মুন্সিগঞ্জে বাস দুর্ঘটনা: ছেলের সঙ্গে এটাই প্রথম ঈদ ছিল সাইফুলের
শরীয়তপুরের সাইফুল ইসলাম লাকুরিয়া ঢাকার একটি গার্মেন্টসে সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। বিয়ে করেন ২ বছর আগে। একমাত্র ছেলে বায়েজিদের বয়স ৫ মাস। গত ৩ মাসে বাড়ি যেতে পারেননি। তাই দেখা হয়নি ছেলের সঙ্গে।
ছেলের সঙ্গে এটাই প্রথম ঈদ। ইচ্ছা ছিল, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেশ কয়েকদিন ছুটি কাটাবেন। তাই বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা এক্সপ্রেসে শরীয়তপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সাইফুল।
সকাল ৯টায় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের ষোলঘরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাসটি একটি বিকল ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এ দুর্ঘটনায় সাইফুলসহ ৪ জন নিহত হন।
সাইফুলের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার ডিএমখালি ইউনিয়নে। গতকাল দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজনের চিৎকার আর আর্তনাদে সাইফুলের বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। বাড়ির উঠানে সাইফুলের মা ও ছোটভাই কাঁদছেন।
সাইফুলের মা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'আমার বাজানের কী হইলো, আমি কারে লইয়া থাকুম, কারে লইয়া ইদ করুমরে। আমার পাঁচ মাসের নাতিরে কে দেখব রে, নাতি কারে বাপ কইয়া ডাকব রে, অহন আমাগো কে দেখব রে।'
স্বজনরা জানান, ৩ মাস আগে সাইফুল ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। এরপর আর ঢাকা থেকে আসতে পারেননি। তবে ঈদের সময় একসঙ্গে কয়েকদিন বেশি ছুটি নেওয়ার কথা ছিল তার।
ডিএমখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন হক ব্যাপারীও ডেইলি স্টারকে একই কথা জানান।
মুন্সিগঞ্জের হাসাঁড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ষোলঘর এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় শরীয়তপুরগামী পদ্মা ট্রাভেলস।
এতে ঘটনাস্থলে ২ জনের মৃত্যু হয়। আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৯ জন আহত হন।
নিহতদের মধ্যে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাইফুল ইসলাম লাকুরিয়া (৩৫), একই উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের হাজেরা খাতুন (৬০) ও নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের আরিফ কাজীর (২৫) পরিচয় জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।
এর মধ্যে, হাজেরা ও সাইফুলের মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালেও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
Comments