ভৈরবে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ আ. লীগ নেতা ও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব সীমানায় মেঘনা নদীতে ইজারা ছাড়াই ৬টি বালু তোলার ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব সীমানায় মেঘনা নদীতে ইজারা ছাড়াই ৬টি বালু তোলার ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে ভৈরব পৌরসভার কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টুর বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব বালু ভৈরব উপজেলা সদর ও এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ও নিচু জমি ভরাট, ভবন নির্মাণসহ নানা ধরনের বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অবাধে বালু তোলার ফলে জেলেদের নদীতে মাছ ধরতে অসুবিধা হওয়ার পাশাপাশি নদী তীরবর্তী ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে সরাইল ও ভৈরব উপজেলার অন্তত ৮ থেকে ১০টি গ্রাম।

অবাধে বালু তোলার ফলে জেলেদের নদীতে মাছ ধরতে অসুবিধা হওয়ার পাশাপাশি নদী তীরবর্তী ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

অবাধে বালু তোলার কারণে সরাইলের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়টি কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির একাধিক সভায় আলোচিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন, ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে অবাধে বালু তুলে যাচ্ছে তারা।

জানা গেছে, এই চক্রটির সঙ্গে রয়েছেন ভৈরবের পৌর কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু ও স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন মুসা। তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বালু উত্তোলনকারীরা তাদের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিচ্ছে।

সরাইলের রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা ছালাতুর রহমান সবুজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভৈরবের বালুখেকো চক্রটি ইতোমধ্যে যে সর্বনাশ করেছে, তাতে নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠ, হাট-বাজার ও গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।'

ভাঙনে সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, বাজার ও রাইস মিল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আবুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভৈরবের কাউন্সিলর মিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা মুসার নেতৃত্বে অনুমতি ছাড়াই নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে।'

সরাইলের চুন্টা ইউনিয়নের নরসিংহপুরের জুনায়েদ মিয়া বলেন, '৫ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছি। এরপরও সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি, কখন আমাদের ভবন পানিতে চলে যায়। অবাধে বালু তোলার কারণেই নদীর পাড় ভাঙছে।'

ওই এলাকার আজবপুর বাজারের নাইট গার্ড তাজুল ইসলাম বলেন, 'গত শনিবার রাতেও চোখের সামনে নদীর পাড় ভাঙতে দেখেছি।'

গত রোববার দুপুরে নদীপথে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব অংশের মেন্দিপুর এলাকায় মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে ৬টি ড্রেজার কাছাকাছি এলাকা থেকে বালু তুলে নৌকায় লোড করছে। একটি ড্রেজারের চালক বোরহান মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, 'একেকটি ড্রেজার দিয়ে বড় সাইজের নৌকায় দিনের বেলা অন্তত ১০-১২ বার বালু উত্তোলন করা যায়। একটি নৌকায় বালু বোঝাই করতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে।'

বালু উত্তোলনে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বালু নদীর তীর থেকে উঠানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের ওই অংশ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম করে মাসখানেক ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এর লাগোয়া বিপরীত পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা অংশ থেকেও নিয়মিত বালু তোলা হয়।

বালু উত্তোলনে কোনো ধরনের অনুমতি না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে 'ম্যানেজ' করেই ভৈরবের ২ প্রভাবশালী এই কাজটি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভৈরব পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈশাখ মাস পর্যন্ত আমি নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করেছি। আমার সঙ্গে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনও ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। এখন কে বা কারা বালু তুলছে আমি জানি না।'

তিনি বলেন, 'ড্রেজারগুলো বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বালু তোলা হয়। আমার কাজের সময় ব্যবহার করা একই রকম ড্রেজার যদি বালু তুলে থাকে তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। লোকজন না জেনেই আমার কথা বলে।'

এ বিষয়ে জানতে ভৈরবের আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোশারফ হোসেন মুসার মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ বলেন, 'মেন্দিপুর এলাকার বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই। শুনেছি কখনো তারা মেন্দিপুর আবার কখনো সরাইলের অংশে বালু তোলে। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও কাজ শেষ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়।'

এ বিষয়ে ইউএনও জানান, বালু তোলার বিষয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেখানে রোববার বিকেলে লোক পাঠিয়েছিলেন। তবে কোনো ড্রেজার পাওয়া যায়নি। সোমবারও সেখানে লোক পাঠানো হবে। কারা বালু তুলছিল সে বিষয়টি জানা যায়নি বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

47m ago