আমি আরামপ্রিয় না, পরিশ্রমী অভিনেতা: আফরান নিশো
আফরান নিশো বাংলাদেশের একজন মেধাবী অভিনয়শিল্পী। তার অভিনয়ের ভক্ত সব বয়সী মানুষ। যে কোনো চরিত্রে মিশে যাওয়ার প্রবল ক্ষমতা তার আছে। নাটক কিংবা ওয়েব ফিল্ম দুই জায়গাতেই জয়-জয়কার এই অভিনেতার।
এবারের ঈদে সুড়ঙ্গ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক ঘটছে আফরান নিশোর। প্রথম সিনেমা মুক্তি, ক্যারিয়ারের স্ট্রাগল, সাফল্য, তুমুল জনপ্রিয়তাসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
ছোট পর্দা থেকে ওটিটি, তারপর বড় পর্দায় অভিষেক, কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
আফরান নিশো: ছোট পর্দা বড় পর্দা বিশ্বাস করি না, আমি অভিনেতা, অভিনয় করি। ওইভাবে বিচার করি না। অভিনয়টাই এখানে মুখ্য। দর্শকরা একজন শিল্পীর অভিনয় দেখেন। শিল্পীও সব মাধ্যমে অভিনয় করেন। ছোট পর্দায় ছোট অভিনয়, বড় পর্দায় বড় অভিনয় তা না বিষয়টি। পরিস্থিতি বুঝে অভিনয় করতে হয়, গল্প ও পরিবেশের পরিবর্তন হয়। অভিনয়ের ধরন পরিবর্তন হয়। দিন শেষে সব মাধ্যমে অভিনয়টাই করতে হয়।
কিন্তু বড় পর্দায় তো প্রথম অভিনয়?
আফরান নিশো: বড় পর্দায় প্রথম কাজ, কিন্তু অভিনয় প্রথম না। আমার এই দীর্ঘ পথচলায় কিংবা দীর্ঘ জার্নিতে কষ্ট, স্ট্রাগল, করতে হয়েছে। বার বার ব্যর্থ হতে হয়েছে। আমি বার বার ব্যর্থ হয়েছি। ২০০৫ সাল থেকে পুরোপুরি নাটকে অভিনয় শুরু করি সিরিয়াসভাবে। ২০০০ সাল থেকে মডেলিং শুরু করি। পদে পদে আমাকে প্রমাণ দিতে হয়েছে।
আমি কখনো মঞ্চে অভিনয় করিনি। কখনো কোথাও অভিনয় শিখে আসিনি। সিনিয়রদের দেখে দেখে শিখেছি। অনুকরণ না অনুসরণ করেছি। সিনিয়ররা কীভাবে অভিনয় করেন, সংলাপ দেন, সবকিছু দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে সিনিয়র শিল্পীরা একটি করে ইনস্টিটিউট। পথ চলতে চলতে তাদের কাছ থেকে নিয়েছি, জেনেছি।
কাউকে কি অভিনয়ের গুরু মেনেছেন?
আফরান নিশো: অভিনয়ের গুরু মেনে নিয়েছি একজনকে। একজন হুমায়ুন ফরীদিকে আমি গুরু মানি। তার সঙ্গে হয়ত অনেক আড্ডা হয়নি, কিন্তু প্রেমটা হয়েছে। তার অভিনয়ের প্রেমে মশগুল আমি। তিনি আমার গুরু, আমার আইডল, অনেক কিছু।
অভিনেতা হিসেবে আপনি প্রচণ্ড জনপ্রিয় কবে থেকে বুঝতে পারলেন?
