‘জজ সাহেবরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বললে আমরা কার কাছে যাব’
জাতীয় সংসদে সাইবার সিকিউরিটি বিল পাস হওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, 'গতকাল সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস হয়েছে। যা এর আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে ছিল। যার ওপর আমাদের সিভিল সোসাইটির মানুষ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক যে সংস্থাগুলো আছে, এমনকি ইউনাইটেড নেশনসের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তারাও বলেছেন যে, এর বিভিন্ন ধারা পরিবর্তন করতে হবে।'
'কোনো পরিবর্তন না করে, শুধু নাম পরিবর্তন করে গতকাল তারা সংসদে সাইবার সিকিউরিটি বিল পাস করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি', বলেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা করেন। রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে 'কারেন্ট স্টেট অব জুডিশিয়ারি: এ টুল টু অপরেস দ্য অপজিশন ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এই সেমিনার হয়।
এসময় বর্তমান বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে সরকারের মূল নিয়ন্ত্রণে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, 'আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা যা আছে, সেই বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি তাদের (সরকার) হাতে মূল নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।'
'এর কারণ আছে? কারণটা হলো- তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। এজন্য করেন না, ১৯৭৫ সালে তারাই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল', বলেন মির্জা ফখরুল।
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কেউ কথা বলতে পারে না। আজ যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজ সাহেবরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন, তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? আজকে বিচার ব্যবস্থা যদি দলীয়করণ হয়ে যায় পুরোপুরিভাবে, মানুষ কোথায় যাবে?'
'সেজন্যই সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা প্রয়োজন, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে। শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, আজকে যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে', বলেন তিনি।
এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিশিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আইনজীবীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজ সকলের জোটবদ্ধ হতে হবে। প্রত্যেককে আজ সোচ্চার হয়ে বলতে হবে… ইটস এনাফ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি করেছ। এখন তুমি দয়া করে পত্রপাঠ বিদায় হও, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি কর।'
'যতই চেষ্টা করুক, উলট-পালট বহু খাচ্ছে, বহু চেষ্টা করছে সব দিক দিয়ে কিন্তু কোনো লাভ হবে না। মানুষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত হলো- তারা এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ থাকবে… আপনাদের উদ্যোগকে (জোটবদ্ধ) সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে সমস্ত আইনজীবীদের নিয়ে এসে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে। ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবই', বলেন তিনি।
গত দুইদিন আগে ঢাকা বারে আইনজীবীদের ওপর পুলিশি হামলা ও উল্টো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনারও নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
হাইকোর্ট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী উচ্চ আদালতের বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিজেদের মনঃকষ্টের কথা উল্লেখ করেন।
ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও আইনজীবী কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ও আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এস একে কামরুজ্জামান, জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, আবদুর রশিদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বদুরুজ্জামান বাদল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মীর হেলাল উদ্দিন, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments