‘খেলার মাঠে মেলা’ বন্ধের দাবি

খেলার মাঠে মেলা
কালেক্টরেট মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'খেলার মাঠে মেলা' বন্ধের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন লালমনিরহাট শহরের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষসহ স্থানীয়রা।

শহরের কালেক্টরেট মাঠে মাসব্যাপী 'শিল্প ও বাণিজ্য' মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। আট মাস আগেও এই মাঠে একই মেলার আয়োজন করেছিল চেম্বার অব কমার্স।

স্থানীয়রা বলছেন, শিশু-কিশোর-তরুণরা কালেক্টরেট মাঠে খেলাধুলা করে। আট মাস আগেও এই মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার কারণে বছরের প্রায় চার মাস খেলতে পারে না তারা। চেম্বার অব কমার্স এই মাঠে মেলার প্রস্তুতি নিলে 'খেলার মাঠে মেলা নয়' শ্লোগানে খেলোয়াররা মিশন মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও তাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে না।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিন বিকেলে কালেক্টরেট খেলার মাঠে ফুটবল খেলত সে। এই মাঠে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে তাই খেলাধুলা এখন বন্ধ। মেলা শেষ হওয়ার পর মাঠের অবস্থা দুরাবস্থায় পরিনত হয় সে কারনে খেলা করা যায় না।

'খেলার জায়গা নাই, তাই এখন বাসায় মোবাইলে গেম খেলি।'

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিজানুর বলেন, এই খেলার মাঠটা অনেক বড় তাই খেলতে ভালো লাগে। এখন মাঠজুড়ে শুধু মেলার প্রস্তুতি। কোথায় খেলব?

স্থানীয় অভিভাবক গোলজার রহমান (৪৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা বিকেলে শিশুদের খেলা দেখতেন। মেলার কারণে বাচ্চারা খেলতে আসতে পারছে না। এতে করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবু আহাদ খন্দকার লেলিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, খেলার মাঠে মেলার আয়োজনের কোনো কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু চেম্বার অব কমার্স মেলার আয়োজন করে ক্রীড়ামোদি লোকজনকে খেলাধুলার চর্চা থেকে বঞ্চিত রাখছে। মাঠে এ ধরনের আয়োজন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক ও চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরও কোনো ফল হয়নি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি এ ধরনের মেলার কারণে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়।

গোশালা রোডের ব্যবসায়ী লেলিন কাজী ডেইলি স্টারকে বলেন, মাসব্যাপী মেলার কারণে শহরের দোকান পাটগুলোতে ৬০-৭০ শতাংশ ব্যবসা কমে যায়। এতে শহরের ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বছরে দুই বার মেলার আয়োজন করায় ব্যবসায়ীরা চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে চেম্বার অব কমার্সের কয়েকজন নেতা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চেম্বার অব কমার্স সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখছে না।

আগের মেলার কারণে আমরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা আর মেলা চাই না, বলেন তিনি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, মেলার নাম শিল্প ও বাণিজ্য মেলা হলেও মেলায় শিল্পের কোনো ছোঁয়া থাকে না। নিম্নমানের পণ্য থাকে আর আয়োজন করা হয় নিম্নমানের সার্কাস, যাত্রার। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তারা।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মেলার উদ্বোধনের প্রস্তুতি রয়েছে। চেম্বার অব কমার্সের ব্যয়ের খাত অনেক কিন্তু আয়ের খাত খুবই কম। মেলা থেকে আয় করে চেম্বার অব কমার্সের ব্যয়ের খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে। 'শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের মেলা আয়োজনের চিঠি দিলে আমরা মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি।'

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ২২ শর্ত উল্লেখ করে মেলা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব শর্তের একটি ভঙ্গ হলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠ ও মেলার অনুমোদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, মেলার অনুমোদন দিয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসন থেকে মাঠের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মাসব্যাপী মেলা চলাকালে মাঠে খেলাধুলা বন্ধ থাকবে, মেলার পর মাঠে আগের মতোই খেলাধুলা চলবে।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiya Party HQ set afire, vandalised

The Jatiya Party headquarters at the capital’s Kakrail was set on fire and vandalised last night by a group of people who claimed themselves to be “anti-fascist students, workers, and masses”.

11m ago