ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয় কমেছে
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ২৩টি এনবিএফআই প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠান অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ওই প্রতিবেদন দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ কমেছে।
বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ না করা, সুদ আয় কমে যাওয়া, পুঁজিবাজার থেকে কম আয়সহ ইত্যাদি কারণে এসব এনবিএফআইয়ের আয় কমেছে।'
এছাড়া, গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সুদ নীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট সুদ আয় কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে ঋণ ও ঋণের সুদের হারের ব্যবধান শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং বছরের প্রথম ছয় মাসে যার গড় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।
কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'এছাড়া, মূল্যস্ফীতির চাপে গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। তাই এনবিএফআইগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে, ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ও কমেছে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে এনবিএফআই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান্তি কুমার সাহা আরও বলেন, এছাড়া অনেক এনবিএফআইয়ের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আছে। কিন্তু, কম লেনদেনের কারণে সেখান থেকেও কোনো লাভ আসেনি।
আয় কমে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইডিএলসি সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে ৭২ কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম এবং ডিবিএইচের আয় প্রায় ৯ শতাংশ কমে ৪৯ কোটি টাকা হয়েছে।
একইভাবে লংকা বাংলা ফাইন্যান্সের মুনাফা প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং লিমিটেডের মুনাফা ২০ শতাংশ কমে ১৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে মুনাফা কমেছে বিডি ফাইন্যান্সের। প্রতিষ্ঠানটির অর্ধবার্ষিক মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭২ শতাংশ কমে ৫ কোটি টাকা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালিকাভুক্ত এনবিএফআইয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমানতকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়।
এই কর্মকর্তা জানান, এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা সংকট, আমানতের ধীর প্রবৃদ্ধি এবং ঋণ আদায়ে ধীর গতির কারণে বাংলাদেশের আর্থিক খাত তারল্য চাপে আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুনে ব্যাংকিং খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।
তারল্য চাপের পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির খবর সামনে আসায় এনবিএফআইগুলো তাদের সুনাম নিয়েও কঠিন সময় পার করছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, 'সবমিলিয়ে আমানতকারীদের আকর্ষণ করা তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রেস টেস্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন ৩৫টি এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি গত বছর খেলাপি ঋণ ও দুর্নীতির কারণে রেড জোনে ছিল।
Comments