পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশ

বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে।

আজ সোমবার ময়মনসিংহের টাউনহল অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'জিয়াউর রহমান ক্ষমতার এসে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান না করে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেন, যার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। এরশাদের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। খালেদা জিয়া জন চাপে উদ্যোগ নিলেও চুক্তি করেননি। শেখ হাসিনার উদ্যোগে চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। সংঘাত জিইয়ে রাখার ফলস্বরূপ আজ সেখানে কুকি-চিনের আনাগোনা, সেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দেশীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী। যা পাহাড়-সমতল সর্বত্র অশান্তির কারণ।

তিনি বলেন, 'এ বছর প্রস্তাবিত বাজেটে কোথাও আদিবাসীদের কথা নাই। অথচ আমরা চেয়েছিলাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ থাকবে। আজ পাহাড়ে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল-মোটেল রিসোর্ট হয়েছে যার বদলা পাহাড়িরা দিচ্ছ। এসব উন্নয়ন পাহাড়ের মানুষের জন্য নয়, বাঙালিদের ভোগের জন্য। নিরাপত্তার চশমা দিয়ে দেখে বিচ্ছিন্নতার জিগির তুলে সেখানে সেনা শাসন জিইয়ে রাখা চলবে না।'

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি ছিল বিধায় সেখানে শান্তি চুক্তি করতে হয়েছিল। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করেই অশান্তির বীজ দানা বেধেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সেই বিরোধ জিইয়ে রেখেছে। সরকারের ভাষ্যমতে চুক্তির ৭২টি শর্তের মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়ন করেছে যেখানে আমরা বলছি ২৫ টি।'

'চুক্তিতে বলা ছিল পাহাড়ি অঞ্চল হবে আদিবাসী অধ্যুষিত। কিন্তু আজ সে অঞ্চলে প্রচুর স্যাটেলার যা চুক্তি বিরোধী। পাহাড় সমতলে কোথাও ভূমি অধিকার নাই। উন্নয়নের নামে তাদেরকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আজ সময় এসেছে সবাইকে অধিকারের দাবিতে একত্রিত হয়ে গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করার,' তিনি যোগ করেন।

বাংলাদেশ জাসদের ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, 'সব জাতিগোষ্ঠীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশ আজ শোষণমূলক, বৈষম্যমূলক, সাম্রাজ্যবাদী অবস্থান গ্রহণ করেছে। শান্তি শৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পাহাড়ের ভূমি সমস্যা সমাধান করতে হবে, চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।' 

বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলে। কিন্তু সংবিধানে আদিবাসীদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়নি যা আমাদের জন্য লজ্জার। আজকে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষা করতে হলে পাহাড়ি, আদিবাসীদের সাংবিধানিক মর্যাদা এবং চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে রক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করলেই স্বাধীনতা বাস্তবায়ন হবে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমাদের এ সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।'

জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা বলেন, 'শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, আজও প্রধানমন্ত্রী তিনি তবুও কেন চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। আজ আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না৷ পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেই সমতলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্রুত ভূমি সমস্যা বাস্তবায়ন করতে হবে, চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।'

এ এল আর ডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, '২৫ বছর পরেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি, সরকার ক্ষমতায় থেকেও এ চুক্তি বাস্তবায়ন না করা হতাশা জনক।'

Comments

The Daily Star  | English

World Bank lowers growth forecast for Bangladesh to 3.3% in FY25

The WB attributed the overall deceleration in the first three quarters of FY25 to a sharp decline in private and public investment

28m ago