উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে আফগানদের সঙ্গে ড্র বাংলাদেশের
ম্যাচটি ছিল আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। সেই ম্যাচের প্রীতি আর থাকেনি। মাঠ থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ডাগআউটেও। তাতে লাল কার্ড দেখেন দুই দলের দুই কোচ। তাতে রেগে নিজেদের খেলোয়াড়দের উঠিয়ে নিতে চেয়েছিলেন আফগান কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি। তবে এমন উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে কেউ জেতেনি। আরও একবার ড্র মেনেই মাঠ ছাড়তে হলো দুই দলকে।
বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। জাবার শারজার গোলে আফগানিস্তান এগিয়ে যাওয়ার পর মোরসালিনের গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। এর আগে দুই দলের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল।
এদিন ম্যাচের শুরুতে কিছুটা এলোমেলো ছিল বাংলাদেশ। সেই সুযোগে বেশ কয়েকবার আক্রমণে ওঠে সফরকারীরা। কয়েক দফা দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করে দলটি। বাংলাদেশ তেমন আক্রমণ জমিয়ে উঠতে পারেনি। ৪০তম মিনিটে প্রথম অনটার্গেট শট নেন রাকিব। তবে তার সেই শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকান আফগান গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ হামিদি।
তবে এর মাঝে ম্যাচের ১৭তম মিনিটের পর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায় মাঠে। আফগান অধিনায়ক ফারশাদ নূরের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। সেই ট্যাকলে খুব একটা পরিষ্কার ছিল না। তাতেই ক্ষোভ ছিল আফগান কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরির। এরপর রাকিবের দিকে বাড়ানো বল ঠেকাতে গিয়ে ফাউল করেন আফগান ডিফেন্ডার। তাতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন আফগান কোচ ।
সেই উত্তেজনা থেকে শুরু হয় দুই দলের অফিশিয়ালদের মধ্যে কথা কাটাকাটি। তার এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ডাগআউটের দিকে তেড়ে আসেন আফগান কোচ। তার কথার জবাব দেন বাংলাদেশের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন। পরিস্থিতি শান্ত করতে মুতাইরিকে লাল কার্ড দেখান। তাতে উত্তেজিত হয়ে খেলোয়াড়দের মাঠ ছাড়তে বলেছিলেন তিনি। তবে পরিস্থিতি শান্ত করেন কোচিং স্টাফের অন্য সদস্যরা। পরে আল মামুনকেও লাল কার্ড দেখান রেফারি।
প্রথমার্ধে অবশ্য গোল করার মতো দারুণ একটি সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে সৃষ্ট জটলায় বাঁ প্রান্তে ছোট ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে যান জামাল ভূঁইয়া। দারুণ এক ভলিও করেছিলেন তিনি। কিন্তু একেবারে গোলমুখ থেকে ব্লক করে সে যাত্রা বাংলাদেশকে হতাশ করেন ডিফেন্ডার হানিফি।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা জোরালোভাবে করে আফগানিস্তান। বেশ চাপে রেখে ৫৪তম মিনিটে গোল আদায় করে নেয় দলটি। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে পেছনে দিকে সরেও লাফিয়ে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন শারজা। ঝাঁপিয়ে চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। হাতে লাগলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।
আর গোল দিয়েই যেন তেতে ওঠে আফগানরা। পরের মিনিটে দুই খেলোয়াড়কে এড়িয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন তাউফি স্কান্দারি। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এর কিছুক্ষণ পরই খেলা গুছিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ৬১তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রিকিক পায় তারা। তবে জামালের শট বারপোস্টের উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এর পরের মিনিটেই সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। রাকিবের অসাধারণ এক থ্রু পাস ধরে ডান প্রান্ত থেকে দারুণ এক ক্রস করেন বিশ্বনাথ। গোলমুখে একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়ে যান মোরসালিন। আলতো টোকায় বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল হয়নি ১৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের। এ নিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে তিনটি গোল করলেন তিনি।
৬৮তম মিনিটে বাংলাদেশের পেনাল্টি জোরালো আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। ডি-বক্সে হাতে লেগেছিল আফগান এক খেলোয়াড়ের। ৮৩তম মিনিটে ফাঁকায় হেড নেওয়ার সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বিশ্বনাথ। পরের মিনিটে এগিয়ে যেতেই পারতো বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় তপুর হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান আফগান গোলরক্ষক। ৮৬তম মিনিটে আরও একবার জামালের ক্রস রুখে দেন এই গোলরক্ষক।
ম্যাচের শেষ দিকে রেফারির একটি সিদ্ধান্তে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আফগান ডাগআউটে। তাতে এবার ফয়সাল সেয়াস্তেকে বহিষ্কার করেন রেফারি। মূলত হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। প্রথমার্ধে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে আর একটি হলুদ কার্ড দেখায় ডাগওউত ছাড়তে হয় তাকে।
Comments