‘কোরবানির মাংসের যথাযথ বণ্টন অনেকে করেন না’

কাজি মদিনা। ছবি: স্টার

কাজী মদিনা। পুরো নাম কাজী গুলশান নাহার। জন্ম ২১ নভেম্বর ১৯৪২ সালে রংপুর জেলায়। বাবা প্রখ্যাত সাংবাদিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিস। বাবার পরিচয় সূত্রে মদিনা নামটি দিয়েছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার প্রথম জীবন কেটেছে কালকাতায়, পরে ঢাকায়।

১৯৬৪ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান টেলিভিশনে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু। এরপর তিনি সরকারি বদরুন্নেসা কলেজ, ইডেন কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরু থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করে আসছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদকসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা। সম্প্রতি তিনি তার কাজ ও সম-সাময়িক বিষয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

ডেইলি স্টার: আপনার সাফল্যের পেছনে সাংবাদিক বাবার ভূমিকা কেমন ছিল?

কাজী মদিনা: আব্বার বিশাল ভূমিকা ছিল। আমার আব্বা কাজী মোহাম্মদ ইদরিস একজন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল একজন সাংবাদিক ছিলেন। একেবারে ছেলেবেলা থেকেই আমি মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। শিশুকালে কলকাতায় যে বাড়িতে ছিলাম, সেই বাড়ির ৩ তলায় থাকতেন প্রখ্যাত সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ ও ২তলায় থাকতেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এদের সান্নিধ্যে, আদরে বেড়ে উঠেছি। চাচাদের খুব কাছ থেকে দেখেছি, স্নেহ পেয়েছি। এতে আমি আজকের আমিতে পরিণত হয়েছি।

ডেইলি স্টার: অনেক গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন। পথচলায় বিশেষ কারও প্রেরণায় কথা মনে পড়ে?

কাজী মদিনা: আমি অনেক গুণী মানুষের কাছাকাছি এসেছি। ১৯৫০ সালে আমরা কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসি। আমাদের বাড়িতে আসতেন তখনকার প্রথম সারির লেখক, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা। তাদের আলোচনা শিশুকাল থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তকে গৃহশিক্ষক হিসেবে পাই। তার পাণ্ডিত্য, লেখক সত্তা আমাকে উজ্জীবিত করেছে।

আমার জীবনে মায়ের (মির্জা আজিজ ইদরিসের) ভূমিকা অনন্য। তিনি আমাকে সমাজের সব সংকট অতিক্রম করে পথ চলতে শিখিয়েছেন।

ডেইলি স্টার: সমাজে নারীদের বেড়ে উঠতে বা সৃজনশীল কাজ করতে অনেক বাধা পেতে হয়। আপনার ক্ষেত্রে কী হয়েছিল?

কাজী মদিনা: না। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো বাধা পেতে হয়নি। আমি আগেই বলেছি আসলে আমার বাবা-মা ছিলেন বেশ উদার মনের মানুষ। সেই সময়ে আমাদের বাড়িতে বড় বড় মানুষের অবাধ বিচরণ ছিল। তখনকার সময়ের প্রায় সব প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক সবারই আড্ডা ছিল আমাদের বাড়িতে। ছোটবেলা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরিতে শহীদ মিনারে গিয়েছি। এইভাবে আমার বাবা-মায়ের উদারতার জন্যই পথ চলতে বাধা পাইনি।

ডেইলি স্টার: আপনার এবং নজরুল ইসলামের যৌথ সম্পাদনার একটি বই আছে 'আমার ঢাকা আমাদের ঢাকা'। সেই ঢাকা এখন অনেক বদলেছে। এই বদলে যাওয়াটা কতটুকু জনবান্ধব হয়েছে?

কাজী মদিনা: ৫০ দশকের ঢাকা আর এখনকার ঢাকার বদল প্রতি মুহূর্তে ঢাকাবাসী উপলব্ধি করছে। এই ঢাকা একেবারেই নারীবান্ধব নয়। ঢাকার অনেক কিছু উন্নয়ন হলেও ঢাকা এখন রিকশার শহর, বস্তির শহর, যানজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতার শহরে পরিণত হয়েছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জলাশয় আর অসংখ্য গাছ ছিল। এখন গাছ অনেক কমে গেছে, নেই বললে চলে। খেলার মাঠ নেই। চারিদিকে দালানকোঠা আর রাস্তা। নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই শহরে এত গরম। মানুষের বাঁচার পথ বন্ধ হয়ে আসছে দিন দিন। আজকে চারপাশে যে অবস্থা হয়েছে তার জন্য দায়ী মানুষ।

ডেইলি স্টার: দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী। তবু নারীরা ঢাকায় নিরাপদে চলতে পারেন না। তাহলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাটা ঠিক কোনদিকে?

কাজী মদিনা: অল্প সংখ্যাক নারীর উন্নয়ন হয়েছে সমাজে। আমরা যারা সমাজের একটা পর্যায়ে গিয়েছি, এটা ব্যক্তিগত উদ্যাগে কেবল। তবে আমার ধারণা এটা ১০০ ভাগ নারীর মধ্যে মাত্র ২০-২৫ ভাগ হবে। এই এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও বৃহত্তর নারী সমাজ যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। কেবল এগিয়েছে উন্নয়নের অবকাঠামো...এখনো নারী সমাজ মানসিকভাবে স্বাধীন হতে পারেনি। গ্রাম বাংলার নারীরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সংসারে।

ডেইলি স্টার: রাজনীতিবিদরা স্লোগান দেন- জনগণের জন্যই সব। কিন্তু চলমান রাষ্ট্র-রাজনীতি পরিবেশের জন্য কীভাবে ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

কাজী মদিনা: এসব আলাপ মুখে মানায়। কাজের বেলায় কিছু দেখি না। এককথায় বলব, রাষ্ট্রের আশ্রয়ে ব্যক্তিরাই পরিবেশের ক্ষতি করছে। সেটা হতে পারে আমি কিংবা আপনিও!

ডেইলি স্টার: মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদ নিয়ে আপনার শৈশবের কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

কাজী মদিনা: ঈদুল আজহা হলো কোরবানির ঈদ। শৈশবে যে স্মৃতি ছিল তা আজও বিদ্যমান। তবে বড় হয়ে একটা বিষয় নাড়া দেয়- তা হলো কোরবানির মাংস বণ্টনের বিষয়। কোরবানি মানেই ত্যাগ। তাই যদি হয় তাহলে কোরবানির পুরো মাংসই বিলিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু বিধান অনুযায়ী আমরা এক ভাগ গরিব, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, আরেক ভাগ যিনি কোরবানি দেন তার। তাহলে বেশির ভাগ মাংস থেকে গেল নিজের কাছে। এটা ত্যাগ হলো কী করে?

Comments

The Daily Star  | English

New Trump tariffs: early modelling shows most economies lose – the US more than many

The tariffs will compel foreign producers to lower their prices. But these price decreases only partially offset the cost of the tariffs, so US consumers pay higher prices.

45m ago