ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় কমেছে

এনবিএফআই, ঋণ,

চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত নন-ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের (এনবিএফআই) ঋণ আদায় কমেছে। টাকার অবমূল্যায়ন ও বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে এনবিএফআইয়ের ঋণ আদায় ২০২২ সালের আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) সহ-সভাপতি কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধে সমস্যার মুখে পড়ায় ব্যাংক ও এনবিএফআই উভয়েরে ঋণ আদায়ের হার কমেছে।'

'কাঁচামালের দাম অনেক বাড়ায় বেশিরভাগ কোম্পানি সমস্যায় পড়েছে। তাছাড়া, এই দাম বৃদ্ধি তারা ভোক্তাদের ওপর পুরোপুরি চাপিয়ে দিতে পারে না। বিশেষ করে আমদানি কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি বড় সত্য।'

অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি উদ্যোক্তারা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নির্মাণ খাত থেকে ঋণ আদায় সবচেয়ে বেশি ২২ দশমিক ৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ২০ শতাংশ, পরিবহন খাতে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, ব্যবসা ও বাণিজ্য থেকে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং শিল্প খাত থেকে ঋণ আদায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।

কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'প্রায় সব ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যেহেতু তারা এনবিএফআইয়ের প্রধান ঋণগ্রহীতা, তাই এনবিএফআইয়ের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়েছে।'

বিএলএফসিএ'র সভাপতি গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, 'অনেক এনবিএফআইয়ের আমানত কমেছে, তাই গত বছর তাদের অগ্রিম ও ঋণও কম ছিল। ফলে, আদায়ও কমেছে।'

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক  গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ায় এনবিএফআইগুলোর আমানতও কমেছে। কারণ এনবিএফআইতে সঞ্চয় ও সুদের হার ব্যাংকের তুলনায় কম।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে, যা আগের ২ মাসে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'ব্যাংকিং খাতের তুলনায় এনবিএফআইতে সঞ্চয়ের সুদের হার কম। ফলে, মানুষ সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংক বেছে নেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সঞ্চয়ে আকৃষ্ট করতে ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের মুভিং এভারেজ রেটের সঙ্গে আরও ২ শতাংশ পয়েন্ট যুক্ত করার অনুমতি দিয়েছে। যদি মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে ব্যাংকগুলো আবার উচ্চ সুদের হার দিতে পারবে, কারণ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যযুক্ত হার দিতে পারে। আরও এটি এখন প্রত্যাশিত, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রেজারি বিলের হারে পরিবর্তন।'

ডিবিএইচ ফাইন্যান্সেরর আমানত ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন ঋণের প্রধান সাবেদ বিন আহসান বলেন, 'কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়কারীদের আস্থা অর্জন করায় এনবিএফআইগুলো আমানত পাচ্ছে।

কিন্তু, আস্থার বিষয়টি কিছু এনবিএফআইকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যদিও ব্যাংকিং খাতের জন্য এটি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমানত আকৃষ্ট করতে এনবিএফআইগুলো বেশি প্রভাবিত হয়েছিল।'

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago