শ্রীমঙ্গল

মজুরি না পাওয়ায় ১০ দিন ধরে কর্মবিরতিতে ৪৭০ চা শ্রমিক

কর্মবিরতির নবম দিনে গতকাল শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে হোসনাবাদ চা বাগানের ৪৭০ জন শ্রমিক মজুরি না পাওয়ায় গত ১০ দিন ধরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করছেন। 

প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি দেওয়ার কথা থাকলেও, গত ২ সপ্তাহ ধরে তারা মজুরি ও রেশন পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার কর্মবিরতির নবম দিনে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি ও রেশনের দাবিতে হোসনাবাদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যাত্রা করে। পরে হোসনাবাদ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের কালিঘাট চা বাগানের সামনে তারা অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সেখানে শ্রমিক নেতাদের অনুরোধে তারা আবার চা বাগানে ফিরে যায়। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা প্রমুখ।

সমাবেশে শ্রমিকরা বলেন, গত ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিন চা বাগানের সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন দেওয়ার কথা থাকলেও, দেওয়া হয়নি। একইভাবে গত বৃহস্পতিবারও সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন দেওয়া হয়নি। দুই সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে তাদের অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে।

বাগানের নারী চা শ্রমিক লক্ষ্মী কর্মকার বলেন, 'আমরা বাগানে কাজ করি। অনেক রোগ নিয়েও আমরা বাগানে কাজ করি। কিন্তু বাগানে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নাই, ভালো ওষুধ নাই। বাড়িঘর ভাঙা, মেরামত করে দেয় না।'

তিনি বলেন, 'আমরা কী অপরাধ করেছি যে বাগান মালিক আমাদের এভাবে সাজা দিচ্ছেন। বাসায় বাজার নিতে পারছি না।'

হোসনাবাদ চা বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক মালেক মিয়া বলেন, 'আমাদের বাগানে এটা নতুন নয়। কয়েক মাস পরপরই এভাবে মজুরি আটকে দেয়। মজুরির জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হয়। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই এই বাগান যেন সরকারের আন্ডারে নেওয়া হয়।'

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, 'হোসনাবাদ চা বাগান মালিক অনেক বছর ধরেই নিয়মিত শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছে না। বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের আগের বকেয়া থাকলেও তা পরিশোধ করা হচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন সময় বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নের আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অন্যান্য বাগান বাস্তবায়ন করলেও হোসনাবাদ চা বাগান কর্তৃপক্ষ তা মানছে না।'

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, 'আগামীকাল সোমবার বিষয়টি সমাধানের জন্য সময় নেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাগানে পাঠিয়েছি।'

জানতে চাইলে হোসনাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চা বাগানের মালিক বর্তমানে একটু অর্থনৈতিক সমস্যায় আছেন। এ কারণে সঠিক সময়ে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। আমি এই চা বাগানে ২ মাস আগে জয়েন করেছি। এ ২ মাসে এমন হয়নি। প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে টাকা আসে। তখন আমি স্টাফের মাধ্যমে মজুরি বিতরণ করি। আমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি শ্রমিকরা শিগগির মজুরি পাবেন।'

যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ শ্রম দপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকাল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে সরকার-শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হবে আশা করি।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh intensifies Covid-19 screening at Benapole amid surge in India

The move comes following an alert issued by the Directorate General of Health Services (DGHS) on June 6

2h ago