বৃষ্টি ছাড়াই বন্দরনগরীর ব্যস্ত সড়কে জলাবদ্ধতা
বৃষ্টি না হওয়ার পরও চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে আজ শনিবার আকস্মিক জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এর ফলে যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দিনভর। এখনও এই অবস্থাতেই আছে ওই মোড়।
জিইসি মোড় বন্দর নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। ২টি কলেজ ও বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হয় এই এলাকা দিয়ে। এ ছাড়াও, এই চৌরাস্তার আশেপাশে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও শপিংমল রয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে সড়কে হঠাৎ জলাবদ্ধতা দেখা দেয় বলে এলাকাবাসী ও যাত্রীরা জানান।
তারা জানান, আজ বা আগের রাতে বৃষ্টি না হলেও রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে নোংরা পানি উপচে পড়ে আশপাশের ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। রাস্তায় জলাবদ্ধতার কারণে পথচারীদের নোংরা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয় এবং যানবাহনগুলোকেও নোংরা পানি দিয়ে চলাচল করতে হয়।
জিইসি মোড়ে হঠাৎ জলাবদ্ধতা দেখে বিস্মিত বেসরকারি চাকরিজীবী আফতাব আহমেদ।
তিনি বলেন, 'আজ বৃষ্টি নেই, তবুও এই এলাকায় জলাবদ্ধতা। একটা নগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যে কতটা বাজে, তার বড় উদাহরণ হতে পারে এটি। বুঝতে পারছি না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তারা কী করছেন? একটি ব্যস্ত সড়কে রাস্তার পাশের নর্দমা উপচে নোংরা পানি জমে পথচারীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, অথচ ৭-৮ ঘণ্টায়ও এটির সমাধান হচ্ছে না!'
স্থানীয়রা জানান, সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে তারা প্রথমেই চসিক কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। খবর পেয়ে চসিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। চসিক পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নর্দমাটিকে বাধামুক্ত করার চেষ্টা করলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা এটিকে মুক্ত করতে পারেনি। ফলে রাস্তায় জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে।
যোগাযোগ করা হলে চসিকের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোবারক আলী বলেন, 'নর্দমায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাস্তার নিচে একটি বক্স কালভার্ট রয়েছে এবং কালভার্টের নিচে ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সেই পাইপে ময়লা আবর্জনা আটকে গিয়ে ড্রেনে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করেছে।'
'খবর পেয়ে আমাদের টিম ড্রেনটিকে প্রতিবন্ধকতামুক্ত করতে কাজ শুরু করেছে। তবে ঘটনাস্থল রাস্তার নিচে হওয়ায় কাজ শেষ করতে সময় লাগছে', যোগ করেন তিনি।
রাস্তার নিচে কালভার্টে ময়লা কীভাবে গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সম্ভবত ড্রেনের পানি দিয়ে ময়লা সেখানে গেছে।'
যোগাযোগ করা হলে ফোরাম ফর প্ল্যানড চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, 'আমি এই ঘটনাটিকে দুর্বল ড্রেনেজ সিস্টেমের ফলাফল হিসাবে আখ্যায়িত করব না। বরং আমি বলব এটি হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ অজ্ঞতার ফলাফল।'
'চসিকের প্রকৌশলীদের সেই জ্ঞান থাকা উচিত যে কীভাবে বক্স কালভার্ট এবং এর নিচে ইউটিলিটি পাইপলাইনগুলো ডিজাইন করতে হয়, যাতে সেগুলি ড্রেনে মুক্তভাবে পানি প্রবাহে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে', তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, 'চসিকে দক্ষ প্রকৌশলী দিয়ে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং না হওয়া পর্যন্ত মানুষের দুর্ভোগের অবসান হবে না।'
এ ব্যাপারে জানতে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Comments