জাল ফেললেই ইলিশ
সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। মৌসুমের শুরুতে ইলিশ কম ধরা পড়লেও এখন জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ।
বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পটুয়াখালী কুয়াকাটার কাছে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চলতি আগস্ট মাসে ৩৫৬ কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে। সেসময় অন্যান্য মাছ বিক্রি হয়েছে আরও ৮৮ কোটি টাকার।
সব মিলিয়ে মোট ৪৪৪ কোটি টাকার মাছ বিক্রির রেকর্ড হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, শিববাড়িয়া নদীর উত্তর পাড়ে মহিপুর ও দক্ষিণ পাড়ে আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চলতি মাসে মোট ৪ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
এসব ইলিশের কেজিপ্রতি গড় দাম ৮০০ টাকা হিসেবে এর মোট দাম দাঁড়ায় ৩৫৬ কোটি টাকা।
ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও ধরা পড়েছে ২ হাজার ২০০ টন। এর গড় মূল্য কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা হিসেবে মোট ৮৮ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, ইলিশসহ মোট ৪৪৪ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে, যা নতুন রেকর্ড।
তীরে ফেরা জেলেরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সাগরে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি। জাল ফেললেই ইলিশ ধরা পড়ছে।
গত রোববার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি এলাকার জেলে আবুল খায়েরের জালে একটানে ধরা পড়ে ১৭০ মন ইলিশ। সেগুলো বিক্রি হয়েছে ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকায়। মহিপুর মৎস্য বাজারের 'মিঠুন ফিশ' আড়তে সেই মাছ বিক্রি হয়।
স্থানীয় জেলেরা বলছেন, ওই উপকূলে এ যাবৎকালে কোনো জেলের জালে ধরা পড়া এটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মাছ।
এর আগে ১৭ আগস্ট রামগতি এলাকার সালাহউদ্দিনের ট্রলারেও একটানে ৯৬ মন ইলিশ ধরা পড়ে। সেগুলো মহিপুর বাজারে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।
ওই ট্রলারের মাঝি মো. ইউনুস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবারে ইলিশের আকৃতিও ভালো। ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশের সংখ্যা বেশি। এতে আমরা দামও ভালো পাচ্ছি। ধারদেনাও শোধ করতে পারছি।'
এফবি মরিয়ম ট্রলারের জেলে আ. মালেক খান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৩ জুলাই ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হওয়ার পর জেলেরা ইলিশ ধরতে সাগরে গেলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় জেলেরা আবার সাগরে যাওয়ার পর সবাই কম-বেশি ইলিশ পাচ্ছেন।'
তিনিও ৬০ মন ইলিশ পেয়েছেন। সেগুলো ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ মঙ্গলবার সকালে আলীপুরে এফবি জুবায়ের ইসলাম-২ ট্রলারের ৭০ মন ইলিশ ২৫ লাখ টাকায়, এফবি বিলকিস-১ ট্রলারের ৬০ মন ইলিশ ২০ লাখ টাকায়, এফবি বিলকিস-২ ট্রলারের ৭০ মন ইলিশ ২২ লাখ টাকায়, এফবি রকিবুল হাসান ট্রলারের ৫০ মন ইলিশ ১৭ লাখ টাকায়, এফবি মদিনা-১ ট্রলারের ৪০ মন ইলিশ ১৫ লাখ টাকায় ও এফবি রিফাত-২ ট্রলারের ১২০ মন ইলিশ ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।'
'এবার জেলেরা ইলিশের ভালো দামও পাচ্ছেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, '৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ৭০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ ১১ শ থেকে ১২ শ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির ওজনের ইলিশ ১৩ শ থেকে ১৬ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।'
গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি ইলিশ কমপক্ষে ৫০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইলিশের আমদানি মোটামুটি ভালো। ট্রলারের জেলেরা গড়ে ২০-২৫ মন করে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন। মোট কথা ইলিশের আমদানিতে কলাপাড়ায় জেলে, আড়তমালিক, ট্রলার মালিকসহ এ পেশায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।'
আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনসার উদ্দিন মোল্লা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও অন্যান্য মাছের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি আমরাও সচেষ্ট আছি। সাগর ও উপকূল দূষণ প্রতিরোধে সাগরগামী জেলেদের সচেতন করাও জরুরি। বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণ থেকে বঙ্গোপসাগরকে বাঁচানো দরকার।'
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও ইলিশ গবেষক মো. কামরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও আইন বাস্তবায়ন অর্থাৎ মা ইলিশ সংরক্ষণ, জাটকা সংরক্ষণ, অবৈধ জাল উচ্ছেদে বিশেষ অভিযান, অভয়াশ্রম পাহারা ও সর্বোপরি সাগরে ৬৫ দিনের মাছ ধরা নিষেধ বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার নিরলস পরিশ্রমের কারণে ইলিশের উৎপাদন বেশি।'
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার ইলিশ দেরিতে ধরা পড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
Comments