলে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এই স্তূপে আছে চিপস-বিস্কুটের খালি প্যাকেট, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, গৃহস্থালি পণ্য, বৈদ্যুতিক তার, ককশিট, টুকরা কাঠসহ নানা কিছু।

ড্রেনে প্লাস্টিক বোতল
কুলাউড়া শহরের নালাগুলোয় প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

দক্ষিণবাজারের বাসিন্দা মো. হালিম আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় প্রায় সারা বছরই ড্রেনের পানি থাকে। মুসল্লিরা নোংরা পানি মাড়িয়ে মসজিদে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আমার বাবা কয়েকদিন আগে এই পানিতে পা পিছলে পড়ে যান।'

'মেয়রকে সবসময়ই বলি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষ এতটাই অসচেতন যে ড্রেনের কিছুটা অংশ ভেঙে এর মধ্যে ময়লা ফেলছেন।'

অপর বাসিন্দা আরকে শামিম বলেন, 'যারাই বোতল বা পলিথিন ড্রেনে ফেলবেন তাদের জরিমানার আওতায় আনা হোক।'

পৌর এলাকার আমিনুর রহমান বলেন, 'নাগরিকরা সচেতন না হলে সবারই দুর্ভোগ হবে। সবাই মিলে শহরকে বাসযোগ্য রাখতে হবে।'

এ কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় সিনজার আলীর কণ্ঠেও। তিনি বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক। মানুষ যদি সচেতন না হন পৌরসভার মেয়র আর কাউন্সিলররা কীভাবে বন্যামুক্ত শহর গড়বেন?'

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটু বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি রাস্তায় চলে আসে। ভাসতে থাকে পলিথিন, চিপসের খালি প্যাকেট ও প্লাস্টিকসহ নানা আবর্জনা। এসব ময়লার উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল প্রত্যেক এলাকার ড্রেনে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করা হলে সেখানে প্লাস্টিক ও পলিথিন পাওয়া যায়। এগুলোর কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে থাকে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।'

রাস্তার পাশের দোকান ও বসতি থেকে প্রতিদিন সেখানে আবর্জনা ফেলা হয় বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকারিতা দেখা যায় কম। প্রথম দিকে এর সফল প্রয়োগে পলিথিন বাজার থেকে প্রায় উঠেই গিয়েছিল। এখন পলিথিন ব্যাগে আবার বাজার ভরে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তা ও গলি থেকে পলিথিন বাতাসে উড়ে একপর্যায়ে নালা-নর্দমায় জমা হয়। ড্রেনে পলিথিনের স্তূপ সব সময়ই চোখে পড়ে।'

'পলিথিন একদিকে জলাবদ্ধতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে মাটির উর্বরতা কমাচ্ছে। পলিথিন জমা হয়ে নদী-নালা ভরাট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, 'বর্ষার আগেই পৌরসভার সব ওয়ার্ডের ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে শহর ও অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।'

নালায় প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিনসহ আবর্জনা না ফেলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

6h ago