হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন, দুঃসহ বিদায়

ডেঙ্গুতে মৃত্যু
ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন এক মা। ছবিটি গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তোলা। ছবি: রাশেদ সুমন

জ্বর শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর গত সোমবার আশরাফুল্লাহ জামাল ও তার ১৫ বছরের ছেলে কাজেম আশরাফের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।

তারপরের পরের পাঁচ দিন তাদের হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে ভালো চিকিৎসার জন্য। এক হাসপাতালে চিকিৎসা ও অন্য দুই হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর গতকাল বাবা-ছেলের ঠাঁই হয়েছিল রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে। তবে বাঁচানো যায়নি কাজেমকে। সকালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় এই কিশোর।

ছেলে হারানোর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ক্ষণ কাটছে আশরাফুল্লাহর।

ভোলার লালমোহনে পৈতৃক কবরস্থানে ছেলের দাফনের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আশরাফুল্লাহকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

স্বজনেরা জানান, চার দিন ডেঙ্গু চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার বাড্ডার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান কাজেম। তবে ডায়রিয়া ও খিঁচুনির কারণে তার অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।

তার খালাতো ভাই জুবায়ের খান বলেন, 'আরও কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারলে হয়তো কাজেম বেঁচে থাকতে পারতো।'

জুবায়ের জানান, কুর্মিটোলায় ভর্তি হওয়ার আগে কাজেমকে রাজধানীর আরও দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা ভর্তি রাখেনি।

জুবায়ের বলেন, কাজেমের দাফনের সময় পরিবারের একমাত্র সদস্য হিসেবে ওর মামা ছিল শুধু। তিনিই কাজেমের মরদেহ লঞ্চে করে ভোলায় নিয়ে যান। কাজেমের মা ছেলে হারানোর কষ্টে বাকরুদ্ধ। ঢাকার সবাই এখন কাজেমের বাবার অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটি আমাদের জন্য একটি ভয়ানক পরিস্থিতি।

কাজেমের মৃত্যু দেশে চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের তীব্রতাতেই তুলে ধরেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৭৪৮ জন।

এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৭১৬ জনে এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫ জনে।

গত সপ্তাহে, বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, নয়তো সেপ্টেম্বরেও এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন তারা।

ভারত থেকে স্যালাইন আমদানি

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মশার সংখ্যা বৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন।

গতকাল মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, 'অন্যান্য অনেক দেশ কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে এবং সংখ্যা কমিয়েছে। সেসব দেশে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা কম।'

তিনি আরও বলেন, মশার উপদ্রব না কমানো পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমবে না।

তিনি একটি কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, বর্তমান ঘাটতি মেটাতে সরকার সাত লাখ ব্যাগ ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইন আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।

মন্ত্রী জানান, গতকাল দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ব্যাগ স্যালাইন আসার কথা ছিল।

'বাকি অংশ শিগগিরই পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

6h ago