৩২ নম্বর পাশের বাড়িতে কারা ছিল

আওয়ামী লীগ

প্রায় ৭ বছর আগের কথা। আমি তখন আওয়ামী লীগ নিয়ে গবেষণা করছি। চেষ্টা করছি দলটির ইতিহাস লেখার। পাণ্ডুলিপি বড় হয়ে যাওয়ায় ঠিক করলাম বইটি একাধিক খণ্ডে প্রকাশ করব।

পরিকল্পনা অনুযায়ী 'আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০' নামে প্রথম খণ্ড প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হলো ২০১৬ সালের শেষের দিকে।

দ্বিতীয় পর্বটি সাজালাম একাত্তর সাল নিয়ে। নাম দিলাম 'আওয়ামী লীগ: যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১'। প্রথমা প্রকাশন থেকে ছাপা হলো ২০১৭ সালে। এই বইয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছিলাম। ঘটনাটি হলো—২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার পর তার স্ত্রী ও ২ ছেলে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

মমিনুল হক খোকার একটি বইয়ে এ তথ্য পাই। বইয়ে তিনি লিখেছেন, সাবেক আমলা ও সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন পাশের বাড়িতে থাকতেন।

মমিনুল হক সম্পর্কে শেখ মুজিবের ফুপাতো ভাই। যেহেতু স্বজন, আমি ধরে নিয়েছিলাম তথ্যটি সঠিক। নিশ্চয়ই তিনি যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে লিখেছেন। এটি আমার বইয়ে উদ্ধৃত করি।

পরে আমার এক বন্ধু তাবশিরের কাছ থেকে জানতে পারি, পাশের ৬৭৬ নম্বর বাড়িটির মালিক প্রয়াত ডা. আবদুস সামাদ খান চৌধুরী। বন্ধুটি ওই বাড়ির ঘনিষ্ট আত্মীয়। ওই বাড়ির বড় ছেলে তার ভগ্নিপতি। তিনিই মুজিব পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে মোশাররফ হোসেনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি ছিলেন ওই বাড়ির ভাড়াটে।

বুঝতে পারলাম মমিনুল হক হয়তো কারো কাছে শুনে এটি লিখে দিয়েছেন। তথ্য যাচাই করে দেখেননি। ফলে বেগম মুজিবের আশ্রয়দাতার পরিচয় থেকে গেছেন আড়ালে।

আমি আমার বইয়ের তথ্য যথারীতি সংশোধন করলাম। তারপর গিয়ে হাজির হলাম ওই বাড়িতে, তাবশিরকে সঙ্গে নিয়ে। পরিচয় হলো সামাদ খান সাহেবের বড় ছেলে আহাদ খান চৌধুরী (বাবু) ও ছোট ছেলে আবদুল আলীম খান চৌধুরীর (সালমান) সঙ্গে।

জানলাম ২৫ মার্চ রাতের ঘটনা, যেটুকু তারা দেখেছেন বা করেছেন। এক পর্যায়ে আলাপ গিয়ে ঠেকলো ১৫ আগস্টে।

তারা বললেন, তাদের পরিবার ওই দিনের ঘটনারও সাক্ষী। দেখেছেন ও শুনেছেন অনেক কিছু।

আমি ২ ভাইয়ের কথা রেকর্ড করলাম। এর ভিত্তিতে লেখা হলো একটি বই, '৩২ নম্বর পাশের বাড়ি: ২৫ মার্চ ১৫ আগস্ট'। বইটি বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হলো ২০২০ সালে। বইটি আমি উৎসর্গ করেছি আমার ঢাকা কলেজের সতীর্থ, ৩২ নম্বর রোডের ওই বাড়ির ছেলে শেখ কামালকে, যে ১৫ আগস্ট ভোরে আততায়ীর গুলিতে অন্য সকলের সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন।

এ বইয়ে পাশের বাড়ির ২ ছেলের সাক্ষাৎকারে অনেক অজানা কথা উঠে এসেছে, যা প্রচলিত বয়ানে নেই বা আমি জানতাম না। কিন্তু এ বাড়ির ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে ২টি রাত, ২৫ মার্চ আর ১৫ আগস্ট। একটি একাত্তরে, অন্যটি পঁচাত্তরে। এ বাড়িটি এবং এই ২টি রাত এ দেশের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।

প্রতিবেশীর স্মৃতিতে এতদিন যা চাপা পড়ে ছিল, এ বইয়ে তা অবমুক্ত হলো। সেই ২ রাতের ইতিহাসে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই বয়ান।

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

1h ago