খরায় শুকিয়ে যাচ্ছে পাতা, অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে চা উৎপাদন ব্যাহত

অতিরিক্ত তাপমাত্রায় চা গাছের কুঁড়ি ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে যেতে থাকে।
চা-বাগান
শ্রীমঙ্গলের একটি চা-বাগান। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

চলমান তাপপ্রবাহ ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ও কীটপতঙ্গ ছড়িয়েছে চা বাগানে। এ অবস্থায় চলতি বছর কম ফলনের আশঙ্কা করছেন দেশের চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বৃষ্টিপাতের জন্য অপেক্ষা না করে চা বাগানে কৃত্রিম উপায়ে সেচ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে তাপমাত্রা ছিল গড়ে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এত তাপমাত্রা মানুষ ও গাছপালা উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা বর্তমানে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, যা চা গাছের সহ্য সীমার থেকে অনেক বেশি।'

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে আরও কয়েকদিন।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

গত কয়েকদিন ধরেই মৌলভীবাজার জেলার তাপমাত্রার পারদ ৩০ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে অবস্থান করছে। 

আবহাওয়া কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, 'এই তাপমাত্রায় চা গাছের কুঁড়ি ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে যেতে থাকে।'

কীটপতঙ্গের আক্রমণে চা পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে গাছ পর্যাপ্ত পানি না পেলে উৎপাদন নিশ্চিতভাবে কমে যাবে বলে জানান তিনি।

সিরাজনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রচণ্ড তাপে কুড়ি ফোঁটার আগেই চা গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বাগানে লাল মাকড়সা ছড়িয়ে পড়ছে। কীটপতঙ্গ চা পাতার রস খায়। এতে পাতাগুলো মরে যাওয়ার আগে শুকিয়ে যেতে শুরু থাকে।'

'বৃষ্টি হলে পরিবেশ ঠাণ্ডা হলে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে,' বলেন তিনি।

টি প্ল্যান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান খরায় অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। দীর্ঘকাল এমন অবস্থা চলতে থাকলে চা শিল্প ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে।'

তিনি আরও বলেন, গত বছর এ সময়ে ৭০ শতাংশ চা গাছে কচি পাতা এসেছিল। এ বছর এর পরিমাণ ২০ শতাংশের কম।'

চা বাগান মালিকদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় চা শিল্প পুরোপুরি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। চা বাগানের জন্য জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্তত ৫-৭ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। এবার এমন হয়নি।'

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান দাপদাহ চায়ের জন্য ক্ষতিকর। চা গাছের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। যেমন, ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত চা গাছ খুব ভালো উৎপাদন দিতে সক্ষম। ৩০-৩৩ বা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে উৎপাদন মাঝারি হয়।'

'কিন্তু তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে চা গাছের উৎপাদন একদম কমে যায়,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'অতিরিক্ত তাপমাত্রার ক্ষেত্রে আমরা চা বাগানে চারার গোড়ায় কচুরিপানা দেওয়ার পরামর্শ দেই। প্রতিটি সেকশনে নতুন চারার ক্ষেত্রে কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।'

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাগানে শেড-ট্রি (ছায়াবৃক্ষ) লাগাতে হবে। নয়তো চা গাছ বাঁচানো সম্ভব হবে না। এজন্য আমরা বাগানে ২০ ফুট দূরে দূরে স্থায়ী ও ১০ ফুট দূরে দূরে অস্থায়ী শেডট্রি লাগাতে বলেছি।'

এই গাছগুলো অতিরিক্ত সূর্যালোককে বাঁধা দিয়ে চা গাছের জন্য উপযোগী আলো পেতে সাহায্য করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
   
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে ১৬৭টি বাগানে ৯ দশমিক ৩৮ কোটি কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের ৯ দশমিক ৬৫ কোটি থেকে ৩ শতাংশ কম। 

এ বছর ২ লাখ ৮৫ হাজার একরের বেশি জমি থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ২০ হাজার কিলোগ্রাম।

Comments