আফরান নিশো: এটা একদিনে হয়নি। অভিনয় করতে করতে একদিন আমি বুঝতে পারলাম আমার নাটক দর্শকরা দেখেন। মানুষ বলা শুরু করলেন আমার নাম। আমার কাজ নিয়ে বলতে শুরু করলেন। শুরুতে এত আলোচনা হতো না। আমি আপোস করতাম না। আমি আরামপ্রিয় না, পরিশ্রমী অভিনেতা। অনেক কষ্ট করেছি। ভিন্ন ভিন্ন স্ক্রিপ্ট পছন্দ করতাম, এখনো করি। লেগে থাকা ব্যাপারটা ছিল। একটা চরিত্র থেকে শিখেছি। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। কিছু কাজ সমাদৃত হলো। ন্যাচারাল অভিনয় করা শুরু করলাম। একসময় গ্রহণ করলেন, আমার নাম বলতে লাগলেন অনেকে, বুঝতে পারলাম কিছু একটা হচ্ছে, আমি জনপ্রিয়তার কাতারে এসে গেছি। এগুলোর জন্য সময় লেগেছে।
সিনেমায় আসাটার গল্পটা?
আফরান নিশো: সিনেমায় আসাটা একটা দায়িত্ব। বিগ স্ক্রিন কি আসলেই বিগ স্ক্রিন? আমি অভিনয় ছাড়া কিছুই করি না। অভিনয় প্যাশন। এতগুলো টিম মেম্বার কাজ করেন একটি সিনেমায়। অনেকে মিলে কাজটি করা, একার নয় কিন্তু। আমি একজন প্রফেশনাল অভিনেতা। প্রফেশনাল অভিনেতা হয়ে উঠলাম এক সময়। নাটকে বাজেট কম ছিল, সেটা বেড়ে অনেক হলো। তারপর ওটিটিতে এলাম। পদে পদে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ২৩ বছরের ক্যারিয়ার আমার। ১৫ বছর ধরে শুধু নাটক আর নাটকই করছি। নাটক ও ওটিটিতে অভিনয় করে এবার বড় পর্দায় বা সিনেমায় অভিষেক হতে যাচ্ছে আমার।
প্রথম সিনেমা মুক্তি পাবার আগ মুহূর্তে কোনো ভয় কাজ করছে কি?
আফরান নিশো: না। কোনো ভয় নাই। হারাবার কিছু নাই, জেতার কিছু নাই। অসংখ্য মানুষ আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, সুড়ঙ্গ সিনেমা মুক্তির জন্য। আমার কলিগরা, সহশিল্পীরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তারা তাদের ওয়ালে সুড়ঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন, শেয়ার করছেন। আমাকে ওয়েলকাম জানাচ্ছেন। এইসব ভালোবাসা আমার বড় পাওয়া। সুড়ঙ্গ মুক্তির আগেই সবার কাছ থেকে যে রকম ফিডব্যাক পাচ্ছি বড় পাওয়া, বড় ভালোলাগা। আমি ট্র্যাডিশনাল ওয়েতে এগিয়েছি।
ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার বক্তব্য?
আফরান নিশো: ক্যারিয়ার সব সময় এক রকম থাকবে না, মানুষ সব সময় একরকম থাকে না। মানুষ বুড়ো হয়। শরীরে ভাঁজ পড়ে। যুগে যুগ মানুষ পরিবর্তন হয়। এটা ন্যাচারাল ব্যাপার। অনেক সিনিয়ররা ছিলেন, তাদের পথ ধরে আমরা অভিনয়ে এসেছি। সফল থাকা বা হওয়া সময়ের ব্যাপার। সবসময় একরকম চরিত্রে অভিনয় করতে পারব না। সময়ের সঙ্গে চলতে হবে। কিন্তু ভালো মানুষ হওয়ার তাগিদ থাকবে সবসময়।
সুড়ঙ্গ সিনেমা নিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
আফরান নিশো: আত্মবিশ্বাস আমার আছে। প্রত্যাশাও অনেক। সুড়ঙ্গ রিলিজ হলে সবাই বুঝবেন। টিম প্রচুর শ্রম দিয়েছেন। পরিচালক রায়হান রাফী শ্রম দিয়েছেন। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। ভাগ্যে থাকলে বড় কিছু হবে।
অভিনয়ের জন্য কী দরকার?
আফরান নিশো: অভিনয়ের জন্য চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, অভিনয় জানা গুরুত্বপূর্ণ। এটা চিরসত্য।
Comments