প্রাক্তন কি বন্ধু হতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জীবনে সম্পর্ক আসে, আবার ভেঙেও যায়। কখনো ইচ্ছে থাকলেও পরিস্থিতি বা মনের মতভেদের কারণে সম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তখন বিচ্ছেদকেই মনে হয় ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিচ্ছেদের পরে একে অন্যের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন অনেকেই। প্রাক্তন বন্ধু হিসেবে থাকতে পারে কি না বা থাকা  উচিত কি না—এ নিয়ে অনেকের অনেক মতামত রয়েছে। থাকাটাই স্বাভাবিক।

'ঠিক সময়ে অফিসে যায়?

ঠিকমতো খায় দুপুরবেলা?

টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি—

না ক্যান্টিনেই টিফিন করে?'

জয় গোস্বামীর এই কবিতার মতো প্রাক্তনের কথা ভেবে আনমনে দুয়েকখানা লাইন আওড়ে নেওয়া যায়। কিন্তু সম্পর্কে বিচ্ছেদের পরও বন্ধু হয়ে থাকতে পারাটা অনেকের জন্যই সহজ নয়।

আদতে এই বিষয়টি নির্ভর করে প্রতিটি সম্পর্কের প্রকৃতির ওপর। প্রাক্তন বন্ধু থাকবে কি না, তা বুঝতে চাইলে কিছু জিনিসগুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

পরিস্থিতি

বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ে দুজনের আলাদা জীবনে কী ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটি এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। ধরা যাক, কোনো দম্পতির একটি সন্তান আছে। এক সময় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটল। এ অবস্থায় সন্তানের ভালোর জন্য হলেও অনেকে বন্ধুত্ব বজায় রাখেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ধরে রাখাটা দুজনের পরবর্তী জীবনের জন্য ভালো কিছু হয়ে উঠে না। সেক্ষেত্রে পুরনো স্মৃতি ভুলে দূরে থাকাই ভালো। 

যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কের বিচ্ছেদই অনেক জটিল পরিস্থিতির জন্ম দেয়, যা থেকে সহজ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা অনেকের জন্যই অত্যন্ত সময় ও ধৈর্যসাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে আবার বন্ধুত্ব বজায় রাখার বিষয়টি বাড়তি চাপ বলে মনে হতে পারে। তবে কেউ যদি এসব চাপ অতিক্রম করে খুব সাবলীলভাবে তার প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে পারেন, সেটির  প্রশংসা করা যেতেই পারে।

চাহিদা ও দুজনের ইচ্ছা

সম্পর্ক শেষ হওয়ার পরও একের অন্যকে নিয়ে থেকে যাওয়া চাহিদা কেমন এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি দুজনের মনেই বন্ধুত্ব রেখে দেওয়ার আশা থাকে, যদি একে অপরের জন্য পুরোপুরি অচেনা না বনে যেতে চান, কোথাও একটা সৌহার্দ্যের পরশ রেখে দিতে চান তবে বন্ধুত্ব রাখার সুযোগ থাকে। তবে দুজনের কেউ একজন যদি বিষয়টি পছন্দ না করেন, তবে সেই সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ পরবর্তী অবস্থায় বন্ধুত্বের কথা না ভাবাই ভালো।

শেষটা কেমন ছিল

একেকটি সম্পর্কের গল্প একেক রকম। পরিণতিটাও সে অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন। কোনো একটি সম্পর্কের ফর্মুলা দিয়ে অন্য সম্পর্কের মানচিত্র আঁকা সহজ কথা নয়। তাই বন্ধুত্ব রাখা সম্ভব কি সম্ভব নয় সেটি বুঝতে সম্পর্ক শেষ হওয়ার ধরনটা কেমন ছিল, তা বোঝা জরুরি। নোংরা কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, একে অন্যকে দোষারোপ, মানসিক শোষণের মতো নেতিবাচক বিষয়ের মধ্য দিয়ে যদি কোনো সম্পর্ক শেষ হয়, তবে এতে আর পরবর্তী কোনো যোগাযোগ না থাকাই উভয় পক্ষের জন্য ভালো।

অন্যদিকে যদি একটা শ্রদ্ধাবোধ রেখে ব্যক্তিগত আপসের মাধ্যমে সরে আসা হয়, তবে একে অন্যকে বন্ধু হিসেবে দেখার সম্ভাবনা থেকে যায়। তখন অতীতের রোমান্টিক অনুভূতিকে অতিক্রম করে দুজন মানুষ বন্ধুত্বের চর্চা করতেই পারেন। যদিও এটি বেশ পরস্পরবিরোধী আলাপের জন্ম দিতে পারে এবং এক সময়ের প্রণয়ঘটিত সম্পর্ককে 'প্লেটোনিক'ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাও অন্যরকম চ্যালেঞ্জ।

সবশেষে বলা যায়, একসঙ্গে কাটানো ভালো সময়গুলো শুধু সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে বলেই বাদ দিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। জীবনে এগিয়ে যাওয়াটাই শেষ কথা। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে যদি অতীতকে সুন্দর কোনো রূপে রেখে দেওয়া যায়, আর সেটা যদি হয় বন্ধুত্বের সোনালী মোড়ক, তবে ক্ষতি কী!

কিন্তু এটি করতে গিয়ে যদি বর্তমান জীবনে সমস্যার ঘনঘটা সৃষ্টি হয় তবে চিরতরে বিদায় বলে দেওয়াই ভালো। প্রতিটি সম্পর্কের পরিণতি মধুরেণ সমাপয়েতে গিয়ে ঠেকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে তাকে বন্ধুত্ব কিংবা সুন্দর একটি বিদায়— যেকোনো ভাবেই সুন্দর একটি মোড়ে আনা যায়। কারো মনে তিক্ততা না থাকাটাই বড় কথা।

Comments

The Daily Star  | English

Response to J&K Terror Attack: India gives forces ‘operational freedom’

Indian Prime Minister Narendra Modi has given the country's military "operational freedom" to respond to a deadly attack in Kashmir last week, a senior government source told AFP yesterday, after New Delhi blamed it on arch-rival Pakistan.

4h ago