ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: যেমন কাটল জেলেপাড়ার ঈদ

ভোলা সদরের শিবপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়ায় রাশিদা পরিবারের জন্য ঈদের রান্না করছেন। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলার মধ্যেই সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লক্ষাধিক জেলের পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ। 

সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারলেও, অধিকাংশ জেলের নিজের জন্য জোটেনি একটি নতুন পাঞ্জাবি। ইলিশ মাছ ধরায় ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার সময়ে এই ঈদ বাড়তি কোনো আনন্দ আনতে পারেনি তাদের পরিবারে। অনেক জেলে পায়নি ভিজিএফের চাল। তবুও ছেলেমেয়েদের ঈদ খুশিতে তারাও ঈদের সকালে খেয়েছে সেমাই।

মেঘনাপারের ভোলাসহ বিভিন্ন জেলেপাড়ায় আজ শনিবার গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। ঈদের সকালে ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের নাসির মাঝি জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট শিশুদের মধ্যে নতুন জামা পরার আনন্দ। স্থানীয় মেলা থেকে শিশুরা কেনাকাটা করছে। তবে আনন্দ দেখা যায়নি বড়দের মাঝে।

জেলেপাড়ায় অধিকাংশ ঘরেই আজ ঈদের জন্য কোনো বিশেষ রান্না হয়নি। বেশিরভাগ ঘরে খাবার আয়োজন ছিল আগের দিনের ডাল-তরকারি দিয়ে কিংবা গরম ভাতের সঙ্গে সঙ্গে ছিল ভর্তা।

জেলাপাড়ার নৌকায় বসে ঈদ উদযাপন। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

নাসির মাঝি জেলেপাড়ায় অন্তত ২০ হাজার জেলে রয়েছে। এবারে নিষেধাজ্ঞার সময়ে ঈদ হওয়ায় প্রায় প্রত্যেকেই কোনো রকমে দিনটি পার করছেন। অনেকেই শুধু সেমাই রান্না করেছেন। 

স্থানীয় জেলে নুরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার ২ মাস নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হবে আগামী ৩০ এপ্রিল। লুকিয়ে কিছু জেলে মাছ ধরলেও, দাম নেই। মাঝেমাঝে কোস্টগার্ড জালসহ নৌকা আটক করে। এর মধ্যে ঈদ আসায় আনন্দ নেই।'

আরেক জেলে ইউসুফ বলেন, 'পাঞ্জাবি তো দূরের কথা, ঈদের দিন মাংসও জোটেনি। তবে ২ ছেলেমেয়েকে জামা কিনে দিয়েছি।'

জেলেপাড়ার গৃহবধূ হাজেরা বেগম বলেন, 'নিজেরা না খেয়ে ধার করে হলেও ছেলেমেয়েদের ঈদের জামাকাপড় কিনে দিয়েছি।'

একই উপজেলার শিবপুর জেলেপাড়ায়ও দেখা গেছে একই চিত্র।

ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নে শিশুদের ঈদ আনন্দ। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

এই এলাকার জেলে ডালিম ডেইলি স্টারকে জানান, জেলেরা লুকিয়ে মাছ ধরতে গেলেও, নদীতে এখন তেমন মাছ নেই। তাই জেলেরা এক প্রকার কষ্টেই আছে। ঈদের সময়ে জেলেরা আলাদা করে কোনো চাল পায়নি। 

জেলেরা জানান, অধিকাংশ জেলে ভিজিএফের চাল পেলেও কেউ কেউ কম চাল পেয়েছে। তবে বেশ কিছু জেলে ভিজিএফ কার্ডই পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। 

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেল্লাল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল পাওয়ার কথা থাকলেও, তিনি পেয়েছেন মাত্র ২৭ কেজি।

দৌলতখান উপজেলায় সরেজমিনে গিয়েও দেখা যায়, সেখানকার হাজারখানেক জেলে পরিবারেও নেই ঈদ আনন্দ। 

জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার কারণে কষ্ট আরও বেড়েছে। কোনোভাবে হোক ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কিনে দিয়েছি। নিজেদের জন্য কিছু কিনতে পারিনি। ঈদের জন্য ভালো কোনো খাবার তৈরি করা হয়নি।'

বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২ মাসে বিভাগের ২ লাখ ৩০ হাজার ১৮৭ জন জেলেকে ৩৬ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় মৎস্য অফিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার ডেইলি স্টারকে জানান, গত ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ ধরায় ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা চলমান আছে। এ সময়ে প্রতি জেলের জন্য ৪০ কেজি ভিজিএফের চাল বরাদ্দ হলেও, ঈদের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই।
 

Comments

The Daily Star  | English

Raft of measures soon to tame inflation

The interim government has decided to double the amount of rice against one crore family cards and change the market monitoring strategy to tame inflation.

9h ago