বাংলাদেশ

১৮ বছর ধরে ভাত খান না শরীয়তপুরের কাইয়ুম

শুধু ভাত নয় চাল দিয়ে তৈরি কোনো খাবারই তিনি খেতে পারেন না। এসব মুখে দিলেই তার বমি আসে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত সে মায়ের বুকের দুধ, গরুর দুধ, আটার রুটি আর পাউরুটি খেত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুটির পাশাপাশি ডিম, মুড়ি ও ফলমূল খেতে শুরু করে।
কাইয়ুম মোড়ল। ছবি: স্টার

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কাইয়ুম মোড়ল ১৮ বছর ধরে ভাত খান না। তার যখন ছয় মাস বয়স তখন তার মুখে ভাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবার ভাত দেওয়ার পর বমি করে ফেলে সে। এর পর থেকে সে আর কখনো ভাত খায়নি।

কাইয়ুম মোড়লের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের নয়ন মাদবর কান্দি গ্রামে। কাইয়ুমের বাবা শিপন মোড়ল পেশায় ভ্যান চালক এবং তার মা শাহিনুর বেগম গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

শুধু ভাত নয় চাল দিয়ে তৈরি কোনো খাবারই তিনি খেতে পারেন না। এসব মুখে দিলেই তার বমি আসে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত সে মায়ের বুকের দুধ, গরুর দুধ, আটার রুটি আর পাউরুটি খেত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুটির পাশাপাশি ডিম, মুড়ি ও ফলমূল খেতে শুরু করে। এখন বাড়িতে রান্না করা তরকারি ও মুড়ি তার প্রধান খাবার।

কেন ভাত খেতে পারেন না জানতে চাইলে কাইয়ুম বলেন, 'ভাতের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারি না। ভাত খাওয়ার অভ্যাস গড়ার অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। এখন সকালে আটার রুটি, ভাজি আর ডিম খাই। দুপুরে ও রাতে খাই তরকারি দিয়ে মুড়ি। মুড়ি খেতে ভালো লাগে। আমি ভাত না খেয়েও অনেক ভালো আছি।'

কাইয়ুমের মা শাহিনূর বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'জন্মের পর কাইয়ুমের কোনো সমস্যা ছিল না। একটা সুস্থ সবল শিশুর মতোই তার জন্ম হয়। বাচ্চাদের বয়স ৬ মাস হলে স্বাভাবিক খাবার দিতে হয়। তাই তার ৬ মাস বয়সের সময় তার মুখে নরম ভাত তুলে দেই, কিন্তু ভাত দেওয়ার পরপরই সে বমি করে কান্নাকাটি করত। পরে আমরা তাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। তাতেও কোনো পার্থক্য হয়নি। ভাতের বদলে দুধ দিয়ে বানানো সুজি খাওয়াতে গিয়েও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। পরে দুই বছর বয়স পর্যন্ত সে বুকের দুধ, গরুর দুধ, বিস্কুট, আটার রুটি আর পাউরুটি খেত। পরে রুটির পাশাপাশি ডিম ও মুড়ি খেতে শুরু করে। ভাতের বদলে সে এখন দুই বেলা মুড়ি খায়। আমার ছেলে ভাত ছাড়া সবকিছুই খেতে পারে।'

তিনি বলেন, 'এমনিতেই আমাদের বড় সংসার। কাইয়ুমের বাবা অনেক কষ্টে ভ্যান চালিয়ে আমাদের খরচ চালান। সেখানে কাইয়ুমের জন্য বাড়তি খাবার প্রয়োজন হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তার খাবার কেনা আমাদের জন্য ব্যয়সাধ্য। সবার মতো কাইয়ুম ভাত খেতে পারলে সংসারে বাড়তি খরচ হতো না। কাইয়ুমকে ভাত খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় ডাক্তার, কবিরাজ ও ফকির দেখানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই লাভ না হওয়ায় এখন আর সেই চেষ্টা করা হয় না।'

কাইয়ুমের সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্‌ পরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষ কিছু সময়ের জন্য হয়ত বিশেষ কোনো কারণে ভাত খেতে পারে না। কিন্তু এক ছেলে ১৮ বছর ধরে ভাত খায় না, এটা আশ্চর্যজনক। সে কেন ভাত খায় না, ভাত খেলে কেনই বা বমি আসে বিষয়গুলো তার সঙ্গে আলাপ না করে বা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে বলতে পারছি না। তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। বিস্তারিত জানার পর তার চিকিৎসা করা যাবে। প্রয়োজনে আমরা তাকে চিকিৎসা দেব।'

Comments