মাদ্রাসাশিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

শিশু শিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে ফরিদপুরের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী পৌরসভার পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. হেদায়েতুল্লাহ (২৬) মাত্র ১৪ দিনে আগে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার পীরের চর গ্রামের বাসিন্দা।

নিহত শিক্ষার্থী ইমান আলী (৮) ফরিদপুরের নওপাড়া ইউনিয়নের সমশকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় মোল্লার ছেলে।

মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক আছেন ৩ জন এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩। এখানে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। নিহত ইমন অনাবাসিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হেদায়েতুল্লাহ মাদ্রাসায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের কারণে-অকারণে মারতেন এবং অশালীন আচরণ করতেন।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসার মুহতামিম ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদেরও অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আজ ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ।

মাদ্রাসার মুহতামিম শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হেদায়েতুল্লাহকে ১৪ দিন আগে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে শিশুদের মারপিট ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠায় একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।'

হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সালাম মিয়া বলেন, 'তার মারপিট ও অশ্লীল আচরণের বিষয়টি ইমন ফাঁস করে থাকতে পারে, এমন ধারণা করে হেদায়েতুল্লাহ নাক-মুখ চেপে ধরে ইমনকে হত্যা করে। হত্যার ভয় দেখিয়ে মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থীকেও এই কাজে সাহায্য করতে বাধ্য করেন হেদায়েতুল্লাহ।'

তিনি বলেন, 'ইমনকে হত্যার পর হেদায়েতুল্লাহ তাকে সাহায্যকারী শিশুটিকে নিয়ে বাসে উঠে ফরিদপুরের দিকে চলে যান। মাদ্রাসার অপর শিক্ষার্থীদের কাছে খবর পেয়ে মাদ্রাসার এক শিক্ষক মোটরসাইকেল নিয়ে মাঝকান্দি এলাকায় বাসটি আটকে হেদায়েতুল্লাহ ও ওই শিশুটিকে আটকে পুলিশে খবর দেন।'

'মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী ফজরের নামাজের পর পড়াশুনা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নাস্তার বিরতি থাকে এবং এরপর আবার ১০টা পর্যন্ত চলে পড়া। এরপর ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের বিশ্রামের জন্য ২ থেকে আড়াই ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়। এই সময়ে তারা ঘুমায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘুম থেকে আবার পড়াশোনা করে। সবাই যখন ঘুমাতে গিয়েছিল এরই মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে,' যোগ করেন তিনি।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসা শিক্ষক ও সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেদায়েতুল্লাহ হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ইমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, 'হত্যা ছাড়াও হেদায়েতুল্লাহর বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসার আরেকটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Divisions widen over July Charter’s status, implementation

Major political parties are divided over the July Charter’s implementation timeline

11h ago